ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে কথিত ধর্ম ব্যবসায়ী গুরুবাবা রাম রহিমের কাহিনী নতুন করে পত্রিকায় পড়লাম। প্রায় আটশত একর জায়গা নিয়ে এই গুরুবাবার সাম্রাজ্য। যিনি এখন ধর্ষণ মামলার আসামী হিসেবে কাঠগড়ায় বন্ধী আছেন। এই গুরুবাবা আবার প্রচলিত ধর্মের বাইরে হিন্দু মুসলমান শিখ ধর্মের সমন্বয় করে নিজস্ব ধর্মের অবতারণা করেছেন। নিজেকে ঈশ্বর বা সমতুল্য দাবি করে এই ভণ্ড প্রতারক বছরের পর বছর সাধারণ মানুষকে ঠকিয়েছে। মন্ত্রী এমপি রাজনীতিবিদ আমলা থেকে ধরে সাধারণ মানুষ তার ভক্ত। সবাই এই গুরুবারার দরবারে হাজিরা দেয়। স্বয়ং ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একবার নাকি তাঁকে ভক্তি দিয়েছিলেন। গত নির্বাচনে রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী বিজিপি থেকে নির্বাচিত হন এই গুরুবাবার কৃপায়! রাজনীতির সাথে ধর্ম ব্যবসা এই উপমহাদেশের অংশ। কথিত গুরুবাবারা এই উপমহাদেশে ধান্ধা করে নিজের আয় উপার্জন ভালই করছেন। আর এইসব ঝিইয়ে রেখেছে রাজনীতির সাথে যুক্ত প্রতারক রাজনীতিবিদরা। যারা লুটপাট দুর্নীতি প্রতারণা করতে যেমন ওস্তাদ তেমনি খাটি ধর্মপ্রাণ হতে এদের জুড়ি নেই। ধর্মের প্রতি সাধারণ মানুষের অন্ধ আবেগকে কাজে লাগিয়ে এরা ভালই প্রতারণা করতে পারে। সার্টিফিকেটধারী শিক্ষিত লোকজন ও এদের পাল্লায় পড়ে যায়। কারণ শিক্ষা এখন আর আধুনিক যুক্তিবাদী মানুষ বানানোর চেয়ে সার্টিফিকেটধারী পুঁজিবাদের দাস বানাতে তৎপর। ফলে সার্টিফিকেট সর্বস্ত্র শিক্ষিত হলেও সবাই যুক্তিবাদী আধুনিক মানুষ হতে পারে না। এইখানে বাজারমূখী শিক্ষার সীমাবদ্ধতা।
তো বলছিলাম এই গুরুবাবা রাম রহিমের কথা। যে তার আস্তানায় নানা কম বয়েসী সেবাদাসী রাখতো যাদের পালাক্রমে প্রতিরাতে ধর্ষণ করতো। রাজি না হলে ভয়ভীতি দেখিয়ে সে এই কর্ম করতো। নিজের ভুয়া আধ্যাত্ম শক্তির ধুয়া তুলে বিশাল ভক্ত জুটিয়ে ফেলে। এই অন্ধ ভক্তের দল আবার ধর্ষণের মামলায় কারাবরণ করা গুরুবাবার মুক্তির জন্য ভারতের কয়েকটি রাজ্যে ত্রাশ চালায়। সহিংস আক্রমণে ইতিমধ্যে ২৩ জন নিহত হয়েছেন। কিন্তু প্রতারকরা থেমে নেই।
এই নিউজ পড়তে গিয়ে আমার এলাকার এক ভন্ড পীরের কথা মনে পড়ে গেল। সাধারণ গরীব কৃষক পরিবারে জন্ম হওয়া ঐ পীর দিনমজুরের কাজ করতো। বাড়ির পাশেই ছিল শাহজালাল এর সহচর যাদের ৩৬০ আউলিয়া বলা হয় এরকম এক পীরের মাজার। তো এই নব্য পীর একদা বাড়ি থেকে লাপাত্তা হয়ে যায়। বিভিন্ন জায়গায় ওরস করে করে কিছু ভক্ত জোগাড় করে ফেলে। আস্তে আস্তে ভক্ত বৃদ্ধি পেয়ে সুনাম ছড়িয়ে যায় চারদিকে। শেষ আস্তানা হয় ঢাকায়। সেখানে তাঁর মুরিদের সংখ্যা দাঁড়ায় বিশাল। মন্ত্রী এমপি বড় ব্যবসায়ী তাঁর মুরিদ হন। বিভিন্ন নির্বাচনসহ এরকম ধান্ধায় এই রাজনীতিবিদরা এই পীরের দোয়া নিতে যায় সাথে টাকার বান্ডিল। রাতারাতি এই পীরের জীবন বদলে যায়। পীর হয়ে উঠেন বিশাল পয়সাওয়ালা। এইভাবে সাধারণ মানুষের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে উপমহাদেশে এখনো বিশাল আকারে রয়েছে এই প্রতারণার ধর্ম ব্যবসা যাদের কাছে সাধারণ নারী হয়ে ওঠে যৌনলিপ্সার এক বড় হাতিয়ার। আর মুমুর্ষ লুটেরা রাজনীতি এই ধর্ম ব্যবসাকে বাঁচিয়ে রাখে।
EmoticonEmoticon