রবিবার, ৬ আগস্ট, ২০১৭

কমিউনিজম, রাষ্ট্রব্যবস্থা ও সাম্প্রতিক বিশ্বায়ন !

মানব সভ্যতা বিকাশের প্রথম দিকে রাষ্ট্র বলতে কিছুই ছিল না। রাষ্ট্র গড়ে উঠেছে সমাজে ব্যক্তিগত মালিকানা, শ্রেণী বৈষম্য থেকে। সমাজে যখন সম্প্রত্তির মালিকানা তৈরি হয় তখন প্রয়োজন হয়ে পড়ে সেই ব্যক্তিগত মালিকানা এবং শোষণ নির্যাতন কে রক্ষা করার জন্য এমন প্রতিষ্ঠানের যা এসব কে রক্ষা করবে। এজন্য তার আইন কানুন বিধিবিধান এবং বাহিনীর প্রয়োজন হয়ে পড়ে। ফলে তার দরকার হয়ে পড়ে রাষ্ট্রের। ব্যাবিলন সম্রাট রাজা হাম্বুরাবী খ্রিষ্টপূর্ব ১৭৭৬ সালের দিকে এরকম লিখিত আইনে প্রথম বিধিবিধান জারি করেন। তিনি নিজেকে ঈশ্বরের প্রতিনিধি দাবি করেন এবং তার আইন কে ঈশ্বরের নিয়ম হিসেবে উপস্থাপন করেন। যা পাথরে খোদাই করা ছিল। সেখানেও অভিজাত এবং গরীব মানুষের জন্য আলাদা নিয়ম ছিল। যেমন সাধারণ ছাগল চুরির জন্য মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হত। এরপর ফারাও সাম্রাজ্য গ্রিসের নগররাষ্ট্র এগুলো রাষ্ট্রের প্রথম দিকের প্রতিষ্ঠান। সামন্তীয় সমাজে রাষ্ট্র বলতে সাম্রাজ্যকে বুঝানো হত। আইনকানুন ছিল রাজার ইচ্ছাধীন। আবার পুঁজিবাদের বিকাশের যুগে রাষ্ট্রের রূপ বদলে যায়। তখন তা জাতিরাষ্ট্র বা একাধিক জাতির সমন্বয়ে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ধারণার জন্ম দেয়। যদিও সব রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক নয় নিপীড়নমূলক। রাষ্ট্র এজন্য দরকার হয়ে পড়ে যখন সমাজে শ্রেণী বিভাজন দেখা দেয় সেখান থেকে ব্যক্তিগত মালিকানা রক্ষা করা, শোষণ নির্যাতন ঠিকিয়ে রাখা, অন্য রাষ্ট্রের আক্রমণ থেকে নিজেদের সম্পত্তির মালিকানা রক্ষা করা। এজন্য রাষ্ট্রের দরকার পড়ে বিভিন্ন বাহিনী এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থার। দরকার পড়ে শাসকের এবং শাসন কাঠামোর।

ফলে রাষ্ট্র কোন নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান নয়, হয়ে উঠার সম্ভাবনা নেই। সবচেয়ে বুর্জোয়া আধুনিক গণতান্ত্রিক দেশে পুঁজির শোষণ থাকে। ফলে আমরা যতই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কথা বলি না কেন পুঁজির শোষণ থেকে মুক্ত হওয়া ছাড়া গণতন্ত্র হতে পারে না। আবার আজকের সাম্রাজ্যবাদের যুগে ছোট ছোট দুর্বল রাষ্ট্রগুলো সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর অধীনস্ত বা নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। এজন্য আমাদের মত গরীব তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশ সাম্রাজ্যবাদের ক্রীড়নক ছাড়া স্বাধীন সার্বভৌম একটি রাষ্ট্র হতে পারে না। সামান্য চোখ বুলালে দেখবেন আমাদের রাষ্ট্রকে ভারত চীন আমেরিকা রাশিয়া জাপান এগুলো নানাভাবে রাজনৈতিক অর্থনৈতিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে আমরা না চাইলেও এখানে অনেক কিছুই ঘটে তাঁদের ইচ্ছায়। যেমন রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র এদেশের জনগণের বিশাল অংশের আপত্তি সত্তেও শুধুমাত্র ভারতের সুবিধার জন্য বর্তমান শাসকরা সেখানে থেকে সরে আসছে না। এরকম প্রায় সব ক্ষেত্রেই সাম্রাজ্যবাদী এবং তাঁদের প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংক আইএমএফ এডিবি এগুলো নানাভাবে হস্তক্ষেপ করে। ফলে সাম্রাজ্যবাদ এবং পুঁজির নিয়ন্ত্রণমুক্ত না হয়ে রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক হতে পারে না।

এজন্য যারা শুধুমাত্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কথা বলেন তারা কী পুঁজিবাদ নিয়ে অবস্থান পরিস্কার করেন? বাংলাদেশ আগামী কয়েক বছরে সাম্রাজ্যবাদী পুঁজির একটি কেন্দ্রে পরিণত হবে। এর দুইটি কারণ। এক সস্তায় শ্রমশক্তি, এবং দুই আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সহজলভ্যতা। ফলে লুটেরা অর্থনীতির বিকাশ একটা সময় পর্যন্ত এখানে হবে। কিন্তু এর মধ্য দিয়ে এখানকার জনগণের লাভ খুব একটা হবে না। একদিকে পরিবেশ বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটবে। আবার শোষণ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাবে। আবার রাষ্ট্র একটি ফ্যাসিবাদী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। এজন্য গণতান্ত্রিক অধিকারের লড়াই প্রয়োজন হয়ে পড়ে নিজেদের বিকাশের জন্য, সংগঠিত হওয়ার জন্য, আন্দোলন সংগ্রামের জন্য। কিন্তু এটা কোন চূড়ান্ত লক্ষ্য নয়। লক্ষ্য হতে হবে রাষ্ট্র ক্ষমতা একটি শ্রেণীর হাতে নেওয়া। সেই লক্ষ্যে শ্রমিক শ্রেণীর নিজস্ব সংগঠন তার বিকাশ এবং এর মধ্য দিয়ে সমাজের অন্যান্য কাছাকাছি শ্রেণী কৃষক, নিপীড়িত জাতিসত্ত্বা, সচেতন মধ্যবিত্তের অংশগ্রহণে শ্রেণীর রাজনীতি নির্মাণ করা।
ফলে শুধুমাত্র বুর্জোয়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা, নির্বাচিন ব্যবস্থার সংস্কার করা শ্রমিক শ্রেণীর লক্ষ্য হতে পারে না।

রাষ্ট্র একদিনে বিলুপ্ত হয়ে যাবে তা অলীক কল্পনা। রাষ্ট্র বিলুপ্ত হতে দুনিয়ার সব জায়গায় সমাজতন্ত্র কায়েম হতে হবে। তা বহুদূরের পথ। কিন্তু শ্রমিক শ্রেণী নিজেদের লক্ষ্য হতে হবে ক্ষমতা দখল করা এবং পুরাতন রাষ্ট্রকাঠামো ভেঙ্গে নতুন ধরণের প্রলেতারিয়েত রাষ্ট্র নির্মাণ করা যা আস্তে আস্তে ক্ষয়প্রাপ্ত হবে। এজন্য যে প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন দরকার তা করতে হবে। পার্লামেন্টারি ব্যবস্থা ভেঙে দিয়ে নতুন ধরণের শাসন কাঠামো নির্মাণ করতে হবে। পার্লামেন্টের বদলে আসবে আঞ্চলিক প্রতিনিধিমূলক ব্যবস্থা যা একটি কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক আয়োজনের মধ্যে নিয়ে আসা হবে। এই প্রতিনিধি সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হবেন এবং তাঁকে প্রত্যাহারে ক্ষমতা জনগণের হাতে থাকবে। বিদেশী রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক হবে সহযোগীতার। সেই ক্ষেত্রে নিজেদের সহযোগী রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক গড়ে নিতে হবে। বড় বড় সম্পত্তির মালিকানা জনগণের যৌথ সম্পত্তি হবে এবং আস্তে আস্তে ছোট ছোট মালিকদের মালিকানা সরে আসতে উৎসাহ সহযোগীতা, এবং বিকল্প আয়োজন করা হবে। রাষ্ট্রের পরজীবী শ্রেণী আমলা পুলিশ বিচারক মিলিটারি আস্তে আস্তে সীমিত করে আঞ্চলিক সালিশ কেন্দ্র, গ্রামীন আদালত সম্পূর্ণ জনগণের পক্ষ থেকে গড়ে তুলা হবে। অন্যদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য প্রত্যেক শ্রমিক যুবক ছাত্র তরুণদের বাধ্যতামূলক সামরিক ট্রেনিং প্রদান করা হবে। ফলে সামরিক বাহিনীর বিশাল বুঝা আস্তে আস্তে সীমিত করে আনা হবে। যদিয় এটি সংক্ষিপ্ত লেখা। অন্য কোথাও বড় পরিসরে বলার ইচ্ছা আছে।


EmoticonEmoticon