শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫

যে প্রতিবাদ হিটলারকে নায়ক বানায়, তা আরেক অন্যায়

ফিলিস্তিন সংকট, হিটলারের নামাঙ্কিত ভ্রান্তি এবং ন্যায়ের সার্বজনীনতা

আজকের বিশ্বে সবচেয়ে বেদনাদায়ক রাজনৈতিক সংকটগুলোর একটি হলো ফিলিস্তিন সংকট। এটি কেবল একটি ভূখণ্ডগত বিরোধ নয়—বরং ইতিহাস, অধিকার, জাতীয়তাবাদ, উপনিবেশবাদ এবং সাম্রাজ্যবাদী শক্তির এক জটিল মোড়কে গাঁথা এক নির্মম বাস্তবতা। ফিলিস্তিনিদের ওপর বছরের পর বছর ধরে চলা নিপীড়ন, হত্যা, ঘরবাড়ি ধ্বংস, ভূমি দখল এবং নাগরিক অধিকারের অবমাননা—এই সবকিছু একটি সুসংগঠিত দখলদার রাষ্ট্রের নৃশংসতার চিত্র তুলে ধরে।

এই প্রসঙ্গে প্রতিবাদ যেমন জরুরি, তেমনি সেই প্রতিবাদের ভেতরে থাকা নৈতিক বোধ ও যুক্তিবোধ আরও জরুরি। আজকে আমরা দেখতে পাই—ফিলিস্তিনের প্রতি সহমর্মী কিছু মানুষ ইজরায়েলের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে এমন কিছু অবস্থান নিচ্ছেন, যা কেবল ইতিহাস বিকৃতি নয় বরং মানবতাবিরোধী দর্শনের প্রশ্রয় হয়ে দাঁড়ায়। এর সবচেয়ে কুরুচিপূর্ণ দৃষ্টান্ত হলো—হিটলারকে 'নায়ক' হিসেবে তুলে ধরা।

ইহুদি বিদ্বেষ নয়, শোষণবিরোধিতা হোক আমাদের অবস্থান

ইজরায়েলের রাষ্ট্রীয় নীতির কঠোর সমালোচনা করা এক কথা, আর সব ইহুদি জনগোষ্ঠীকে দোষী বা শত্রু ভেবে ঘৃণা ছড়ানো আরেক কথা। ইতিহাসে ইহুদি জাতি যুগে যুগে নানা নিপীড়নের শিকার হয়েছে। মধ্যযুগ থেকে শুরু করে ২০শ শতকের নাৎসি জার্মানির অধীনে গণহত্যা—এই জাতিকে ঘিরে ঘৃণা কখনোই ন্যায়সঙ্গত ছিল না। আজ যখন কেউ ইহুদি পরিচয়কেই সমস্যার মূলে তুলে ধরে, তখন সে ইতিহাসেরই আরেক ধারায় নিপীড়নের যোগসূত্রে অংশ নেয়।

বিশ্বের বহু ইহুদি ব্যক্তি ও সংগঠন আজও ইজরায়েলের দখলদার নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেন। "Jewish Voice for Peace", "Neturei Karta", এমনকি স্বয়ং ইজরায়েলের মধ্যেও অসংখ্য নাগরিক, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী রয়েছেন যারা নিজেদের রাষ্ট্রের অন্যায়ের প্রতিবাদ করছেন। সুতরাং, ধর্ম বা জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে সকলকে দায়ী করা শুধু অনৈতিকই নয়, বরং তা একটি ভুল দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন।

হিটলার: ইতিহাসের এক কলঙ্ক, কোনোভাবেই নায়ক নয়

আশ্চর্যের বিষয়, কিছু মানুষ ইজরায়েলের অপরাধের প্রতিবাদ করতে গিয়ে হিটলারকে ‘নায়ক’ হিসেবে তুলে ধরেন। এটি কেবল অজ্ঞতা নয়, বরং মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রতি পরোক্ষ সমর্থন। হিটলার একজন যুদ্ধাপরাধী, একনায়ক, ফ্যাসিস্ট, এবং জাতিগত নিধনের স্থপতি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি ৬০ লক্ষ ইহুদি, হাজার হাজার রোমা, প্রতিবন্ধী, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও অন্য জাতিগোষ্ঠীর লোকদের গ্যাস চেম্বারে পাঠিয়ে হত্যা করেন।

তাকে নায়ক বানানো মানে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ গণহত্যাকে বৈধতা দেওয়া, যার অর্থ দাঁড়ায়—ফিলিস্তিনিদের মতো নির্যাতিতদের পক্ষ থেকে কথা বলার নৈতিক অধিকার আমরা নিজেরাই খর্ব করছি। যে প্রতিবাদ ঘৃণার উপর দাঁড়ায়, তা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না।

গোলান মালভূমি: দখলদারির রাজনৈতিক প্রতিচ্ছবি

১৯৬৭ সালের ছয়দিনের যুদ্ধে ইজরায়েল সিরিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমের গোলান মালভূমি দখল করে নেয়। ঐ যুদ্ধের সময় ইজরায়েল একযোগে মিশর, জর্ডান এবং সিরিয়ার বিপক্ষে হামলা চালায় এবং তাদের অনেক ভূখণ্ড কব্জা করে নেয়। ১৯৮১ সালে ইজরায়েল এই মালভূমিকে নিজেদের অংশ হিসেবে ঘোষণা করলেও জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আজও সেটিকে “ইজরায়েল অধিকৃত সিরীয় অঞ্চল” হিসেবেই চিহ্নিত করে।


২০১৯ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইজরায়েলের সেই দখলদারিত্বকে স্বীকৃতি দেন এবং পরে ইজরায়েল সেই এলাকাতে "Trump Heights" নামক বসতি স্থাপন করে। এটি সাম্রাজ্যবাদী সহযোগিতার একটি নিদর্শন।


কিন্তু প্রশ্ন হলো—এই ঘটনার জন্য কেবল আমেরিকার জনগণকে দোষারোপ করাটা কতটা যুক্তিসঙ্গত? রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি এবং নাগরিকদের নৈতিক অবস্থান সবসময় এক নয়।

বয়কট, ভিসা ও নাগরিকত্ব: বাস্তবতা বনাম আবেগ

প্রতিবাদ মানেই যে সবকিছু ত্যাগ করে আগুনে ঝাঁপ দেওয়া, তা নয়। কেউ কেউ যুক্তি দেন—“যদি সত্যিই আমেরিকা দখলদারদের পক্ষ নেয়, তাহলে কেন কেউ তাদের পণ্য ব্যবহার করে? কেন ভিসা নেয়?” কিন্তু এমন প্রশ্নগুলো বাস্তবতা বিচ্ছিন্ন।


বিশ্বায়নের যুগে আমেরিকার পণ্য ও সেবা অনেক ক্ষেত্রেই অপরিহার্য। শিক্ষার জন্য আমেরিকায় যাওয়া মানেই কি সেই রাষ্ট্রের সকল নীতিকে সমর্থন করা? অনেকে বয়কট করেন, কেউ কেউ করেন না—কিন্তু সেটি ব্যক্তি পরিস্থিতির উপর নির্ভরশীল। বয়কটও একটি কৌশল, প্রতিবাদের একমাত্র পথ নয়।

তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—যে অবস্থানই নেওয়া হোক, সেটা যেন যুক্তিবোধ ও মানবতার জায়গা থেকে হয়।

প্রতিবাদের নৈতিকতা এবং সার্বজনীন মানবতা

ফিলিস্তিনিদের মুক্তির সংগ্রাম একটি ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন। কিন্তু এই ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াতে গিয়ে যদি আমরা নিজেরাই অন্যায়কে প্রশ্রয় দিই, ইতিহাস বিকৃতি করি, ঘৃণাকে উৎসাহ দিই—তবে আমরা আর ন্যায়ের প্রতিনিধি থাকি না। তখন আমরা হয়ে যাই আরেক ঘৃণার ধারক, যা মূল সমস্যাকে আরও জটিল করে তোলে।

প্রতিবাদ হোক সেই মানুষদের পক্ষ নিয়ে, যারা ঘরহারা, ভূমিহারা, প্রিয়জনহারা। সেই আন্দোলন হোক এমন এক অবস্থানে দাঁড়িয়ে, যেখানে আমরা কোনো জাতি, ধর্ম বা ভাষার ভিত্তিতে কাউকে ঘৃণা করি না; বরং অন্যায়ের বিপরীতে মানুষ হয়ে দাঁড়াই—কোনো ‘হিটলার’ হয়ে নয়।

উপসংহার

ফিলিস্তিন সংকট আমাদের বিবেককে প্রশ্ন করে—আমরা কী ন্যায়ের পক্ষে? না ঘৃণার? আমরা কি সত্যিকার প্রতিবাদ করতে পারি, না কেবল আক্রোশের নামে আরেক ইতিহাসের ভুলকে প্রশ্রয় দিই? যদি সত্যিই ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়াতে চাই, তবে আমাদের উচিত যুক্তিবোধ, মানবতা, এবং ইতিহাসবোধকে সমন্বয় করে দাঁড়ানো—ঘৃণাকে নয়, ন্যায়কে হাতিয়ার বানিয়ে।


মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল, ২০২৫

কার্ল মার্ক্সের দর্শন: একটি বৈপ্লবিক সমাজদর্শন

কার্ল মার্ক্স


ভূমিকা

কার্ল মার্ক্স (১৮১৮-১৮৮৩) শুধু একজন অর্থনীতিবিদ বা রাজনৈতিক চিন্তাবিদই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন গভীর দার্শনিক যার চিন্তা সমাজ, ইতিহাস ও অর্থনীতিকে নতুনভাবে ব্যাখ্যা করেছে। মার্ক্সের দর্শন শুধু তত্ত্বে সীমাবদ্ধ নেই, এটি সমাজ পরিবর্তনের একটি কর্মসূচি। তাঁর দর্শনের মূল উপাদান হলো ঐতিহাসিক বস্তুবাদ, শ্রেণীসংগ্রাম, alienation (বিচ্ছিন্নতা), এবং সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ধারণা।

১. ঐতিহাসিক বস্তুবাদ (Historical Materialism)

মার্ক্সের দর্শনের কেন্দ্রীয় স্তম্ভ হলো ঐতিহাসিক বস্তুবাদ, যা তিনি ফ্রিডরিখ এঙ্গেলসের সাথে যৌথভাবে বিকশিত করেন। এই তত্ত্ব অনুসারে, সমাজের ভিত্তি হলো উৎপাদন ব্যবস্থা। মানুষের চিন্তা, সংস্কৃতি, রাজনীতি—সবকিছুই নির্ধারিত হয় উৎপাদনশক্তির বিকাশ ও উৎপাদন সম্পর্কের মাধ্যমে।

উৎপাদন পদ্ধতির পর্যায়: মার্ক্স ইতিহাসকে বিভিন্ন উৎপাদনমূলক ব্যবস্থার পর্যায়ে বিভক্ত করেন:

আদিম সাম্যবাদ

দাসপ্রথা

সামন্ততন্ত্র

পুঁজিবাদ

সমাজতন্ত্র ও কমিউনিজম (শেষ লক্ষ্য)

অধিবিদ্যার সমালোচনা: মার্ক্স হেগেলের আদর্শবাদকে খারিজ করে বলেন, "অস্তিত্বই চেতনা নির্ধারণ করে, চেতনা অস্তিত্ব নির্ধারণ করে না"। অর্থাৎ বাস্তব জগতের বস্তুগত অবস্থাই মানুষের চিন্তাকে প্রভাবিত করে।

২. শ্রেণীসংগ্রাম (Class Struggle)

মার্ক্সের মতে, "সমস্ত সমাজের ইতিহাস হলো শ্রেণীসংগ্রামের ইতিহাস" (The Communist Manifesto)। প্রতিটি যুগে শোষক (যেমন—সামন্ত lords, পুঁজিপতি) ও শোষিত (দাস, কৃষক, শ্রমিক) শ্রেণীর মধ্যে সংঘাত বিদ্যমান।

পুঁজিবাদে শ্রেণীদ্বন্দ্ব:

বুর্জোয়া (পুঁজিপতি): যারা উৎপাদনের উপকরণের মালিক

প্রলেতারিয়েত (শ্রমিক): যাদের শুধু নিজের শ্রম বিক্রি করার সামর্থ্য আছে।

মার্ক্সের মতে, শ্রমিকরা একদিন সংঘবদ্ধ হয়ে পুঁজিবাদ উৎখাত করবে।

৩. Alienation (বিচ্ছিন্নতা বা বহিষ্করণ)

মার্ক্সের প্রারম্ভিক দার্শনিক রচনা "Economic and Philosophic Manuscripts of 1844"-এ তিনি alienation ধারণাটি বিশ্লেষণ করেন। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় শ্রমিকেরা চারভাবে বিচ্ছিন্ন হয়:

1. নিজের উৎপাদিত পণ্য থেকে (পণ্যে তার শ্রম থাকলেও তার ওপর নিয়ন্ত্রণ নেই)।

2. নিজের শ্রম প্রক্রিয়া থেকে (শ্রম শুধু জীবিকা উপার্জনের মাধ্যম, আনন্দদায়ক নয়)।

3. স্বীয় সত্তা থেকে (শ্রমিকের সৃজনশীলতা ধ্বংস হয়)।

4. অন্য মানুষের থেকে (পুঁজিপতি ও শ্রমিকের সম্পর্ক শোষণের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে)।

৪. অতিরিক্ত মূল্য (Surplus Value) ও শোষণ

মার্ক্স ব্যাখ্যা করেন যে, শ্রমিকরা তাদের শ্রমশক্তির মাধ্যমে যে পরিমাণ মূল্য উৎপন্ন করে, তার একটি অংশ তারা মজুরি হিসেবে পায়, কিন্তু অবশিষ্ট অংশ পুঁজিপতির লাভ হয়ে যায়। এটিই হলো অতিরিক্ত মূল্য (Surplus Value), যা পুঁজিবাদী শোষণের মূল কারণ।


৫. বিপ্লব ও সাম্যবাদের দর্শন

মার্ক্সের দর্শনের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো একটি শ্রেণীহীন, রাষ্ট্রহীন সমাজ (কমিউনিজম) প্রতিষ্ঠা। তাঁর মতে:

পুঁজিবাদ নিজেই নিজের ধ্বংস ডেকে আনে (অতিরিক্ত উৎপাদন, অর্থনৈতিক সংকট, শ্রমিক অসন্তোষ)।

প্রলেতারিয়েতের একনায়কত্ব (Dictatorship of the Proletariat): পুঁজিবাদ উৎখাতের পর একটি অন্তর্বর্তী সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে।

চূড়ান্ত লক্ষ্য কমিউনিজম: যেখানে "প্রত্যেকে সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী পাবে"


৬. বর্তমান বিশ্বে মার্ক্সবাদের প্রাসঙ্গিকতা

বর্তমান বিশ্বে যুদ্ধ, দারিদ্র্য, পরিবেশগত সংকট এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মার্ক্সবাদ একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে।

শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা: সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন, অর্থনৈতিক অসাম্য ও জাতিগত সংঘাতের সমাধান মার্ক্সবাদী সমতার দর্শনে নিহিত।

মানবিক জীবন গঠন: শ্রমিক অধিকার, গণতন্ত্র ও ন্যায়সঙ্গত সমাজব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য শ্রেণী সংগ্রাম ও সমবণ্টনের নীতির প্রয়োজনীয়তা।

জলবায়ু পরিবর্তন ও পুঁজিবাদ: পরিবেশগত বিপর্যয় প্রতিরোধে মুনাফার পরিবর্তে মানবিক প্রয়োজনকে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।


৭. সমালোচনা ও বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গি

মার্ক্সের দর্শনের সমালোচনাগুলো হলো:

অতিসরলীকরণ: ইতিহাসকে শুধু অর্থনৈতিক দ্বন্দ্ব দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না (ধর্ম, সংস্কৃতি, জাতীয়তাবাদও গুরুত্বপূর্ণ)।

স্বাধীনতার প্রশ্ন: কমিউনিস্ট রাষ্ট্রগুলোতে ব্যক্তি স্বাধীনতা খর্ব হয়েছে (যেমন সোভিয়েত ইউনিয়ন)।

অর্থনৈতিক ভবিষ্যদ্বাণী: পুঁজিবাদ ধ্বংস হয়নি, বরং রূপান্তরিত হয়েছে (কল্যাণ রাষ্ট্র, শ্রমিক অধিকার)।


তবে, কিছু বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে:

গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র: ব্যক্তি স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক সাম্য বজায় রেখে সমাজতান্ত্রিক রূপান্তর সম্ভব।

বাজার সমাজতন্ত্র: সম্পূর্ণ রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত অর্থনীতির পরিবর্তে একধরনের মিশ্র ব্যবস্থা যেখানে শ্রমিকরা উৎপাদন ব্যবস্থার মালিক হবে।


উপসংহার

কার্ল মার্ক্সের দর্শন শুধু তাত্ত্বিক নয়, এটি বিশ্বব্যাপী সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। বর্তমান বিশ্বে শান্তি, সাম্য ও মানবিকতার পথে এগিয়ে যেতে মার্ক্সবাদের গুরুত্ব অপরিসীম। মার্ক্সবাদ আজও শোষণ-বিরোধী আন্দোলনের প্রেরণা হিসেবে টিকে আছে।

> "দার্শনিকদের শুধু পৃথিবীকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে; কিন্তু আসল কাজ হলো একে বদলে দেওয়া।"

— কার্ল মার্ক্স, Theses on Feuerbach (১৮৪৫)

সোমবার, ৩১ মার্চ, ২০২৫

তুমি এসো

তুমি এসো—

যেভাবে ভোরের আলো

অন্ধকারের গায়ে নাম লেখে,

যেভাবে নদী

পাথর কেটে নিজের পথ বানায়—

এসো তেমন করেই।


তুমি এসো—

যেভাবে বৃষ্টি

ভূমিহীন মাটির তৃষ্ণা মেটায়,

যেভাবে আগুন

শীতের রাত জ্বালিয়ে রাখে—

এসো তেমন করেই।


আমার ভাঙা ঘড়ির কাঁটায়

থেমে থাকা সময় নাও,

আমার অর্ধেক নিশ্বাসে

তোমার নাম মিশিয়ে দাও।


তুমি এসো—

যেভাবে সমুদ্র

নোনাজল দিয়ে লবণ জন্মায়,

যেভাবে গাছ

শিকড় চিরে মাটিকে আঁকড়ে ধরে—

এসো তেমন করেই।


আমার অসুখের বিছানায়

একটা গান হয়ে বসো,

আমার নালিশের পাতায়

চাঁদ হয়ে ঝুলে থাকো।


তুমি এসো—

যেভাবে স্বপ্ন

চোখের কোণে জমা হয়,

যেভাবে বাতাস

দরজার ফাঁক দিয়ে হঠাৎ ঢুকে পড়ে—

এসো তেমন করেই।


আমার সমস্ত রাতের উপরে

একটি হাত রেখে যাও,

আমার সমর্পণের ভাষাটাকে

তোমার শ্বাসে গলে যেতে দাও।


তুমি এসো—

যেভাবে পৃথিবী

নিঃশব্দে সূর্যকে ঘিরে চলে,

যেভাবে প্রেম

সময়কে অতিক্রম করে—

এসো তেমন করেই।




রবিবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৯

কোনটা সংকট

অনেকেই রোহিঙ্গা বিরোধী পোস্ট দিচ্ছেন। অনেক বামপন্থী সেক্যুলার দাবিদার আছেন উনারাও রোহিঙ্গাদের মহা বিপদ হিসেবে দেখছেন। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের জন্য বাড়তি চাপ এটা ঠিক আছে। কিন্তু রোহিঙ্গা যেখানে ফিরে যাবে সেখানে তাদের নিরাপত্তা আছে কিনা এটাও তো গুরুত্বপূর্ণ? কারণ নিশ্চিত অনিয়চ্ছতার মধ্যে, বন্দুকের গুলি তাক করা জায়গায় কেউ ফেরত যেতে চাইবে না। মিয়ানমার সেগুলো নিশ্চিত না করেই কিছু খুপরিঘর বানিয়েছে রোহিঙ্গা থাকার জন্য। সেখানে ক্যাম্পে ফিরতে হবে। অনেকটা জেলখানার মত জীবন। স্বাধীন চলাফেরা, ক্ষেতখামার করা, নিজেদের বসতিতে ফিরতে পারবে না। ফলে এরকম একটি অনিশ্চিত প্রত্যাবর্তনে কেউ ফিরতে চাইবে না।

কেউ কেউ ১৮ কোটি জনসংখ্যার মাঝে ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে প্রধান সমস্যা হিসেবে দেখছেন। বাস্তবে কী রোহিঙ্গারাই বাংলাদেশের প্রধান সংকট? যদি বাংলাদেশের অন্যান্য বিষয় ভালভাবে চলতো তবে মনে করা যেত আসলেই রোহিঙ্গা সংকট সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের মূল সংকট শাসন ব্যবস্থার সংকট। এখানে রাতের অন্ধকারে সাংসদ নির্বাচিত হয়ে যায়। সরকার গঠিত হয় রাষ্ট্রীয় আমলাতান্ত্রিক ক্ষমতার জোরে, হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়, বিচার ব্যবস্থা একেবারেই তলানিতে এসে পড়েছে। দুর্নীতি লুটপাট চলছে অবাধে। খুন সন্তাস ধর্ষণের বিচার নাই। এগুলো ভেঙ্গে পড়েছে। স্বেচ্চাচারী আর দুর্নীতি হয়ে উঠেছে রাষ্ট্রের প্রধান উপাদান। সেখানে রোহিঙ্গা আসলেই বড় সংকট? ভাইয়েরা আমার রোহিঙ্গা বাংলাদেশের জন্য বাড়তি চাপ ঠিক আছে। কিন্তু আপনারা তাঁদের ঠেলে দিবেন এমন জায়গায় যেখানে বারবার নির্যাতনের শিকার হয়ে তারা আজ নিজ ভূমি থেকে বিতারিত। সেখানে কোন নিশ্চয়তা ছাড়া কিভাবে ফেরত যাবে?

আমরাও চাই রোহিঙ্গা নিজ ভূমিতে ফিরে যাক। বাংলাদেশের মত ছোট জায়গায় রোহিঙ্গাদের জায়গা দেওয়া কঠিন। এখন সম্পূর্ণ আলাপ আলোচনার মাধ্যমে তা হোক। মিয়ানমারের মত দস্যু রাষ্ট্র সহজে এই কাজ করবে তা মনে করি না। একমাত্র আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করা ছাড়া এটা কখনই বর্তমানে সম্ভব নয়। তবে প্রতিবেশী মোড়ল রাষ্ট্রগুলো সংকট নিয়ে ভাবিত নয়। তারা তাদের সুবিদাকেই বড় করে দেখছে। আসল কথা হল রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দেন দরবার করা ছাড়া এই কাজ সম্ভব নয়। ফলে মিয়ানমারের অসহযোগিতা এবং বাংলাদেশের সরকারের কার্যকর প্রদক্ষেপ না নেওয়ার ফলে প্রত্যাবর্তন কার্যক্রম ফলফসু হচ্ছে না। এমন অবস্থায় রোহিঙ্গাদের নিয়ে বিষ্যুদগার করে লেখালেখা সঠিক মনে করি না। একবার নিজেকে রোহিঙ্গার জায়গায় কল্পনা করুন তখন বাস্তবতা কিছুটা উপলব্ধি করতে পারবেন।

বৃহস্পতিবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৯

১৫ই অগাষ্টের রিফ্লেকশনঃ শেখ মুজিবুর রহমান থাকতে পারতেন ক্ষমতার ঊর্ধ্বে

১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের সহযোদ্ধা খন্দকার মোশতাক আহমেদ আওয়ামী-প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে যে-নজিরবিহীন নৃশংসতায় তাঁকে সপরিবারে হত্যা করিয়েছে, আমি আওয়ামী-বাকশালী রাজনীতির বিরোধী হওয়া সত্ত্বেও শুরু থেকে শেষপর্যন্ত দৃঢ় নৈতিকতার ভিত্তিতে এই জঘন্য ষড়যন্ত্র ও হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করি।

১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ পাক-হানাদার বাহিনীর দ্বারা আক্রান্ত হয়ে বাঙালী জাতি যে-স্বাধীনতার যুদ্ধ শুরু করেছিলো, তা তারা করেছিলো তাদের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের নামে। এ-বিষয়ে কারও বিন্দুমাত্রও সন্দেহ থাকা উচিত নয়। এমনকি স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে যে মেইজর জিয়াউর রহমানের নাম কেউ কেউ বলে থাকেন, স্বয়ং তিনিও যা বলেছিলেন, তাও ঐ শেখ মুজিবুর রহমানের নামেই বলেছিলেন।

আমার মনে হয়, বাঙালী জাতির স্বাধীকার ও স্বাধীনতার জন্যে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালীর মননে ও হৃদয়ে যে অনন্য ও অসমান্তরাল স্থায়ী আসন করে নিয়েছিলেন, তারই প্রকাশ ঘটেছিলো ১৯৭০ সালের নির্বাচনে। সেই নির্বাচনে সমগ্র বাঙালী জাতি ভৌট দিয়েছিলো কোনো প্রার্থীর গুণ-বিচারে নয়, বরং শেখ মুজিবুর রহমানের নামে।

আমি মনে করি, 'জাতির পিতা' হিসেবে ঘোষিত শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর নামে স্বাধীন হওয়া দেশে নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সরকার প্রধান বা রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার মধ্যে নিয়ে যাওয়াটা বাঙালী জাতির উচিত হয়নি। 'জাতির পিতা' সংজ্ঞানুসারে জাতির অন্য সবার চেয়ে ঊর্ধ্বে, এবং সে-কারণেই তাঁকে তাঁর 'সন্তান'দের সাথে ক্ষমতার প্রশ্নে প্রতিযোগিতায় নামিয়ে আনা ঠিক নয়।

শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভূমিকা ও অসমান্তরাল অবস্থান বিবেচনা করে বাঙালী জাতির উচিত ছিলো তাঁকে সমস্ত প্রকারের প্রতিযোগিতা ও বিতর্কের ঊর্ধ্বে রেখে জাতির পিতা  হিসেবে জাতীয় বিপ্লবের অথোরিটি ও জাতির কনশেন্স বা বিবেক  হিসেবে অনেকটা ভারতের মোহনদাস গান্ধী বা ইরানের আয়াতুল্লাহ্‌ খোমেনীর মতো সর্ব-প্রকারের রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার বাইরে রাখা। 

আর, শেখ মুজিবুর রহমানের উচিত ছিলো ১৯৭২ সালে দেশে ফিরে আসার পর, স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সকল রাজনৈতিক দলকে একটি ঐক্যবৃত্তে নিয়ে এসে, তাজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে একটি জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠনের নির্দেশ দিয়ে, তাদের সকলের মেণ্টর হিসেবে নির্বাহী ক্ষমতা থেকে দূরে থেকে একটি স্বাধীন, সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী জাতি  হিসেবে গড়ে তোলার নির্দেশনা দান করা।

আমার বিশ্বাস, শেখ মুজিবুর রহমান যদি নির্বাহী ক্ষমতা না নিয়ে জাতির পথপ্রদর্শক ও বিবেক হিসেবে সবার ওপর 'পিতা' হয়ে থাকতেন, বাঙালী জাতি আজ স্বদেশে ও বিশ্বপরিমণ্ডলে অনেক ভালো অবস্থানে থাকতো।

শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে ক্ষমতার কেন্দ্রীভবনের কারণে যে অটোক্র্যাসির জন্ম হয়েছিলো এবং তাতে বাঙালী জাতির যে ক্ষতি হয়েছিলো, তার চেয়ে বহুগুণ ক্ষতি হয়েছে ষড়যন্ত্র করে জাতির এই অনন্য ও সমান্তরাল নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করার মধ্য দিয়ে।

১৫ই অগাষ্ট নিঃসন্দেহে বাঙালী জাতির জন্যে একটি শোকের ও রিফ্লেকেশনের দিন। এ-দিনটি থেকে আমরা যদি ঐতিহাসিক শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি, সেটিই হবে আমাদের অপূরণীয় ক্ষতির মধ্যেও প্রাপ্তি।

সোমবার, ২২ জুলাই, ২০১৯

নিদারাবাদ

১৯৮৭ সাল
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার (বর্তমান বিজয়নগর উপজেলা) নিদারাবাদ গ্রাম।
শশাঙ্ক দেবনাথকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কেউ জানে না তিনি কোথায়। পরিবার জানে না, গ্রামবাসী জানে না।
দুই বছর পর, তখন ১৯৮৯ সাল। এবার উধাও হয়ে গেল শশাঙ্কের পুরো পরিবার। একরাতেই হাওয়া। শশাঙ্কের স্ত্রী বিরজাবালা ও তার পাঁচ সন্তান।
গ্রামের দুতিনজন বললেন, শশাঙ্ক আগেই ইন্ডিয়া চলে গিয়েছিল। তারপর সুবিধা বুঝে তার স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের নিয়ে গেছে।
গল্প শেষ।

ইতোমধ্যেই কয়েকজন দাবী করে বসল শশাঙ্ক তাদের কাছে তার বাড়িঘর ও জমিজমা বিক্রি করে গেছে। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন পাশের গ্রামের কসাই তাজুল ইসলাম।
জমির দাবীদারদের মধ্যে কিছুটা ঝগড়া হলেও তা একসময় মিটেও যায়।
লোকজন শশাঙ্ককে গালাগাল করে, শালা, মালোয়ানের বাচ্চা, এক জমি তিনজনের কাছে বিক্রি করে আকাডাগো দেশে পালাইছে। দেশদ্রোহী, বেঈমান।
এই গল্পও শেষ।

স্কুল শিক্ষক আবুল মোববারক একদিন বিকেলে স্কুল থেকে ফেরার পথে ধুপাজুড়ি বিলের পানিতে দুর্গন্ধযুক্ত তেল ভাসতে দেখেন। তিনি নৌকার গতিপথটা একটু ঘুরিয়ে নেন। হঠাৎ তলদেশে কী একটা আটকে যাওয়ায় দুলে উঠে তার নৌকা। এছাড়াও শোনা যায় মাঝির বৈঠায় খটখট শব্দ। সন্দেহ হয় শিক্ষক আবুল মোবারকের। তার নির্দেশ মতো মাঝি বৈঠা দিয়ে পানির নিচে খোঁচাখুঁচি করতেই ভেসে উঠে একটি ড্রাম।

তিনি ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের খবর দিলেন। ড্রাম খুলে সবাই স্তব্ধ হয়ে যান। তিনটি লাশ। সন্ধান চলে আরও। মিলেও যায়। আরেকটি ড্রামে টুকরো টুকরো করে রাখা আরও তিনজনের লাশের। মোট ছয়টি লাশ সনাক্ত করা হয়।
এরা আর কেউ নয়, ঐ গ্রামেরই নিরীহ শশাঙ্ক দেবনাথের স্ত্রী ও পাঁচ অবুঝ সন্তানের লাশ ছিল এগুলো। শশাঙ্কের স্ত্রী বিরজাবালা (৪৫), দুই কন্যা নিয়তি বালা (১৭) ও প্রণতি বালা (১০)। তিন পুত্র সুভাষ দেবনাথ (১৪), সুপ্রসন্ন দেবনাথ সুমন (৫) ও  সুজন দেবনাথ(২)।
শশাঙ্কের এক মেয়ে সুনীতিবালা শ্বশুরবাড়ি থাকায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান।

তদন্ত রিপোর্ট,
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শশাঙ্কের জ‌মি দখল কর‌তে প্রথমে শশাঙ্ককে খুন ও গুম এবং পরে এক রা‌তে পু‌রো প‌রিবার‌কেই নৌকায় তু‌লে নি‌য়ে মে‌রে ড্রা‌মে ভ‌রে বর্ষার বি‌লে পু‌তে ফে‌লা হয়। দি‌নে প্রচার ক‌রে, বিরজাবালার প‌রিবার ভার‌তে চ‌লে গে‌ছে।
শশাঙ্কের সম্পত্তির উপর লোভ ছিল পাশের গ্রামের কসাই তাজুল ইসলামের। এ কারণেই প্রথমে অপহরণ করে শশাঙ্ককে হত্যা করে সে। দুই বছর পর তার স্ত্রী-সন্তানসহ ছয়জনকে হত্যা করে ড্রামে চুন মিশিয়ে তাতে লাশ ভরে বিলে ফেলে দেওয়া হয়। মনে  রাখা ভালো, তাদের সর্বকনিষ্ঠ নিহত সন্তানের বয়স ছিল দুই বছর। আরও মনে রাখলে ভালো, খুনের আগে মেয়েদের ধর্ষণ করা হয়েছিল। এই তাজুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়েছিল ঢাকার একটা মসজিদ থেকে।
তারপর? তারপর আর কী? একই ঘটনা ঘটে বাঁশখালীতে। একই হিন্দু পরিবারের এগারো জন সদস্যকে খুন করে ড্রামে ভরে গুম করা হয় তারপর প্রচার করা হয়, ওরা ভারত চলে গেছে। আরও কত গোপন গোপনেই আছে, কে জানে!  আমরা ঐসব আলতু ফালতু ঘটনা গোপন রাখতে সম্মিলিতভাবে সফল হয়েছি। আর গল্পও পুরোপুরি শেষ।

হ্যাঁ, তবুও একটুখানি এখনও বাকী আছে ! এখনও কিছু মালোয়ান বেঁচে আছে যে! কথাও বলছে আকাডাগুলা বড় গলায়! গনিমতের মালেরাও আবার বিচার চায়! খানকি মাগীর কত বড় সাহস!
এবার চলুন, প্রথমেই শালী মালোয়ানের বাচ্চা ঐ প্রিয়া সাহাকে গণধর্ষণ করে মেরে ফেলি! আগে আওয়ামী লীগ, পরে বিএনপি, পরে জামায়াত, পরে হেফাজত। একের পর এক। আর কমিউনিস্টরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব উপভোগ করুক। শত হলেও তারাও তো আলহাজ্ব কমিউনিস্ট!
সিরিয়াল ঠিক আছে না, ভাইজান?

রবিবার, ১৪ জুলাই, ২০১৯

স্বৈরশাসক এরশাদ নেইঃ আছে তাঁর স্মৃতি ও গতি

বাংলাদেশের প্রাক্তন সামরিক একনায়ক ও প্রসিডেণ্ট জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ আর নেই। বহু মৃত্যুর কর্তা এই জেনারেল এরশাদ স্বয়ং মৃত্যুর কাছে পরাস্ত হলেন।

জেনারেল এরশাদ যতো রাজনৈতিক কর্মীর জীবন নাশ করেছেন, তার চেয়েও বেশি রাজনৈতিক কর্মীর চরিত্র নাশ করেছেন তাঁর শাসনামলে। জাতীয় রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতাদের ডেকে নিয়ে প্রলোভন দেখিয়ে তিনি নিজের রাজনৈতিক দল ও সহযোগী সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন।

১৯৮২ সালের ২৪শে মার্চ তিনি যখন বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল ও সারাদেশে সামরিক আইন জারি করে নিজেকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ঘোষণা করেন, আমরা তার মাত্র কয়েক মাস আগে ডাকসুতে নির্বাচিত হই। তিনি প্রথম ডাকসুকে বাতিল ঘোষণা করেন, কিন্তু বিপদ আঁচ করে সে-ঘোষণা প্রত্যাহার করেন এবং সুচতুরভাবে ডাকসুর নেতাদের প্রলুব্ধ করে তাঁর দলে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কারণ, ডাকসুর নেতৃত্বে থাকা বামপন্থীদের ব্যাপারে তাঁর যৌক্তিক ভীতি ছিলো।

ডাকসুর ইতিহাস হচ্ছে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে ও জনগণের পক্ষে সংগ্রামের ইতিহাস। যে-ডাকসু স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেছিলো ১৯৭১ সালে, সে-ডাকসু স্বাধীনতার পর থেকে সকল স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধেও রুখে দাঁড়িয়েছিলো সেই ১৯৭৩ সালেও। ফলে, ডাকসুকে ভয় পাওয়ার কারণ ছিলো স্বৈরশাসক এরশাদের।

যদিও বর্তমানে এটি ভাবতেও হয়তো অসম্ভব মনে হতে পারে, কিন্তু এটিই ঐতিহাসিক সত্য যে, জাসদ-বাসদের ছাত্র সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগ (পরে যার একাংশ ছাত্রফ্রণ্ট নাম ধারণ করে) পর-পর তিনবার ডাকসুর নেতৃত্বে নির্বাচিত হয়। ১৯৭৯-৮০ শিক্ষাবর্ষে জাসদ ছাত্রলীগের মান্না-আখতার পরিষদ, ১৯৮০-৮১ শিক্ষাবর্ষে বাসদ ছাত্রলীগের মান্না-আখতার এবং ১৯৮১-৮২ শিক্ষা বাসদ ছাত্রলীগের আখতার-বাবলু পরিষদ ডাকসুতে বিপুল ভৌটে নির্বাচিত হয়।

ঐতিহাসিক কারণে বাসদ ছাত্রলীগের নেতৃত্বাধীন ডাকসুর ওপর দায়িত্ব পড়ে জেনারেল এরশাদের সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-আন্দোলন গড়ে তোলার। আমরা ডাকসু ও বাসদ ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে প্রথম দিন থেকেই প্রতিবাদ মিছিল করি।

এখানে উল্লেখ করা উচিত যে, ঐতিহ্যগত কারণে জাসদ ছাত্রলীগও শুরু থেকেই তাদের নিজেদের অবস্থান থেকে প্রতিবাদী ভূমিকা পালন করে। সত্য বলতে, জেনারেল এরশাদের বিরুদ্ধে ছাত্র-আন্দোলন গড়ে তোলে মূলতঃ জাসদ-বাসদ ও অন্যান্য বামপন্থী দলের ছাত্র-সংগঠন-সমূহ, যাদের মধ্যে সিপিবির ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নও ছিলো।

জেনারেল এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন গড়ে উঠলে তিনি ডাকসুর সদস্যদের প্রতি বার-বার নানা প্রলোভন দেখিয়ে তাঁর কাছে ডাকেন। আর, এই প্রক্রিয়ায় তিনি ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন বাবলু থেকে শুরু করে বেশ কয়েকজন নেতাকে তাঁর দলভুক্ত করতে সক্ষম হন।

আমাদের ডাকসুর যারাই এরশাদের ডাকে সাড়া দিয়েছেন, তাদের সবাইকে তিন মূল্য পরিশোধ করেছেন - কাউকে মন্ত্রীত্ব দিয়ে, কাউকে এমপিত্ব দিয়ে এবং কাউকে উপজেলার চেয়ারম্যানত্ব দিয়ে। কিন্তু, আমরা যারা তাঁর ডাকে সাড়া দিইনি, তারাই আপসহীন আন্দোলন চালিয়ে যাই। আর এ-আন্দোলনই নানা উত্থান-পতনে মধ্য দিয়ে স্বৈরশাসক এরশাদের পতন অনিবার্য করে তোলে, যা ১৯৯০ এর গণ-অভ্যূত্থানে আপাতঃ সাফল্য লাভ করে।

জেনারেল এরশাদ যে প্রথম থেকেই ডাকসুর নেতৃত্বকে প্রলুব্ধ করে কিনতে চেয়েছিলেন, তার সূচনা ঘটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাশাসনিক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নিমন্ত্রণপত্র পাঠানো মাধ্যেম। ১৯৮৩ সালের ২১শে অগাষ্ট আমাকে যে-নিমন্ত্রণপত্রটি পাঠানো হয় এবং আমি যা স্পর্ধার সাথে প্রত্যাখ্যান করেছিলাম, সেটির ছবি নীচে দিলাম।

আজ জেনারেল এরশাদের মৃত্যুতে সেই পুরনো স্পর্ধিত দিনগুলোর কথা স্বভাবতঃ স্মৃতি হয়ে উঠে এসেছে। আমি স্মরণ করছি আমাদের বন্ধু সেলিম, দেলোয়ার, বসুনিয়া, মিলন-সহ অনেক জানা-অজানা বন্ধু-সাথীদের, যারা একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে জীবন উৎসর্গ করেছেন।

কিন্তু হায়, গণতন্ত্র আজও সুদূর পরাহত! আজ প্রায় তিন দশক স্বৈরশাসক এরশাদ ক্ষমতায় নেই এবং এই মুহূর্তে তিনি আর পৃথিবীতেও নেই। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, বাংলাদেশে আর স্বৈরতন্ত্র নেই। স্বৈরশাসক এরশাদ নেই বটে, কিন্তু রেখে গিয়েছেন তাঁর স্মৃতি ও গতি। 

বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন, ২০১৯

পাকিস্তান প্রসঙ্গে দু চারটি কথা....

পাকিস্তান নিয়ে কিছু কথা বলা বেশ জরুরি মনে করছি। পাকিস্তানকে আমরা খুব ভালো করে চিনি। সম্ভবত আমাদের থেকে আরো কোনো দেশের পাকিস্তানকে ভালো চেনার কথা না। ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের রমরমা প্রায়শই দেখা যায়। কদাচিৎ যুদ্ধ লাগলেও বেশির ভাগ হুমকি ধামকি দু একটা লাশ ফেলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু আমাদের দেশের ত্রিশ লক্ষ মানুষকে এই পাকিস্তান দ্বিধাহীন ভাবে হত্যা করেছে। দু লক্ষ মা বোন ধর্ষণের স্বীকার হয়েছিল তৎকালীন পাকিস্তানের বর্বর সেনাবাহিনীর দ্বারা। সেই পাকিস্তানের মানুষগুলোর বর্তমান কিছু চরিত্রের সাথে আপনাদের সবাইকে আজ একটু পরিচয় করিয়ে দিবো। বিষয়টা বেশ আগ্রহ সহকারে করছি কারণ এই নতুন প্রজন্মেও পাকিস্তানী চরিত্রগুলো আমি নিজে অবলোকন করেছি।
প্রথমেই বলে নিচ্ছি “পাকিস্তানী” বলতে আমি পাকিস্তান রাষ্ট্রের চিন্তা চেতনায় গড়া মানুষগুলোকেই বুঝাচ্ছি। কিন্তু যেসকল বেলুচরা (বেলুচিস্তানের বাসিন্দা, যাদের বড় একটি অংশ আজো মনে করে তারা বেলুচ, তারা পাকিস্তানী নয়) এখনো তাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছেন, সিন্ধের যে সংগ্রামী জনতা এখনো পাকিস্তান কনসেপ্টের বিরোধিতা করছেন, এছাড়াও পাকিস্তানের সকল প্রগতিশীল মানুষজনকে এই “পাকিস্তানী” শব্দটির মধ্যে ফেলে আমি বিবেচনা করি না। কারণ তারা এই পাকিস্তানী কনসেপ্ট থেকে বের হওয়ার জন্য লড়াই সংগ্রাম করছেন।
ইউরোপে আসার পর আমি অনেক পাকিস্তানী দেখেছি। আমার ক্লাসে, আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে, আমাদের আশে পাশে সর্বত্র। বাঙালিদের মতো জীবিকার তাগিদে বৈধ অবৈধ নানা পথে পাকিস্তানীরাও ইউরোপের নানা দেশে পাড়ি জমিয়েছে। পাকিস্তানীদের আমার কখনো খুব একটা ভালো লাগতো না। কারণ একটাই- ১৯৭১। অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন বর্তমান প্রজন্ম তো সেই হত্যাযজ্ঞের সাথে ছিল না। তাদের কেন ঘৃণা করবো। কথা সত্য। কিন্তু আমি ভালো ভাবে অবলোকন করে দেখেছি সেই পাকিস্তানী চিন্তা বর্তমান প্রজন্মকেও বেশ সুন্দর ভাবে গ্রাস করেছে। ইউরোপে আসার পর আমি পাকিস্তানীদের ভালো মতন পর্যবেক্ষণ করা শুরু করি। আমার এত দিনকার ধারণা ভুল হলেও তো হতে পারে এই ভেবে। আমি দেখতাম তারা যখন কারো সাথে মিশে তারা বেশ ভালো মতন নিশ্চিত হয়ে নেয় যে যার সাথে তারা মিশছে সে মুসলিম কিনা। লোকটা মুসলিম হলেই যেন সব সমস্যার সমাধান। কখনো তারা এটা সরাসরি জিজ্ঞেস করে বসে, কখনো আবার একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে জিজ্ঞেস করে। বর্তমান যুগে একটা মানুষের সাথে প্রথম পরিচয়েই তার ধর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা একটা ইতর মার্কা প্রশ্ন এবং পাকিস্তানীরা এটা খুব দক্ষতার সাথে করে।
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশ তো শুধু পাকিস্তান নয়। আরো অসংখ্য আছে। যেমন- তুরস্ক, মরক্কো, ইরান, সিরিয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। এই চারটির বাইরেও অনেক মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ট দেশের মানুষকে আমি পর্যবেক্ষণ করেছি। তাদের সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা গল্প করলেও তারা ধর্ম নিয়ে টু শব্দটিও করে। একেবারে প্রথম পরিচয়ে এরকম ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন করাটা তারা অনেকটা অপমানজনক মনে করে। কিন্তু পাকিস্তানীদের মনে এ চুলকানি মারাত্মক। তারা যখন কোনো সিরিয়ান, তুর্কি অথবা আরবীয় ছেলের সাথে পরিচিত হয় বেশ উৎফুল্ল হয়ে তারা জবাব দেয়, “অহ! মুসলিম!”
আহ! কী যে মজা তার। তার আনন্দ এখন আর কে দেখে।
তাদের এরকম উন্মাদ সমান আচরণে অনেকে বেশ বিব্রত হয়। বিশেষ করে যাকে তারা এ প্রশ্নটি করে। পাকিস্তানীরা এরকম প্রশ্নের মাধ্যমে বলপূর্বক আরেকজনের মনে একটা উগ্র মুসলমানিত্ব জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করে। এগুলো এক প্রকার শয়তানি ছাড়া আর কিছুই না। একটি সমাজে এভাবেই কট্টোরপন্থা ছড়ায়। তুমি যখন মুসলমান পরিচয়ের কারণে আরেক মুসলমানের সাথে দু হাত শক্ত করে হ্যান্ডশেক করছো তার মানে এটা পরিষ্কার যে, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, ইহুদী এমনকি যারা কোনো ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না তাদের সাথে হ্যান্ডশেক করার সময় তোমার হাতটা দুর্বল হয়ে পড়ে। তোমার মাথার শয়তানগুলো তখন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। আর এই শয়তানি চিন্তাই যেকোনো ধর্মকে উগ্র থেকে উগ্রতর করে তোলে। পাকিস্তান তার একটা চাক্ষুষ প্রমাণ। ইসলামকে টেরোরিজমের সাথে মিলিয়ে দুনিয়া জুড়ে এখন যে ব্যাখ্যা দেয়া হয় এই সব চিন্তার পটভূমি তৈরি করেছে পাকিস্তান এবং তার প্রতিবেশি রাষ্ট্র আফগানিস্তান। আর পাকিস্তান রাষ্ট্রটি তারা শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে প্রতিটি কাঠামো এমনভাবে সাজিয়ে নিয়েছে যে এখান থেকে কেবল ১৯৭১ মার্কা উগ্রবাদই তৈরি হয়।
পাকিস্তান তার দেশে সকল প্রকার প্রগতিশীল চিন্তাকে বলপূর্বক দমন করে রাখে। সেখানে প্রতিদিন সংখ্যালঘু হিন্দু এবং খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষকে বলপূর্বক ধর্মান্তরিত করা হয়। তাদের অনেক ধর্মীয় নেতারা এই বলপূর্বক ধর্মান্তরকে বেশ ভালো মতন উৎসাহিতও করে থাকেন। যারা বর্তমান ইমরান খানের শাসন নিয়ে বেশ লাফালাফি করেন, তাদের সেই লাফালাফিকে আঙুল তুলে দেখিয়ে দেয় বিগত কয়েক মাসে সিন্ধু প্রদেশে ঘটে যাওয়া বলপূর্বক ধর্মান্তর এবং সংখ্যালঘু নির্যাতন।
অন্যদিকে ইউরোপে মানুষজন ধর্ম নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামায় না। বেশির ভাগ মানুষই এখানে ধর্ম বিমুখ। কিন্তু তাদের এই ধর্ম বিমুখতাকে তারা ব্যক্তিগত পর্যায়েই রাখে। এই মতবাদকে তারা খ্রিষ্টান, ইসলাম, হিন্দু, ইহুদী এরকম কারো উপর চাপিয়ে দেয়ার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করে না। আমি দেখেছি, রাস্তায় যখন শত শত মেয়ে ছোট ছোট জামা কাপড় পরে হাঁটে সেখানে কোনো মেয়ে বোরকা পরে হাঁটলে তাকে বেশ সহজে বোঝা যায় এবং খানিকটা বেখাপ্পা লাগে। কিন্তু এটা নিয়ে ইউরোপের লোকেদের কোনো কটুক্তি, কোনো অশালীন মন্তব্য করতে দেখিনি।
কিন্তু পাকিস্তানীরা কেন জানি এই ছোট ছোট কাপড় পরা মেয়েগুলোকেও তাদের পাকিস্তানের মত গৃহবন্দী করে রাখতে চায়। এই সুদূরে এসেও তারা বেশ সচেতনভাবে সেই স্বপ্ন দেখে। তাদের মতে, আজ হয়তো তারা এখানে ৪-৫% আছে। কিন্তু আরো কিছু বছর নাকি অপেক্ষা করতে হবে। তাহলে পুরো ইউরোপই মুসলমান হয়ে যাবে। তখন তারা পাকিস্তানের মত ইসলামী শাসন কায়েম করবে। এই চিন্তা আমি কেবল পাকিস্তানীদের মধ্যেই দেখেছি। আর কোনো দেশের মুসলমানেরা বিষয়টাকে এত উগ্রভাবে দেখে না। এমনকি এটা তারা কল্পনাও করে না যে পুরো ইউরোপকে তারা মুসলমান বানিয়ে ইউরোপের মেয়েদের বোরকা পরাবে।
কিন্তু দু:খের বিষয় এক জায়গাতেই। এখানে কিছু গায়ে পড়া স্বভাবের বাঙালি দেখা যায় যারা পাকিস্তানীদের সাথে মিশতে খুব স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। পাকিস্তানীরা যখন ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন করে তারা বেশ পুলকিত হয়ে জবাব দেয়। পাকিস্তানীরা যখন মুসলমান বলে পিঠে চাপড় দেয় তারা খুব আবেগপ্রবণ হয়ে যায়। তারা ধর্মের ভাইটিকে বুকে জড়িয়ে নেয়। তাদের অনেকে নাকি পাকিস্তানীদের সাথে এও গল্প করেন যে, ১৯৭১ সালের ঘটনাটা নাকি কেবল ভারতের একটা ষড়যন্ত্র ছিল মাত্র। যাতে দুই মুসলমান ভাই একে অপরকে ভুল বুঝে আলাদা থাকে এজন্য ভারত নাকি ষড়যন্ত্র করেছিল এখানে।
তাহলে আমাদের ৩০ লক্ষ শহীদ, ২ লক্ষ ইজ্জত সবই বৃথা! আমাদের এই ত্যাগকে পিষ্ট করে যে সকল বাঙালিরা পাকিস্তানের বুকে জড়িয়ে ক্রীতদাসের হাসি হাসেন তারা ব্যাপারে আমি আজ কিছু বলবো না। তাদের ব্যাপারে বাংলাদেশ বলবে।
কিন্তু সবশেষে এটাই বলবো যে, পাকিস্তানীদের কোনো পরিবর্তন হয় নি। পরিবর্তন হওয়াটাও তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ একটাই- এই পাকিস্তান চিন্তাটি কেবল ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত। রাষ্ট্র আর ধর্ম যখন মিলে মিশে একাকার হয়ে যায় তখন একটা দীর্ঘমেয়াদী বন্ধ্যাত্ব তৈরি হয়। যেটা বন্ধ্যাত্ব আজো পাকিস্তান পার করছে।