ব্যক্তি রাজ্জাকের প্রতি কোনোরকম অসৌজন্য থেকে বলা নয়। যে কোনো মৃত্যুই আমাকে ভাবায় তা অল্প সময়ের জন্যে হলেও। রাজ্জাক মোটামুটি একটি পূর্ণ জীবন যাপন করে গেছেন। ধর্মাচারের সাথে তার পেশার বিবেচনা করলে তা স্ববিরোধী বা ধর্মবিরোধী বলা যায়। এ দেশের আবহে এখন যে কোনো পেশার সাথেই ইসলাম ধর্ম খুব চলে কিন্তু ইসলাম ধর্মের সাথে যে কোনো পেশা আসলে চলে না। মডারেট ধারণার উছিলায় কিছু পেশাকে ইসলামের সাথে যতোই সেধিয়ে মিশিয়ে দেয়ার জন্যে ইতিহাস বা প্রেক্ষিত যাই আনা হোক না কেনো ইসলামের সাথে কিছু পেশা অবশ্যই যায় না। কন্ঠশিল্পী, চিত্রশিল্পী, অভিনয় শিল্পী এরা আছেন সে ধরণের মধ্যে। যা হোক, নায়ক রাজ্জাকের জান্নাত নির্ধারণ করার মালিক আমি বা আমরা কেউ নই। কথায় কথায় ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাওয়া ধর্মগ্রন্থর অলৌকিক ক্ষমমতার অধিকারী মহান, দয়ালু এবং ক্ষমাশীল।
কিশোরী বয়সে রাজ্জাকের ছবি দেখে ভাবতাম সকল মেয়ে কেনো রাজ্জাককে বিয়ে করতে চায় না। পরে বুঝেছি বিয়ে করতে চাক বা না চাক অনেক মেয়েই রাজ্জাকের রুপের বুলডোজারে ভাঙ্গচুর হয়েছে। কৈশোর শেষে রীতিমতো কামনা করেছি রাজ্জাকের মতো এক রুপবান পুরুষ যেনো পাই। আফসোস রুপবান পুরুষ দূর থেকে শুধু দেখেই গেলাম হাতের কাছে পেলাম না।
আমাদের সমাজে মেয়েদের পুরুষের রুপ দেখে পাগল হলেও তা প্রকাশ করা বারণ আছে অলিখিতভাবেই। প্রকাশ করলেই আপদ। নয় ক্লাসে পড়তে সময় রুপবান এক ছেলেকে বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলে আমার হাত থেকে খাবারের পাত্রটি পড়ে গিয়েছিলো, এটি কাজিনদের বলার পর লজ্জার পর লজ্জার অহেতুক আবরণে ঢেকে গিয়েছিলাম।
সকল পুরুষ বুড়ো হলে অসুন্দর হয়ে যায় না বরং কেউ কেউ সুন্দর হয়। আমার কাছে যুবক অমিতাভ বচ্চনের চে পৌঢ় বা বুড়ো অমিতাভ বেশি আকর্ষণীয়। আমার ফ্রেন্ডলিস্টে একজন পুরুষ আছেন যিনি দিনকে দিন কেবল সোন্দরই হচ্ছেন। আমি তাকে দেখে বিমোহিত। চেহারা মানুষের কাজ এবং জীবনের উচ্চতা বা নিম্নতা পরিমাপের মাপকাঠি নয়। চেহারা কোনো অর্জন নয় যা নিয়ে মানুষের সমালোচনা করা যায়। তবে অভিনয় জগতে চেহারা একটা অন্যতম উপাদান। সে বিবেচনায় রাজ্জাক নারীদের চিত্ত আকর্ষণ করার ক্ষমতা রাখতো। মরে যাওয়া মানুষটির চেহারা বুড়োকালে কেমন হয়েছিলো এ বক্তব্যের পর থেকে অনেক অনেক সমালোচনায় মুখর হয়েছেন তসলিমা নাসরিন। মানুষকে বুড়ো বা বুড়ি বলতে ইচ্ছে হয় না আমার। শব্দদুটি খুব তাচ্ছিল্য ঠেকে। মানুষ আসলে বুড়ো বা বুড়ি হতে চায় না, হয়ে যায়। তবু বোঝানোর প্রয়োজনে শব্দ দুটি বলতে হয়। তসলিমা নাসরিন রাজ্জাককে নিয়ে লিখে আপদেই পড়েছেন মনে হয়। এতোটা দীর্ঘ সময় পুরুষতন্ত্র নামক সন্ত্রাসের কবলে নিজেকে জখম করেও দিদি এটা বুঝলেন না যে পুরুষ মাত্রই সুন্দর? পুরুষ কখনো বুড়ো হয় না, পুরুষ চিরকাল যুবক, চিরকাল সুন্দর, তার ক্ষমতাই তার সৌন্দর্য্য, তার পুরুষ হয়ে জন্ম নেয়াটাই এক ভয়াবহ সৌন্দর্য্য! রাজ্জাক জীবিত থাকলেও এমন বুড়ো এবং সৌন্দর্য্যহীনতা নিয়ে লিখলে তিনি এমনই সমালোচনার মুখে পড়তেন এবং নারী হয়ে বলছেন বলেই এই সমালোচনাটি হতো। একই বক্তব্য কোনো পুরুষ দিলে অন্য পুরুষরা সেখানে গিয়ে মামা জোশ জোশ বলে বিগলিত হয়ে যেতো বলে ধারণা করি। খুব কৌশলেই রাজ্জাকের বুড়ো বয়সের অসৌন্দর্য্য নিয়ে বলা বাক্যটা আলোচনার বাইরে থাকতো। নারীর চুল, নখ কিছুই বাদ যায় না পুরুষের বিবৃতি থেকে সেখানে নারী হয়ে পুরুষের অসৌন্দর্য্য আর বয়স নিয়ে কথা বলা ধৃষ্টতা বৈকি!
কিছুদিন আগে কী ভীষণ কুৎসিত ভাষায় নারীদের চেহারা, বয়স, রুপ নিয়ে কটাক্ষ করতে দেখেছি কতক ইতর পুরুষকে, আজ যারা রাজ্জাকের বয়স এবং রুপ প্রসঙ্গে তসলিমা নাসরিনের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন তাদের কারোকে তখন সরব হতে দেখেনি ইতর পুরুষদের বিপক্ষে বরং তারা জায়গায় জায়গায় পুরুষইতরীয় হাসি হেসেছে। এই হলো আমাদের মানসিকতা, লিঙ্গভেদে একই বিষয় নিয়ে আমরা যাতি (যাতনা করা) অথবা বিনোদন লাভ করি।
ইনবক্সে এক ছোট ভাই একটা লেখা পাঠালো। পড়তে গিয়ে কেবল হেসেছিই। মুসলিম পরিবারে জন্মে একটি মেয়ে ধর্মবিশ্বাসী হয়ে কীভাবে নারীবাদী হয় আমার মাথায় ঢুকে না। আললা আর তার রাসুল নারীকে মানুষ হিসেবে তো স্বীকারই করেনি। ভোগপণ্য শস্যক্ষেত্ররা কী করে নারীবাদী হবার অবকাশ পায়? এটি ধর্মদ্রোহীতা নয়? এসব ধর্মদ্রোহীরা কি সুবিধেবাদী, জেগে ঘুমায় নাকি কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানায়?
আচ্ছা ইমলাম ধর্ম মেনে সাজগোজ করে ছবি তুলে তা পরপুরুষের সামনে তুলে ধরলে ইসলাম তা সমর্থন করে কি?
EmoticonEmoticon