কৃষি প্রধান দেশ বাংলাদেশ, কৃষকই এ দেশের প্রাণ। যারা রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে সোনা ফলায়। সেই সোনা বিক্রি হয় পানির অর্ধেক দামে। সরকার আসে, সরকার যায় কৃষকের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়না। ফসল উৎপাদন করতে সার, বীজ, তেল, কীটনাশক প্রয়োজন হয়। সরকার প্রতিনিয়ত এগুলোর দাম বাড়িয়ে ফসলের উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে। ফসলের ন্যায্য দাম না পেয়ে দেশের কৃষির সাথে জড়িত ৮৫ ভাগ মানুষ দিশেহারা। ঈদ আসছে, এই ঈদে একজন কৃষক বাবা তার সন্তানদের আবদার পুরণ করতে পারছে না, গতকাল দেখলাম একজন কৃষক পিতা সন্তানের আবদার পুরণ করতে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। কি কষ্ট, কি দুঃসহ যন্ত্রণা। লাভের আশায় কৃষক ধানচাষ করে সেই ধান মাঠ থেকে কেটে আনতে পারছে না। ধান হয়েছে কৃষকের গলার ফাঁস। এক মন ধান বিক্রি করেও একজন কৃষি শ্রমিকের পারিশ্রমিক দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কৃষক হতাশ, কৃষির সাথে জড়িত ৮৫ ভাগ মানুষ দিশেহারা। বাজারে ৫৫ টাকা কেজি চাল অথচ এক কেজি ধানের দাম মাত্র ১৩ টাকা। যেখানে উৎপাদন খরচ ১৮ থেকে ২০ টাকা। প্রতি কেজিতে কৃষকের ক্ষতি ৫ থেকে ৭ টাকা। সেই ধান থেকে চাল উৎপাদন করে বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা। কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে আর লাভবান হচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগী মিল মালিক, ব্যবসায়ীরা। কৃষকের ক্ষতির টাকা যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীর পকেটে৷ অথচ সরকার নির্বিকার। সারাদেশে যখন ধানের মুল্য নির্ধারনসহ প্রকৃত কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনতে বিভিন্ন কর্মসূচী পালিত হচ্ছে, রাস্তায় উৎপাদিত ফসল ফেলে কৃষক প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করছে। তখন লক্ষ্য করা যাচ্ছে দেশের কৃষি মন্ত্রী, খাদ্য মন্ত্রীসহ সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্তাব্যক্তিদের লাগামহীন কথাবার্তা। সরকার কৃষকের ভাগ্যের পরিবর্তন করার কোন কর্মসূচী গ্রহণ না করে, কৃষি কর্মকর্তাদের বিলাশ বহুল গাড়ি উপহার দিচ্ছে। এগুলো কৃষকের সাথে তামাশা আর পরিহাস ছাড়া কিছুই নয়। কৃষকের ভাগ্য নিয়ে এই তামাশা দেশের সাধারণ মানুষ কিভাবে দেখছে তার কিছুটা প্রমান পাওয়া গেল একটি চায়ের দোকানে কিছু সাধারণ মানুষের আলোচনায়। তাদের মতে " দেশের যে সরকার আছে সেটা জনগনের সরকার নয়, আগে সাধারণ মানুষের ভোট নিয়ে সরকার গঠিত হতো একদিনের জন্য হলেও সাধারণ মানুষ ভোটের অধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ পেতো, তাদের কথা বলার জন্য প্রতিনিধি তারা পাঠাতে পারতো, এ সরকার মানুষের সে অধিকারটুকুও কেড়ে নিয়েছে। দেশের সাধারণ মানুষ ভাল আছে কি মন্দ আছে তাতে সরকারে কোন মাথা ব্যথা নেই। সাধারণ মানুষের কোন প্রয়োজনই নেই সরকারের কাছে। সরকার গঠন করতে তো আর জনগনের ভোটের প্রয়োজন পড়ে না। সে জনগন ভাল থাকলেই কি আর খারাপ থাকলেই কি। সরকারী দলের চ্যালা, চামুণ্ডা আর আমলারা ভাল থাকলেই হলো"। ফেসবুকের কল্যাণে আমরা লক্ষ্য করছি সরকারের বিভিন্ন আমলা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্র সংগঠনের নেতা তারা মাজায় গামছা বেঁধে, মাথায় মাথাল পরে কাস্তে হাতে নিয়ে কৃষকের বেশে মাঠে গিয়ে ছবির পোজ দিচ্ছে আর ফেসবুকে ছেড়ে বাহুবা নিচ্ছে। আহারে! তারা কৃষকের ধান কাটতে গেছে। কৃষকের প্রতি তাদের কত দরদ!। কি লজ্জা! কি লজ্জা! দেশের প্রাণ কৃষক, সেই কৃষককে নিয়ে এমন তামাশা! এমন পরিহাস!
ছি!ছি! একজন কৃষকের সন্তান হিসেবে এসবের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। একজন কৃষকের সন্তান হিসেবে মাঠে কাজ করার কিছুটা অভিজ্ঞতা আছে। এই গ্রীষ্মের তপ্ত রোদে মাঠে কাজ করতে গেলে বোঝা যায়, কত ধানে কত চাল! তপ্ত রোদে কৃষকের শরীর থেকে দর দর করে ঘাম বের হয়ে শরীর ভিজে যায়। এরকম হাজার টাকা দামের ধবধবে লুঙ্গি পরে কৃষক মাঠে যায়না, ধান কাটা কৃষকের পরনে থাকে দেড়শ টাকা দামের পলেস্টারের লুঙ্গি। ঘামে ভিজে চপচপ করে।
এত সহজ নয় কৃষিকাজ, ফসল ফলানো। এলাকায় একটি কথা প্রচলিত আছে ক্লাস টু তে পড়া গ্রামীণ শিশুকে কেউ একজন তার পড়াশোনা নিয়ে ব্যঙ্গ করায় তার ভাষায় " চোদন আছে, ক্লাস টু র বই আরো দাদীর ছাগল রাখা, বানান করে পড়তে হয়"। যে দেশের ৮৫ ভাগ মানুষ কৃষক, যারা কৃষির উপর নির্ভরশীল। তাদের অনুভূতিতে আঘাত হানার অধিকার কারো নেই। না সরকারের না আমলাদের। যুগে যুগে মানুষ জেগেছে। মানুষ জাগলে পালানোর পথ পাবেন না। এখনো সময় আছে সাধারণ মানুষের অনুভূতিতে আঘাত হানা বন্ধ করুন, কৃষকের ভাগ্য নিয়ে পরিহাস করবেন না। দেশের প্রাণ কৃষক, কৃষককে সম্মান করতে শিখুন। ৮৫ ভাগ মানুষ যদি একবার হুংকার দিয়ে উঠে তাহলে সত্যিই পালানোর পথ থাকবে না। কৃষকের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমুল্য নির্ধারণ করুন, কৃষি উপকরনের দাম কমান। সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে কৃষিপণ্য ক্রয় করুন। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ব কমান, সিন্ডিকেট ভেঙে দিন, কৃষককে বাঁচান।
মনে রাখবেন -কৃষক বাঁচলেই বাংলাদেশ বাঁচবে।
বুধবার, ২২ মে, ২০১৯
তামাশা, পরিহাস বন্ধ করুন। ৮৫ ভাগ মানুষের অনুভূতি নিয়ে খেলবেন না!!

Tags
Artikel Terkait
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
EmoticonEmoticon