অন্যের উপর ভর করে, অন্যের প্রযুক্তি জ্ঞান দিয়ে, প্রায় তিনহাজার কোটি টাকা খরচ করে তৃতীয় বিশ্বের একটি ক্ষুধার্ত দেশের স্যাটেলাইট আকাশে উড়ানোর জন্য গর্বিত হতে পারি না। এ পর্যন্ত যারা মহাকাশে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে সে সব দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা, প্রযুক্তি ক্ষেত্রে দক্ষতা, আর নিজেদের সর্বাত্মক চেষ্টায় এগুলো করেছে। আর আপনি? ফ্রান্সের থ্যালেস এলেনিয়া স্পেইস কোম্পানিরে দিয়ে করালেন নকশা এবং নির্মাণ , আমেরিকার স্পেইস এক্স কোম্পানি আকাশে উঠাইয়া দিব আর রাশিয়ার কাছ থেকে লিজ নেওয়া হয়েছে ১৫ বছরের জন্য কক্ষপথ। তাহলে নিজেদের কিছু হল? অন্যের মাধ্যমে জনগণের মোটা অংকের টাকা খরচ করে এমন বিলাসিতার মানে নাই। যেদিন আপনার কারিগরি দক্ষতা তৈরি হবে, অর্থনৈতিক সামর্থ্য গড়ে উঠবে তখন এসব আকাশ ছোঁয়া আকাঙ্ক্ষা পোষণ করা ঠিক আছে। নিজেদের অভিজাত দেশের তালিকায় নাম লেখানোর গর্ব অনুভব করছেন অনেকে। কিন্তু নিজেদের দিকে একটু খেয়াল করুন। সারাদেশে অতিবৃষ্টি হলে বন্যায় ভেসে যায় দেশ তখন বন্যার হাত থেকে বাঁচতে আপনার প্রদক্ষেপ কোথায়? দেশের নদীনালা প্রয়োজনীয় ড্রেজিং করে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত হয়েছে? ঘুর্ণিঝড় থেকে বাঁচার জন্য আপনার প্রদক্ষেপ কোথায়? বড় কোন ভূমিকম্প হলে গোটা দেশ আক্রান্ত হবে তখন দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে আপনার দক্ষ কোন প্রতিষ্ঠান আছে? প্রতিবছর পাহার ধ্বসে মানুষ মারা যায়। এসব থেকে রক্ষা পেতে কিছু করেছেন? প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় শত শত মানুষ মারা যায়। এসব নিয়ে আপনাদের পরিকল্পনা আছে? তারপর নানা ধরণের ঝঞ্জালে যখন দেশ ছড়িয়ে আছে তখন ৩০০০ কোটি টাকা ব্যয় করে স্যাটেলাইট সুবিধা নেওয়া আমার কাছে বিলাসিতা মনে হয়। আবার দরবেশ বাবার কোম্পানি পাইলো মার্কেটিং এর দায়িত্ব। যার ফলে জনগণের উপকার হবে না দরবেশ বাবাদের পকেট ভারি হবে বুঝাই যাচ্ছে।
আচ্ছা এত হুলস্থুল কাণ্ডের ফলে কি সুবিধা পেতে পারি? ধরা হচ্ছে নিজেদের স্যাটেলাইট থাকলে যে টিভিচ্যানেলগুলো বিদেশী কোম্পানির কাছ থেকে যে স্যাটেলাইট ট্রাসমিশন সুবিধা নেয় তার খরচ কমে আসবে। আবার দেশের টাকা নাকি দেশে থাকবে? মনে আছে প্রতিবছর ৭০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়। তাহলে দেশের টাকা দেশে থাকবে তা আজগুবি গল্প। অন্যদিকে ইন্টারনেট বা অন্য যে সুবিধার কথা বলা হচ্ছে তা সাইবার অপটিক লাইন থেকে কয়েকগুণ ব্যয়বহুল এবং দুর্বলগতির। ফলে অদৌ ইন্টারনেট সেবা গ্রহণ করা হবে কিনা সন্দেহ। এর বাইরে অন্য যেসব সুবিধার কথা বলা হচ্ছে তা অন্যদের কাছ থেকে ফ্রি বা নামমাত্র মূল্যে পাওয়া যায়। তাহলে এত ব্যয়বহুল প্রজেক্ট গ্রহণের কারণ কি? শুধুমাত্র অন্যের উপর ভর করে নাম কামানোর জন্য ঋণ করে স্যাটেলাইট আকাশে উড়ানোর পক্ষে আমি নই। আমি হলে জনগণের এই ৩০০০ কোটি টাকা দিয়ে দেশের সব কটি নদীর পলি ড্রেজিং করে নদীর নাব্যতা বাড়িয়ে নদীভিত্তিক পরিবহন ব্যবস্থা চালু করতাম। বন্যা কবলিত এলাকার নদীগুলো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে উন্নত বাঁধ নির্মাণ করা যেত। যার সুফল এদেশের সাধারণ মানুষ, কৃষকরা পেত। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা বৃদ্ধি এবং তার আয়োজন নিশ্চিত করা হত। কয়েক বছরের মধ্যে এখান থেকে জগদীশ চন্দ্র বসু, সত্যেন বোস, জামাল নজরুল ইসলামের মত বিজ্ঞানী বেরিয়ে আসতো। বেরিয়ে আসতো বড় বড় প্রযুক্তিবিদ, প্রকৌশলী। এরা মহাকাশ, স্যাটেলাইট এগুলোর প্রযুক্তি দেশে উদ্ভাবন করতে পারতো। আমি মনে করি বাংলার মানুষের ট্যালেন্টেডের অভাব নাই। অভাব যা তা হল সত্যিকার আয়োজন করার ঘাটতি। এসব নিশ্চিত করতে সোনার বাংলা আসলেই সোনার বাংলা হয়ে উঠতো।
EmoticonEmoticon