বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

আন্ডারগ্রাউন্ড নামের একটা উপন্যাস পড়েছিলাম।

কিছুদিন আগে গাজী তানজিয়ার "আন্ডারগ্রাউন্ড" নামের একটা উপন্যাস পড়েছিলাম। বইটার উপর একটা রিভিউ লিখবো ভেবেছিলাম কিন্তু লেখা হয় নি। তবে তার উপন্যাসটি পড়ে "উৎস পাবলিশার্স" এর প্রকাশক নুরে আলম ভাই তাকে যে চিঠি পাঠিয়েছে সেটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। এই লেখার পরে আমার আর নতুন করে বলার কিছু নাই। লেখাটি হচ্ছে-
সুহৃদ,
গাজী তানজিয়া,
আপনার লেখা আন্ডারগ্রাউন্ড বইটি পড়লাম। আমাদের দেশে এ জাতীয় সাহিত্য দুর্লভ। অথচ এর পাঠক সংখ্যা বেশী। এখানকার বুদ্ধিজীবীরা যখন স্রোতে ভাসছে আপনি তখন উজানে নাও বাইলেন। স্রোতের বিপরীত অবস্থানের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
বইটি চমৎকার একটি প্রগতিশীল উপন্যাস। এ জন্য আপনাকে শ্রম, মেধা, সময় ব্যয় করতে হয়েছে বলে অনুমেয়। কিন্ত নারীকে আপনি গতানুগতিক ধারায় বর্ণনা করেছেন। এখানে নারীরা শস্ত্রপানি নয়। নারী ডাক্তার, নার্স অথবা নৌকার মাঝী। অর্থাৎ যুদ্ধের সহযোগী। সরাসরি যোদ্ধা নন।
আমি ব্যক্তিগতভাবে “সিরাজ সিকদারের রচনা সংগ্রহ” পড়েছি। ঢাকার একাধিক প্রকাশনা সংস্থা বইটি ইতমধ্যে ছাপিয়েছে। সেখানে নারীকে শহীদ হিসেবে, যোদ্ধা হিসেবে পাই।
যা হোক, আপনার উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। যেহেতু আপনি লিখছেন। সে কারনে কিছু কথা আপনাকে বলার তাগিদ বোধ করছি।
’৭১-এর মুক্তি সংগ্রামের একক নেতৃত্বের দাবীদার ‘বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ’। কিন্তু আমরা ইতিহাস থেকে অন্যকিছু বিষয় জানতে পাই। ইতিহাসের অন্য পিঠ-টা কী?
স্বাধীন বাংলার প্রথম পতাকা (মানচিত্রসহ) তৈরি করেছিলেন সিরাজ সিকদার।
’৭১ এর জুন মাসে পেয়ারাবাগানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে সম্মুখ সমরে সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বে আটজন পাকসেনা নিহত। এবং বিপুল সংখ্যক আত্মসমর্পন করেছিলো। এরপরই চরমোনাই পীরের নেতৃত্বে মাদ্রাসা ছাত্ররা পেয়ারাবাগানের পেয়ারা গাছ কেঁটে পরিস্কার করা শুরু করলো। ভীমরুল, আটঘর, কুড়িয়ানা প্রায় গাছ শূন্য হলো।
বৃহত্তর বরিশাল, ফরিদপুর, পাবনা, টাঙ্গাইলসহ বিস্তৃর্ণ এলাকায় আত্মনির্ভরশীলতার ভিত্তিতে পাকসেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন তিনি।
সন্ধ্যা নদী দিয়ে জাহাজযোগে পাকবাহিনীর জন্য চাল নিয়ে যাচ্ছিল মীরেরহাট থেকে বরিশাল। সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বে সে চাল বন্টন করা হলো সাধারন জনগনের মাঝে।
আমরা নানা পুস্তকে এও পাই আওয়ামী লীগের “দেশপ্রেমিক” একাংশের সাথে ফ্রন্ট করে প্রথমদিকে যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন তিনি। কিন্তু তাদের বিশ্বাসঘাতকতায় বর্ষা মৌসুমে যখন ভারতীয় ট্রেনিংপ্রাপ্তরা আসতে শুরু করলো-“র”- এর প্রেসক্রিপশনে স্যাবোটাজ শুরু করলো আওয়ামীলীগ। যেমনঃ বাবুগঞ্জ থানা যৌথ আক্রমনে কুদ্দুসমোল্লা পিছন থেকে গেরিলাদের উপর আক্রমণ করলো। কালকিনিতে সিরাজ সর্দারসহ তিনজনকে হত্যা করলো। টাঙ্গাইলে বঙ্গপুত্র বাঘা কর্তৃক নজরুলকে আলোচনার কথা বলে হত্যা করলো। ভারতের উত্তরপ্রদেশ থেকে আর্ন্তজাতিক ভাবমানস নিয়ে আসা শামিউল্লাহ আজমীকে হত্যা করলো ঢাকার সাভারে।
ঝালকাঠি শহরের পালবাড়িতে আমরা সিরাজ সিকদারের যুদ্ধ ক্যাম্পের ইতিহাস জানতে পাই ’৭১- এর ঝালকাঠি বইতে।
২নং ফ্রন্টের প্রধান ঘাঁটি হোসনাবাদে মুক্তিবাহিনীর সাথে সিরাজ সিকদারের পার্টির ব্যাপক যুদ্ধের খবর আমরা পাই তাঁর রচনায়। এখানে নেতৃস্থানীয় কর্মী শাহীন আলম বোমা বানাতে গিয়ে শহীদ হন।
যুদ্ধ চলাকালীন “নকশাল” নিধনের এমন কর্মসূচী থেকে 10,000 বি এল এফ গঠনের খবর আমরা জানি। দিল্লীতে ভাসানীকে বন্দী করার ইতিহাসও গোপন নয়।
আমরা এও জানি ’৭৪ এ সংসদে “লাল ঘোড়া” দাবড়ানোর হুমকি। এবং ’৭৫ এ “মহান মুজিববাদী সমাজতন্ত্রের” সমাজতন্ত্রী নায়ক কর্তৃক বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ সিকদারকে হত্যা করে তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধের নাটক বানানোর ইতিহাস।
আসুন, যারা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন তেমন রাজনৈতিক সংগঠকরা ভারতে আলীসান হোটেল নিয়ে, অফিস নিয়ে সেদিন কী করেছিলেন! আমরা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সে ইতিহাস লিপিবদ্ধ করি।
এ দেশেও আজ যারা জাতির “শ্রেষ্ঠ সন্তান” হিসেবে খ্যাত তারা সংখ্যালঘুদের ‘সম্পদ, সম্পত্তি, নারী জোর করে কিভাবে নিজ দখলে এনেছেন। রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন সে কাহিনী পরবর্তী বংশধরদের জন্য রেখে যাই।
৯ নং ফ্রন্টের সামরিক নেতৃত্ব মেজর জলিল ভারতে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলে সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বে একটি বাহিনী ইউনিট তাকে হাসনাবাদ (টার্কি) ক্যাম্পের দিকে নৌকাযোগে এগিয়ে দিয়ে এসেছিলেন।
এ সবই খন্ড খন্ড। আপনার লেখনিতে এমন ইতিহাস উঠে আসতে পারে। যা আগামীতে সত্যিকার ইতিহাস যারা জানতে চেষ্টা করবে তাদের জন্য ‘অবশ্য পাঠ্য” হিসেবে বিবেচিত হবে।
আমাদের প্রকাশনা “উৎস পাবলিশার্স” এমন বিষয়ের উপর প্রকাশনা করতে আগ্রহী।
লেখক হিসেবে আপনার সদয় বিবেচনা আমাদের ঐক্যমতে পৌছতে সহযোগীতা করবে।
ধন্যবাদান্তে -
নুর আলম সিদ্দিক
প্রকাশক
উৎস পাবলিশার্স।


EmoticonEmoticon