রবিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৮

পর্দা সভ্যতা, বেপর্দা সভ্যতা

ধর্ষণের প্রধান কারণ নৈতিকতার অবক্ষয়।
নৈতিকতা থাকে মনে ;
আর মনের অবস্থান শরীরে।
শরীর বস্তু ;
আর মন চলে বস্তুর শাসন মেনে।
পোশাকও বস্তু। এবং এই পোশাকের সঙ্গে, নৈতিকতার সম্পর্ক আছে। সমাজ, পারিপার্শ্বিক প্রতিবেশ, অঞ্চল, সংস্কৃতি এইসব ভেদে পোশাক মানুষের ভেতর প্রভাব ফেলে।
যে পোশাক বাথরুমে, সে পোশাক বেডরুমে নয়।
যে পোশাক পরে সানি লিওন তার ভক্তদের মাথা খারাপ করে দেন, তা তার পিতার সামনে ভুলেও পরেন না।
যে পোশাক পরে আমি ভোরে রাস্তায় দৌঁড়াই, সে পোশাক পরে আমি অফিসে যাই না।
পোশাকের সামাজিক গূরুত্ব আছে, আছে বিপুল প্রভাব।
সামাজিকতা নৈতিক চরিত্র গঠনে গূরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সমাজ আমাদের নীতিবান করে আবার নীতিহীনও করে।
অনৈতিকতা যদি ধর্ষণের একটা কারণ তবে কেন আমরা পোশাকের সামাজিক গূরুত্বকে অস্বীকার করছি?
শাহবাগের ভীরে যে মুমিনা নেংটু হয়ে দাঁড়াবে না, সেও শুনেছে হাশরের মাঠে সে উপস্থিত হবে পুরোপুরি উলঙ্গ হয়ে। এটা তাকে বিচলিত করে না কারণ সে জানে, যস্মিন দেশে যদাচার।
পুঁজিবাদ এবং ব্যক্তিগত সম্পদের বদৌলতে এখন প্রায় পুরো বিশ্বেই নারী পন্য। আর প্রায় ক্ষেত্রেই সেই পন্যের ব্যবসাটা করা হয় নারীর পোষাক পরাকে সুযোগ করে।
তাদের দৃষ্টিতে নারী মাল, তাই পোশাক দিয়ে মুড়ে রাখতে হবে। এবং তাদেরই আর একটা গ্রুপের দৃষ্টিতেও নারী মাল, তাই একটু বা সম্পূর্ণ খুলে পন্যটিকে প্রদর্শন করতে হবে পুরুষদের যৌনকাতর করার জন্য, ব্যবসা জমজমাট করার জন্য।
পুরুষরা ইঁদুরের মতো কামইতর প্রাণী। সারাবিশ্বেই, বিশেষ করে আরব এবং ভারতীয় পুরুষদের মধ্যে কামকাতরতা প্রবল। ফলে এযুগে এখানেই বেশি নারীকে পন্য বানানো হয়। কেউ কেউ সেই পন্যকে অতিরিক্ত ঢেকে রাখে ব্যক্তিগত মাল মনে করে আর কেউ কেউ সেই পন্যকে উদোম করে রাখে, করে ব্যবসা।
প্রিমিয়ার লীগ, লা লিগা, বিশ্বকাপ কোন খেলারই চিয়ার লিডার লাগে না, লাগে আইপিএলএ। কেন লাগে? কেন নারীর সৌন্দর্যকে বিক্রির ধান্ধা?
কেন ক্রীমের নাম ফেয়ার এ্যান্ড লাভলী?
নারীকে বুদ্ধির দিক দিয়ে পঙ্গু করে, তাকে বাধ্য করা হচ্ছে শরীর ও সৌন্দর্য বিক্রি করতে। খোলামেলা পোশাক পরা আর খোলামেলা পোষাকের আড়ালে পন্য বানানো কিংবা পন্য হওয়া সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস।
কতটুকু পোশাক পরতে হবে, কতটুকু খুলতে হবে, কোথায় কতটুকু দেখাতে হবে, কীভাবে দেখাতে হবে সেসব নির্ধারণ করে দিচ্ছে অর্থ। এভাবে পোশাক যৌনলিপ্সা এবং লালসা জাগ্রত করে পুরুষকে করেছে আরও কামুক আরও ইতর আরও অনৈতিক। এবং এসবের একটা ফলাফল ধর্ষণ। ধর্ষণের একটা কারণ পোষাক পরা, পোশাক না পরা নয়।
তাহলে কি পোশাক খুলে ফেলাই সঙ্গত? সেটা বিতর্কের। আমি ইচ্ছে করলেই পোশাক পরতে কিংবা খুলতে পারি না। ইচ্ছে করলেই যে কোন জায়গায় যেকোন পোশাক পরতে পারি না। কারণ সমাজটা আমার মতো নয়।
নিজেকে উপস্থাপন জরুরি ? তবে পরিবর্তন ঘটাতে হবে সমাজের, সমাজব্যবস্থার।

মাথাটা ঘুরিয়ে নিন ১৮০°, আর ভাবনাটাও নিয়ে যান সেই সমান্তরালে। দেখুন, উলঙ্গ জাতিগোষ্ঠীর পোষাকও নেই, ধর্ষণও নেই।
হ্যাঁ, আসলে পোষাকের ব্যবহার এবং অপব্যবহারই হচ্ছে ধর্ষণের অন্যতম কারণ। খেয়াল করে দেখুন, পোশাক না থাকলে পোশাক  খোলাখুলির এই ব্যবসা থাকত না! পোষাক খোলাখুলির এই ইতরামি না থাকলে নুনুম্যানদের ঐসব নোংরা নুনুও যখন তখন গরম হয়ে উঠত না। অনেক দেশেই কিন্তু ড্রেসকোড বিদ্যমান। কিন্তু মানা হচ্ছে না। যার তার সঙ্গে বিছানায় শুয়ে পড়া আর আর পোশাক খুলে ক্লিভেজ দেখানোর মধ্যেই অনেক নারীবাদীদের নারীবাদিতা সীমিত। নারী পন্য, এটাতে তাদের প্রতিবাদ নেই। কারণ তাদের পুরস্কারটা আসে সেইসব পন্যবিক্রেতাদের কাছ থেকেই। এরা বোরকার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে পোশাক খুলে। কিন্তু পন্যা হওয়ার উদ্দেশ্যে পোশাক খোলার প্রতিবাদে তারা পোষাক পরিধানের পক্ষে কথা বলেন না।
এই পোশাকী সমাজের কারণেই পোশাক ব্যক্তির ব্যক্তিত্বকে ধারণ করে, পোশাক ব্যক্তিকে উপস্থাপন করে। সুতরাং আপনি যদি সেই পোশাক পরিধান করেন, যে পোশাক পুরুষকে ইতর করতে পারে তাহলে সংঘটিত ইতরামির দায়িত্ব কীভাবে এড়াবেন, যেখানে আপনার বসবাস একটা ইতর সভ্যতায়? যেখানে পুরুষ নিজেদেরকে কুকুরের চেয়েও খারাপ বানিয়ে নিয়েছে আর গলা ছেড়ে বলছে, তারা সভ্য?

বহু আদিবাসী নৃগোষ্ঠী এখনও বিদ্যমান যাদের ভেতর ধর্ষণ নেই। অথচ তারা পোশাকই পরেন না।
আমাদের দেশের বেশিরভাগ পাহাড়ি নারী একটা মাত্র পোশাক ব্যবহার করে শরীরের নিচের ও উপরের অংশ ঢেকে রাখেন, তাদের সমাজে ধর্ষণের কথা শুনেছেন কখনো?
ধর্ষণের কারণ পোষাকে নয়, কারণটা থাকে ধর্মে, প্রথায়, পূজিঁবাদে ও ইতর পুরুষদের মস্তিষ্কে।

যতদিন পোশাকের অপব্যবহার থাকবে, ততদিন ধর্ষণের জন্য পোশাক দায়ী হবেই। কারণ এটাই হচ্ছে পুরুষ উদ্গারিত পর্দা সভ্যতা।
সভ্যদের পোষাক আছে, ধর্ষণও আছে। এইসব তথাকথিত সভ্যদের কাছে নারী পন্য, নারী মাল।
যখন ইচ্ছে মাল প্যাকেট করবে, যখন ইচ্ছে তখন মালের প্যাকেট খুলবে ;
যখন পুরুষদের যা মন চায়, তাই করবে।

পরিবর্তনটা পোষাকের নয়, পরিবর্তনটা চাই মস্তিষ্কের।
পোশাক চাই নষ্ট ভাবনার, নগ্নতা চাই সুস্থতার, শিল্পের, সৌন্দর্যের।


EmoticonEmoticon