আপনার একটা ভাল ফোন আছে, এখন আপনার জন্য নিয়ে হাজির নতুন মডেলের আইফোন। একই ফিচার, সবই কাছাকাছি সুবিধা সম্বলিত, কিন্তু আপনার মনে হবে এই নতুন জিসিনটা আপনার চাই। আপনার বন্ধু ফোনটা কিনে ফেলেছে। এখন আপনি? মানটা গেল! বন্ধুর আইফোন সেভেন আমার টা কমদামী, হবেনা? আমার নতুন টা চাই। ব্যাস আপনি অজান্তে পুঁজির মার্কেটের ভাল কনজ্যুমার। আমাদের মনতত্ত্ব বাজার অর্থনীতি কিভাবে ম্যানুপুলেট করে সেটা আপনার চারদিকে একটু খেয়াল হলেই হবে।
সে আপনার জন্য বাহারি বিনোদনের সুযোগ করে দিবে। সে আপনার জন্য সাজেক বানাবে, কক্সবাজারে নয়নাভিরাম বিনোদনের আয়োজন করবে, আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন প্রচার করে আপনার আকাঙ্ক্ষাকে প্রসারিত করবে। ফলে আপনার চিন্তাকে কে নিয়ন্ত্রণ করে? বাজার। সেই বাজার নিয়ন্ত্রণ করে পুঁজির মালিকরা। সেখানে সবকিছু কৃত্রিম। প্রেম ভালবাসা ভোগ কাম নারী সবকিছু টাকার দরে হয়। আপনি ভোক্তা, তাই আপনার এসব চাই।
সামান্য বেতনের কর্মচারী। কিন্তু আপনাকে, আপনার পরিবারকে, সন্তানদের এই ভোক্তার প্রতিযোগীতায় ফেলে দেয়। ফলে সারাজীবন সেই গতরখাটা শ্রমিক ছাড়া আপনার উন্নতি নাই। জীবন এভাবে চলে যায়। ঈদ উৎসব পার্বনে আপনার জন্য বিভিন্ন বাহারি নামের পোশাক নিয়ে হাজির! এক একটার নাম আবার ভারতী সিরিয়ালের নামে। তো হয়ে যাক। সামান্য উৎপাদন খরছের পোশাকে আপনার কাছ থেকে হাকিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা। হ্যাঁ এটাই মার্কেট আর আপনি কনজ্যুমার।
এইতো ধরলাম পোশাকের কথা। এখন হাজির হবে বাহ্যিক সৌন্দর্যের নামে নানা ধরণের কসমেটিক, ক্রিম, লোশন, লিপিস্টিক, আই লাইনার কত কী? হিসাব নাই। আরও আছে বিউটি পার্লার, সাজগোছ না হলে আজকাল চলে না। এই অনুষ্ঠান, ঐ পার্টি, ঐদিন বার্থডে, আরেকদিন বিয়ের অনুষ্ঠান। তো চাই বাহারি সাজগোজ। এজন্য পাড়ায় পাড়ায় বিউটি পার্লার। এগুলো কিন্তু কোনটাই জীবন চলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু ক্যাপিটালিজম খাওয়াচ্ছে আপনাকে। না খেলে সে এসবের বাজার সৃষ্টি করবে কিভাবে?
কিন্তু উচ্চবৃত্তের কথা বাদ দিলাম। মধ্যবিত্ত বা নিম্নবৃত্ত শ্রমজীবী মানুষকে তার খেসারত দিতে হয়। শ্রমের আদিম জোয়াল তার কাধে ভর দিয়ে জীবন পার করতে হয়। ফলে সারাজীবন চলে যায় এই শ্রমদাসত্ত্বের শৃঙখলের মধ্যে। এই বিষয়টা অনেকের বোধ থাকে না। যেমন পরিবারের লোকজনের, সন্তানের এমনকি অন্যদের। ফলে এই কনজ্যুমারিটির ধাক্কায় আমাদের জীবন কী সুন্দরভাবে বয়ে চলে?
EmoticonEmoticon