তিরিশ বছর আগে গনি মিয়া নামে একজন কৃষক বাস করতেন, ময়মনসিংহের ধোবাউড়া গ্রামে।
তিনি দরিদ্র ছিলেন। ছিলেন অত্যন্ত ধর্মভীরু। নিয়মিত বাধ্যতামূলক প্রার্থনা করতেন। ছিলেন আল্লাহর প্রতি প্রবল বিশ্বাসী। ছিলেন একান্ত অনুগত।
সেবছর বন্যা এবং খরায় ফসল উৎপাদন একেবারেই কমে গেল। শত প্রার্থনায়ও যথাসময়ে বৃষ্টি নামেনি। গনি মিয়া শংকিত হয়ে ওঠলেন। সামনের দিনগুলোতে তিনি এবং তার পরিবার কী খেয়ে জীবন ধারণ করবেন সে চিন্তায় ভীষণ দুঃচিন্তাগ্রস্ত হয়ে গেলেন। কারণ সামান্য জমিই ছিল তার আয়ের একমাত্র উৎস।
বিশ্বাসী গনিমিয়া একটা চমৎকার বুদ্ধি বের করলেন। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন দয়াময় আল্লাহকে তার কষ্টের কথা জানিয়ে একটা চিঠি লিখবেন।
লিখলেন তিনি। ঠিকানা দিলেন নিজের। প্রাপকের ঠিকানা লিখলেন :
আল্লাহ
আরশ
সপ্ত আসমান।
পোস্ট করলেন আল্লাহর কাছে তার আবেদন পত্র।
পোস্ট মাস্টার সেই চিঠি সিল মেরে পৌঁছে দিলেন ডাকপিয়নের কাছে। পিয়ন প্রাপকের নাম 'আল্লাহ ' দেখে পড়লেন মহা মুশকিলে। এই চিঠি তিনি কীভাবে, কার কাছে পৌঁছাবেন?
পিয়ন অবশেষে চিঠিটি খুলে দেখার আগ্রহ বোধ করলেন। এবং খুলে পড়লেন। লেখা ছিল :
হে আল্লাহ,
পরম করুণাময়, রাহমানের রাহিম
আপনি সবই জানেন। এবারের বন্যা এবং খরায় আমার সমস্ত ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। আপনি যদি খাদ্য কেনার জন্য কমপক্ষে দশ হাজার টাকা পাঠান তবে এ বছরটা কোনমতে কাটাতে পারি।
আপনি অবশ্যই গরীবের প্রতি দয়ার দৃষ্টিতে তাকাবেন। সে বিশ্বাস আমি রাখি।
ইতি আপনার একান্ত অনুগত বান্দা
গনি মিয়া
চিঠি পড়ে পিয়ন বেচারার চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি পড়তে লাগল।গনি মিয়ার বিশ্বাসের গভীরতা এবং ঈমানের জোর তাকে প্রচন্ড আবেগাপ্লুত করে ফেলল।
পিয়ন সিদ্ধান্ত নিলেন গনি মিয়ার বিশ্বাস তিনি নষ্ট হতে দেবেন না। আল্লাহর প্রতি এই ঈমানের মর্যাদা রাখবেন তিনি।
অনেক কষ্টেসৃষ্টে তিনি পাঁচ হাজার টাকা যোগাড় করলেন। পুরো দশ হাজার সংগ্রহ করতে পারলেন না। গরিব পিয়ন অবশেষে গনি মিয়ার নামে একটি মানি অর্ডার করলেন।প্রেরক হিসেবে দিলেন আল্লাহর নাম। এবং তিনি গনি মিয়ার বাসা খুঁজে নিজেই পৌঁছে দিলেন তার নিজের বহুকষ্টে জমানো পাঁচ হাজার টাকা।
এদিকে টাকা পেয়ে গনি মিয়া আল্লাহর কাছে দুহাত তুলে বারবার শুকরিয়া আদায় করলেন।আর পিয়ন সাহেব গনি মিয়ার বিশ্বাস দেখে শ্রদ্ধায় ভালবাসায় চোখের পানি ফেললেন আনন্দ চিত্তে।
কদিন পর পিওন আল্লাহর কাছে লেখা গনি মিয়ার আরো একটি চিঠি পেলেন। তিনি আবারো আগ্রহের সঙ্গে চিঠি খুললেন এবং পড়লেন :
হে আল্লাহ,
পরম করুণাময়, রাহমানুর রাহিম
আপনার পাঠানো টাকা পেয়েছি। সেজন্য আপনার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা।
কিন্তু আমি তো চেয়েছিলাম দশ হাজার টাকা! আপনার নিশ্চয়ই টাকার অভাব নেই। আপনি নিশ্চয়ই দশ হাজারই পাঠিয়েছিলেন। নিশ্চয়ই বাকি পাঁচ হাজার টাকা ঐ পিয়ন বেটা মেরে দিয়েছে। এই সব বেনামাজী লোকদের একদম বিশ্বাস নেই। আপনি আবার টাকা পাঠালে এই ঠকবাজ, চোর পিয়নকে দিয়ে পাঠাবেন না, কিছুতেই। এরা খুব খারাপ মানুষ।
আপনার রহমতে আমি ভালো আছি।
ইতি
আপনার বিশ্বস্ত বান্দা
গনি মিয়া
EmoticonEmoticon