এক মাত্র মুসলিম সম্প্রদায়ই তাদের দেশে জন্মগ্রহণকারী মেধাবীদের মুসলিম দার্শনিক, বিজ্ঞানী ইত্যাদি ইত্যাদি হিসাবে পরিচয় করিয়ে দেয়। কখনও কেউ শোনেনি আইনস্টাইন এর নামের আগে কেউ ইহুদী ট্যাগ লাগিয়েছে, কিন্তু তথাকথিত মুসলিম দেশে জন্মগ্রহণকারী প্রতিভারা সবসময় মুসলিম ট্যাগে ট্যাগায়িত হন। আজ পাঠকদের একজন স্বনামধন্য মুসলিম মনিষীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিব। তিনি একাধারে জ্যোতির্বিদ, দার্শনিক, বিজ্ঞানী এবং কবি। ইরানের নিশাপুরে জন্মগ্রহণকারী এই মনিষীর নাম গিয়াস উদ্দিন আবুল ফাতেহ ওমর ইবনে ইব্রাহিম আর খৈয়াম। বীজগণিতের ত্রিঘাত সসমীকরণ এর সমাধান, দ্বিপদী উপপপাদ্য তার আবিষ্কার। এই মুসলিম মনীষীরজীবন দর্শন খুজে পাওয়া যায় তার রুবাই গুলোতে, যা রুবাইয়াৎ ই ওমর খৈয়াম নামে সারা বিশ্বে সমাদৃত। যেখানে তিনি খোদার কাছে প্রশ্ন করেছেন
" স্বর্গে পাব শরাব সুধা এ যে কড়ার খোদ খোদার
ধরায় তাহা পান করলে পাপ হয়, এ কোন বিচার?"
সৃস্টি ব্যখ্যার ফাঁকি বাজিকে ব্যঙ্গ্য করতেও ছারেন নি
" দয়ার তরেই দয়া যদি করুণাময় স্রষ্টা হন
আদমমেরে স্বর্গ হতে দিলেন কেন নির্বাসন
পাপীর তরে করুণা যে- করুনাই সে সত্যিকার
ওরে আবার প্রসাদ কে কয়, পূণ্য করে যা অর্জন"
পবিত্র মাস নিয়ে ব্যাঙ্গ করে তিনি বলেছেন
" রজব শাবান পবিত্র মাস, বলে গোড়া মুসলমান
সাবধান, এই দুই মাস ভাই কেউ করোনা শরাব পান,
খোদা এবং তার রাসূলের রজব শাবান এই দুই মাস
পান পিয়াসীর তরে, তবে সৃষ্ট বুঝি এ রমজান?"
তথাকথিত ধর্মীয় নিয়মকানুন কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এই মুসলিম দার্শনিক বলেছেন-
" এক পেয়ালি শারাব যদি পান কর ভাই অন্যদিন
দু' পেয়ালা পান কর আজ বারের বাদশাহ জুম্মাবার"
ওমর প্রশ্ন করেছেন সমস্ত কিছু যখন খোদার জানা, তবে পাপী কেন পাপের বোঝা নিবে?
স্বর্গ নরকের অস্তিত্ব নিয়েও ওমর ব্যাঙ্গ করতে ছাড়েন নি। খোদার শাস্তি আর দাসত্বকে ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন ওমর। ওমরের প্রশ্ন মিথ্যা জুজুর ভয়ের ভীত কাপিয়ে দেয়। ওমর এক মানবিক পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেছেন, যে পৃথিবী প্রেমময়-
" এক হৃদয়ের সমান নহে লক্ষ মসজিদ আর কাবা
কি হবে তোর তীর্থ কাবার, শান্তি খোজ হৃদয় তলে"
তিনি ধর্মহীন মানবিকতার পথে আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন-
" দরিদ্ররে যদি তুমি প্রাপ্য তাহার অংশ দাও, কারুর প্রাণে না দাও ব্যাথা
ক্ষতি কারুর নাহি চাও, তখন তুমি শাস্ত্র মেনে না ই বা চললে তায় বা কী
আমি তোমায় স্বর্গ দিব, আপাতত শরাব নাও।"
এই ছিল খৈয়ামের দর্শন। রুবাইয়াৎ এর কবি আজ মুসলিম মনীষী। মুসলিমগণ হিপোক্রেসির চুড়ান্ত সীমায় গিয়ে তেড়েফুঁড়ে সমূদ্র থেকে বারী বিন্দু তুলে আনার মত করে মুসলিম মনিষী খুজে বের করেন, তাদের ক'জন ইসলাম বিশ্বাস করতেন সে এক বিরাট প্রশ্ন।বাউল লালন সাই এদের খপ্পরে পড়ে হয়ে যায়, হজরত লালন শাহ। সেদিন হয়ত বেশি দূরে নেই যেদিন হুমায়ুন আজাদ হবেন মুসলিম ভাষাবিজ্ঞানী কিংবা মুসলিম মহীয়সী নারী হিসেবে তসলিমা নাসরিনের নাম শুনব। মুমিনের দেশে রোকেয়া রচনাবলীর খতনা দিয়ে তাকে মুসলিম বানানো হয়েছে কিন্তু। এ যেনো ঐতিহাসিক এক ভন্ডামী!
শেষে তাঁর একটা লাইন যুক্ত করতে লোভ হচ্ছে...
"Be happy for this moment"
EmoticonEmoticon