আমাদের সাথী ও বন্ধু এস এম সোলায়মান আজ বেঁচে নেই। কিন্তু তাঁর অমর শিল্পকর্ম 'ইলেকশন ক্যারিকেচার' নাটকটি তিনি রেখে গিয়েছেন।
আজ বাংলাদেশের রাজনীতি-সচেতন জনগণ সেই 'ইলেকশন ক্যারিকেচার'-এর মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। সংক্ষেপে, কাহিনীটি ছিলো নিম্নরূপঃ
অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আন্দোলনে নেমে অনেক গরম গরম কথা বলছে। এমন সময় সেই স্বৈরশাসক খুবই দৃষ্টিনান্দিকভাবে একটি বাঁশী নিয়ে নির্বাচনের সুর বাজাতে শুরু করলেন মধুর তানে। তখন, সেই বাঁশীর সুর শুনে বিপ্লবী বুলি কপচানো বাঘা-বাঘা একেকজন নেতা নানা ভঙ্গিতে সুরের তালে-তালে নাচতে-নাচতে স্বৈরশাসকের নিকটবর্তী হতে লাগলেন অত্যন্ত বিগলিত ও গদগদ হয়ে। দৃশ্যটি ছিলো মনে রাখার মতো!
আজ বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেত্রী ও দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা - যাকে আন্দোলনকারীরা 'স্বৈরশাসক', 'ফ্যাশিষ্ট', 'অবৈধ' ইত্যাদি বলে চিহ্নিত করে থাকেন - যখন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্যে গণভবনে সুস্বাদু খাদ্য ও পানীয়-সহ সংলাপে নিমন্ত্রণ করছেন, আগুনের ফুলকি ছুটানো এককেজন বিপ্লবী নেতা গদগদ হয়ে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন।অর্থাৎ, তারাও নির্বাচনী বাঁশীর সুর শুনে তার তালে-তালে নাচতে-নাচতে শেখ হাসিনার নিকটবর্তী হবেন।
আমি আগেও বলেছি এবং এখনও বলছি, আওয়ামী লীগের বাকশালী ফ্যাশিষ্ট শাসন ও অবাধ লুটপাটের হাত থেকে মুক্তি পেতে বাংলাদেশের মানুষের জন্যে গণ-আন্দোলন বা গণ-অভ্যূত্থান ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। রাস্তায় গড়ে তোলা গণ-আন্দোলনের উত্তাপ ও চাপ ছাড়া স্বৈরশাসকদের কোনো কালে, কোনো দেশে, কোনো যুক্তির কথা বুঝানো যায় না। বাংলাদেশেও তার অন্যথা হবে না।
মনে রাখতে হবে, বাধ্য না হওয়া পর্যন্ত স্বৈরশাসকেরা তাদের নিজস্ব 'সুবোধে' এক বিন্দুও ছাড় দেয় না। তারা গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে তখনই প্রস্থান করতে রাজী হয়, যখন তারা দেখে ও বুঝে গণ-আন্দোলন ইতোমধ্যে গণ-অভ্যূত্থানে রূপ নিচ্ছে এবং তাদের পতন অনিবার্য হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশে যারা গণতান্ত্রিক উত্তরণ চান, তাদেরকে বলছিঃ গণ-আন্দোলন ও গণ-অভ্যূত্থান একটি সামাজিক ও ফলিত বিজ্ঞানের বিষয়; এটি সংঘটিত করার জন্যে পরিকল্পনা ও প্রকৌশল প্রয়োজন। দয়াকরে, সেটি আয়ত্ত্ব করার চেষ্টা করুন।
যদি নিজেরা নিজ থেকে বুঝতে না পারেন, সমাজ-মনোবিজ্ঞানী ও রাজনীতি-মনোবিজ্ঞানীদের বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নিন।
EmoticonEmoticon