শুক্রবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

একটি মহল প্রচার চালাচ্ছে রোহিঙ্গাদের...

একটি মহল প্রচার চালাচ্ছে রোহিঙ্গাদের পরিকল্পিতভাবে নাকি এদেশে পাঠানো হচ্ছে যারা ভবিষ্যতে এরা চট্টগ্রাম অঞ্চল নিয়ে আলাদা দেশ গঠন করার পরিকল্পনা করছে। এর পরিকল্পনা আর পান্ড দিচ্ছে পাকিস্তান আর সৌদিআরব। এর বাস্তবায়ন করবে 'আরসা'(রোহিঙ্গা সলিডারিটি আর্মি)। এই বক্তব্য কতটুকু সমর্থনযোগ্য এর কোন বাস্তবতা আছে? রোহিঙ্গা একটি নিপীড়িত জাতি যারা দশকের পর দশক রাজনৈতিক সামাজিক এবং নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। যাদের জীবনযাত্রাকে সীমিত করে খুবই নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করতে হত। বছরের পর বছর রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে এরা উদবাস্তুর মত বিভিন্ন দেশে পালিয়ে গিয়ে জীবন রক্ষা করেছিল। শুধুমাত্র প্রাণ বাঁচানোর তাগিদেই এরা অন্যদেশে তাড়া খেয়ে পালিয়ে আসছে। এটি একটি মানবিক সংকট। এর পিছনে রোহিঙ্গাদের কোন উদ্দেশ্য নাই যে নিজ বসত ভূমি ছেড়ে অন্যদেশে গিয়ে সেই দেশের সামরিক ট্রেনিংপ্রাপ্ত বাহিনী এবং বিশাল জনগোষ্ঠীর সাথে যুদ্ধজয় করে সেখানে নিজ রাজ্য প্রতিষ্ঠা করবে। বরং তাঁরা চায় নিজ ভূমিতে তাঁদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হোক। এর বাইরে বাংলাদেশের একটি এলাকা রোহিঙ্গারা দখল করবে এটি একটি আজগুবি ধারণা। এর কোন বস্তুগত ভিত্তি নেই। এইরকম একটি গোষ্ঠী যারা শিক্ষাদীক্ষা থেকে বঞ্চিত, যাদের কোন অর্থনৈতিক সামর্থ্য নেই, আসহায় নিরুপায় একটি জাতি নাকি অন্যদেশ দখলের চক্রান্ত করছে এটা কী বাস্তব?

এখন আসি আরসার বিষয়ে যারা ২০১২ সালের পরে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য স্বশস্ত্র গেরিলা কর্মসূচী শুরু করে। এদের সংযোগ থাকতে পারে অন্যদেশের ইসলামী মিলিটারি গ্রুপগুলোর সাথে যদিও তাঁরা এটা অস্বীকার করছে যে তাঁদের কোন সংযোগ নাই আইএস কিংবা অন্য কোন সংগঠনের সাথে। বরং তাঁরা দাবি করছে তাঁদের লড়াই জাতীয়তাবাদী এবং তাঁরা নিজেদের রাজনৈতিক অধিকার চায়। এখন যদি এইরকম সংগঠন যারা নিজেদের রাজনৈতিক অধিকারের লড়াই করে এবং মতাদর্শ হিসেবে ইসলাম কে বেছে নেয় সেই মতাদর্শকে যদিও সমর্থন করি না তবে তাঁদের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইকে সমর্থন জানাই যদি তা রাষ্ট্র শক্তির বিরোদ্ধে হয়। তবে যদি তাঁরা অন্য ধর্ম বা জাতির সাধারণ মানুষকে অত্যাচার নির্যাতন করে তবে সেই কাজকে সমর্থন করি না এবং এভাবে বিজয় সম্ভব নয়। কিন্তু একটি নিপীড়িত জাতিসত্তা যদি তার অধিকারের লড়াই করে এর জন্য গেরিলা যুদ্ধ গড়ে তুলে এটাকে আমি সন্ত্রাসী কর্ম বলতে পারি না। এর প্রতি অবশ্যই নৈতিক সমর্থন জানাই।

এখন বাংলাদেশে যে রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসছে তাঁদেরকে প্রথমে দরকার একটি ভাল ব্যবস্থাপনা। যেখানে সেখানে অবাধে বসতি গড়ার বদলে একাধিক নির্দিষ্ট জায়গায় সরকারী ব্যবস্থাণায় নিবন্ধিত করে বসবাসের জায়গা দিতে হবে। যেখানে সেখানে পাহাড় কেটে বাস করা জীবনের জন্য ক্ষতিকর হবে। বরং একই স্থানে না রেখে বিভিন্ন জায়গায় সরকারী উদ্দ্যোগে এই কাজ করতে হবে যাতে সাধারণ মানুষের চলাচলে বুঝা না হয়ে দাঁড়ায়। অন্যদিকে পাহাড়ে অবাধে বসতি গড়ে উঠলে সংঘাতের সম্ভাবনা আছে। সেইগুলো বিবেচনা করে শুধুমাত্র কক্সবাজার বা পার্বত্য চট্টগ্রামে না রেখে দেশের অন্য এলাকায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রশাসনের উপর চাপ রাখতে হবে কেউ দুর্নীতি খাটিয়ে যাতে ভোটার আইডিকার্ড বানাতে না পারে। নির্দিষ্ট ক্যাম্পে যাতে বসবাস করে এবং তাঁদের কার্যকমের উপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি রাখতে হবে যাতে বিভিন্ন ধরণের ক্রাইমে যাতে জড়িত না হয়। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, ইয়াবা ব্যবসা বা অন্য কোন ক্রাইমে যাতে জড়িত না হয় সেই নজরদারি করতে হবে প্রশাসনকে। এখন যদি ঘুষখোর পুলিশ টাকা খেয়ে অপরাধ করতে দেয় এর দায় কি রোহিঙ্গাদের? ফলে প্রসাশনিক শৃঙখলা গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে যাতে বিভিন্ন দেশ এবং সংস্থা মিয়ানমারকে চাপ দেয় রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে তাঁদের নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দিক।

আরেকটি জায়গায় দেখলাম বিয়ে পাগল একটি গ্রুপ রোহিঙ্গা মেয়েদের বিয়ে করার জন্য অস্তির। এই ধরণের পুরুষের মগজে শুধু নারী এবং যৌনতা খিলবিল করে। এরা আপাদমস্তক কাম আসক্ত। এদেরকে প্রতিহত করা জরুরী। এই ধরণের বদজাত পুরুষের জন্য দেশের ধর্ষণের হার অধিক। অন্যদিকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের জন্য এদেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন কোনভাবে দায়ী নয়। বরং বিভিন্ন বৌদ্ধ সংগঠন মিয়ানমার সরকারের এই ভূমিকার নিন্দা করে সমাবেশ করেছে। অনেকেই টেকনাফে রোহিঙ্গাদের ফলমূল খাবার বিতরণ করেছেন। এজন্য যে কোন ধরণের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও প্রচারণার বিরোদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। এদেশে বসবাসরত কোন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উপর হামলা এবং নিপীড়ন কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই বিষয়ে যেমন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সজাগ থাকা জরুরী তেমনি জনগণকে সজাগ থাকতে হবে। নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা বানোয়াট অপপ্রচার থেকে বিরত থাকুন। কোনভাবেই এদেকে সন্ত্রাসী অপরাধী হিসেবে দেখা যাবে না। এইসব অপপ্রচারে বিরোদ্ধে সচতন মহল সোচ্চার হবেন আশা করি।


EmoticonEmoticon