বৃহস্পতিবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৭

আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি

"পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে"

তারিখঃ ২৯ মার্চ ২০১৭
রেফারেন্স নাম্বারঃ আরসা/পিআর/০১/২০১৭

প্রেস রিলিজ

রোহিঙ্গারা আরাকানের (বর্তমানে রাখাইন রাজ্য) একটি নৃতাত্ত্বিক, আদিবাসী, ও ভূমিপুত্র জাতি, তারা সেখানে গত কয়েক হাজার বছর ধরে ছিল, আধুনিক বার্মা (বর্তমানে মিয়ানমার) রাষ্ট্রটি বিশ্ব মানচিত্রে আসার অনেক আগে থেকেই।

সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকে আরাকান তার একাধিক স্বাধীন রাজ্য নিয়ে গর্বিত, যার সাথে বার্মিজ উপনিবেশিক সাম্রাজ্যগুলোর কোনো সম্পর্কই নেই, যেসব অস্তিত্বশীল ছিল ১৭৮৪ পর্যন্ত, যখন বার্মিজ রাজা বো দাও ফায়া মঙ ওয়াইঙ আক্রমণ ও উপনিবেশায়িত করেন আরাকানকে, নিষ্ঠুর ও আক্রমণাত্মক সামরিক অভিযানের মাধ্যমে।

রোহিঙ্গারা ১৯৭০এর দশক থেকে বার্মিজ সরকারের হাতে গণহত্যা ও মানবতা বিরোধী অপরাধের শিকার হয়েছে, ধাপে ধাপে, যে-সবের উদ্দেশ্য ছিল তাঁদেরকে তাঁদের নিজ ভূমি আরাকান থেকে উৎপাটন করা।

বর্তমানে সারা দুনিয়া দেখতে পাচ্ছে কিভাবে বার্মিজ সরকার রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ চালিয়ে এসেছে।

এসব আমলে নিয়ে, জাতিসংঘও রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে দুনিয়ার সবচে নিপীড়িত জনগণ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং স্বীকার করেছে যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বার্মিজ সরকার-কর্তৃক মানবতা বিরোধী অপরাধের শিকার হয়েছে।

২০১৬র শুরুতে অং সান সু চির নেতৃত্বে ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি যখন মিয়ানমারের ক্ষমতায় আসলো, আমরা আশা করেছিলাম, রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের পরিস্থিতি সন্তোষজনক মাত্রায় উন্নত হবে।

এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে, সু চি সরকার পরিস্থিতির কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাতে পারবেন না, কেননা, তাঁর সরকার নিজেই মিয়ানমারের বর্বর সামরিক জান্তার হাতে জিম্মি হয়ে আছে, ফলে তাঁর পক্ষে জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন প্রভৃতির সাথে কোনো দরকষাকষি করা সম্ভব হচ্ছে না।

তাই, মিয়ানমারের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে, এটা খুব জরুরী যে, আমাদেরকে ডিল করতে হবে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক মিং অং লাইংএর সাথে (যাকে সাংবিধানিকভাবে বার্মার রাজা নিয়োগ দেয়া হয়েছে), রোহিঙ্গাদের ওপর চলমান গণহত্যার নাটের গুরু যিনি।

আমরা আরো আশা করছি যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আরাকান রাজ্যে শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠানোর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে, যা করতে তাঁরা নৈতিকভাবে বাধ্য, রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর চলমান গণহত্যা ও মানবতা বিরোধী অপরাধের হাত থেকে তাঁদেরকে বাঁচানোর জন্য, যেসব অপরাধ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের স্ট্যাটিউট অনুযায়ী আন্তর্জাতিক অপরাধ হিসেবে স্বীকৃত।

আমরা আন্তরিক অভিনন্দন জানাতে চাই আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোকে (নামত জাতিসংঘ, ওআইসি, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, ও আসিয়ান), এবং আরাকান রাজ্যে একাধিক আন্তর্জাতিক ডেলিগেশনকে (বিশেষভাবে জাতিসংঘের বিশেষ দূত মিস ইয়াংহি লি-কে) মানবতাকে বাঁচাতে তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য, এবং ভবিষ্যতে আরাকানের অভ্যন্তরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অধিকতর উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।

এতো কিছুর পরও, এটা দুর্ভাগ্যজনক যে রোহিঙ্গারা এখনো আরাকানের ভেতরে বিভিন্ন কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে বন্দী হয়ে আছে, মানুষ হিসেবে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার পর্যাপ্ত রসদ ছাড়াই, এবং অন্তহীন ধবংসযজ্ঞ চালানো হচ্ছে তাঁদের পিতৃপুরুষের গ্রাম, প্রার্থনালয়, জনগুরুত্বপূর্ণ সম্পত্তি, ও ব্যক্তিগত সম্পত্তির ওপর, এর সাথে চলছে নিপীড়ণও।

তাই, আমরা [আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা), যা শুরুতে পরিচিত ছিল হারাকাহ আল-ইয়াকিন বা ফেইথ মুভমেন্ট নামে] এগিয়ে এসেছি আকারানস্থ রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে রক্ষা করতে, আমাদের সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে, আত্মরক্ষার নীতি অনুসারে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে যে-লড়াইয়ের অধিকার আমাদের আছে।

আমরা, এই প্রক্রিয়ায়, এটা জোরেশোরে ও পরিষ্কারভাবে জানাতে চাই, আমাদের আত্মরক্ষামূলক আক্রমণগুলো পরিচালিত হচ্ছে শুধুই নিপীড়ক বার্মিজ সরকারের উদ্দেশ্যে, আন্তর্জাতিক রীতিনীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখেই, যদ্দিন না আমাদের দাবিদাওয়া মেনে নেয়া না হয়।

দুনিয়ার কোনো জঙ্গি সংগঠনের সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।

আমরা কোনো সিভিলিয়ানের ওপর হামলা চালাই না, তাঁর ধর্মীয় পরিচয় বা নৃতাত্ত্বিক উৎস যাই হোক না কেনো, কারণ আমাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সন্ত্রাসবাদের আশ্রয় নেয়া আমাদের নীতিবিরোধী।

আমরা, যা প্রমাণিত হয়েছে, আরাকান রাজ্যের সকল নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর নিরাপত্তা ও ভালো থাকার নিশ্চিত করি, নিশ্চিত করি তাঁদের প্রার্থনালয় ও সম্পত্তির নিরাপত্তাও।

আন্তর্জাতিক রীতিনীতির অধীনে, আমরা বৈধ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যে-কোনো সদস্যের কাছ থেকে রাজনৈতিক-আর্থিক-প্রকৌশলগত-লজিস্টিকস সহায়তা আশা করি।

এমতাবস্থায় আমরা দাবি জানাই, আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের রীতিনীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে, যে বার্মিজ জান্তা ও সরকারকে অবশ্যইঃ

১। রোহিঙ্গাদের আদিবাসী ভূমিপুত্র নৃতাত্ত্বিক পরিচয়কে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে।
২। তাঁদেরকে নাগরিক পরিচয় কার্ড ইস্যু করতে হবে।
৩। আক্রান্ত এলাকাগুলোতে আন্তর্জাতিক মানবিক ত্রান সহায়তা অনুমতি আবার প্রদান করতে হবে।
৪। জাতিসংঘ-নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক স্বাধীন তদন্ত ও অনুসন্ধান টিমকে আরাকানে তাঁদের কাজ পুনরায় শুরু করার ও দ্রুত সম্পন্ন অনুমতি দিতে হবে।
৫। সহিংসতায় জড়িত সকল ব্যক্তিকে শাস্তি দিতে হবে।
৬। সকল 'বোনা ফাইড' রোহিঙ্গা রিফিউজি আর ডায়াসপোরাকে তাঁদের মাতৃভূমি আরাকানে নিরাপদে ফিরে আসার সুযোগ দিতে হবে।
৭। তাঁদের আন্দোলনের অধিকার, জড়ো হওয়ার অধিকার, ও সংগঠিত হওয়ার অধিকার দিতে হবে।
৮। রাজনৈতিক দল গঠনের ওপর থাকা বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করতে হবে ও রাজনীতিতে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে।
৯। তাঁদেরকে তাঁদের ধর্মীয় প্রথা ও সাংস্কৃতিক উৎসব পালনের অধিকার দিতে হবে।
১০। আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানের অধীনে আরাকানের সীমান্তবর্তী এলাকার সকল আইডিপি ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গাদেরকে তাঁদের জন্মভূমিতে ফিরে আসার অনুমতি দিতে হবে।
১১। যেসব রোহিঙ্গাকে সারা দেশে হয়রাণিমূলকভাবে ডিটেইন করা হয়েছে তাঁদেরকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।
১২। রোহিঙ্গাদেরকে শ্রমদাস ও মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করা বন্ধ করতে হবে।
১৩। তাঁদের প্রার্থনালয় আর সম্পত্তির যে ক্ষতিসাধন বার্মিজ সরকার করেছে তা পুনর্নিমাণ ও ক্ষতিপূরণ সরকারকে নিজের টাকায় করতে হবে।
১৪। তাঁদের পিতৃপুরুষের যে-সব জমিজমা ও সহায়সম্পত্তি তাঁদের কাছ থেকে জোর করে দখল করা হয়েছে তা তাঁদেরকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
১৫। রোহিঙ্গাদের ব্যবসাবানিজ্যে অংশ নেয়ার অনুমতি দিতে হবে।
১৬। তাঁদেরকে শিশুদেরকে অনতিবিলম্বে যথাযথ শিক্ষায় পূর্ণ অংশগ্রহণের অধিকার দিতে হবে।
১৭। তাঁদেরকে আনুপাতিক হারে পাবলিক সার্ভিসে যোগ দেয়ার অধিকার দিতে হবে।
১৮। রোহিঙ্গাদের বিবাহ ও পরিবার পরিকল্পনায় নাক গলানো বন্ধ করতে হবে।
১৯। মিয়ানমারের আর সব জনজাতি যেসব অধিকার ও সুবিধা ভোগ করে তাঁদেরকেও সেইসব অধিকার ও সুবিধা ভোগ করার অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে।
২০। উল্লিখিত সব দাবিদাওয়া নিশ্চিত করার জন্য আইনী ও প্রাতিষ্ঠানিক পদক্ষেপ নিতে হবে।

[সাক্ষর] [সিলমোহর]

আতা উল্লাহ
সর্বাধিনায়ক
আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)

মূল ইংরেজির উৎসঃ http://www.arakantimes.org/2017/03/28/myanmars-armed-rohingya-militants-deny-terrorist-links/

মূল ইংরেজি থেকে তর্জমাঃ ইরফানুর রহমান রাফিন


EmoticonEmoticon