বৃহস্পতিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

একেশ্বরবাদ, ছদ্মবেশী নাস্তিকতা ও নবী মুহাম্মদ (সঃ) ।

একেশ্বরবাদ, ছদ্মবেশী নাস্তিকতা ও হযরত মুহাম্মদ

আমরা সাধারণ মানুুষ একেশ্বরবাদ বলতে বুঝি ঈশ্বর একজন, তিনিই সৃষ্টিকর্তা। তিনি স্বয়ম্ভু এবং অদ্বিতীয়। তিনিই সর্বময় ক্ষমতার মালিক এবং সার্বভৌম।

কখন চালু হয়েছিল এই একেশ্বরবাদ?বহুদেশে। স্থান কাল পাত্র ভেদে বহুবার।
সমাজ বিজ্ঞানীদের মতানুযায়ী, এই মতবাদের প্রবক্তারা আসলে বহু দেবদেবীদের অস্বীকার করার একটা ফন্দি খোঁজার প্রয়াস নিচ্ছিলেন। নির্ভেজাল একেশ্বরবাদ আসলে ছিল দেবদেবীদের গালে নাস্তিক যুক্তিবাদীদের তৈরি করা চপেটাঘাত। খেয়াল করে দেখুন, যেখানেই দেবদেবীর প্রাধান্য ছিল, সেখানেই সৃষ্টি হয়েছে একেশ্বরবাদ।

হযরত মুহাম্মদের ধর্মীয় জীবন পর্যালোচনা করলেও এই ধারণার ইংগিত পাওয়া যায় যে তিনিও দেবতাদের বিনাশের ফন্দি থেকেই 'এক আল্লাহ ' মতবাদ প্রচলন করেন। আমি অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত কারণেই এই সিদ্ধান্তে এসেছি যে তিনিও ছিলেন একজন ছদ্মবেশী নাস্তিক।
৫৯৫ খ্রীস্টাব্দে জুরহুম বংশের লোকেরা 'হিলফ উল ফুজুল 'নামে এক ধর্ম নিরপেক্ষ সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন। এর প্রধান চারজন সদস্য ছিলেন ফজল, ফুজল, মুফাজ্জল ও ফুজাইল। এই চার ফজলের নাম থেকেই প্রতিষ্ঠানটির নাম হয়েছিল হিলফ উল ফুজুল। আরবের ইহুদী, নাসারা, খ্রীস্টান, পৌত্তলিক, সাবেইন প্রভৃতি ও বিভিন্ন গোত্রের মাঝ থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি এর সদস্য হয়েছিলেন। যুবক হযরত মুহাম্মদও এই মহতী সংঘের সংস্পর্শে আসেন এবং সদস্য পদ গ্রহণ করেন। সংঘের সদস্যরা যে চুক্তিনামা সম্পাদন করেছিলেন তার প্রধান পরিচ্ছেদ ছিল, "আমরা সকলে অত্যাচারিত, নিপীড়িত, অসহায় ও দুর্বলকে সাহায্য করব। কোন অত্যাচারী মক্কায় বাস করতে পারবে না। " এই সংগঠনটি ছিল ধর্ম নিরেপেক্ষ এবং এর অধিকাংশরই দেবদেবীদের উপর আস্থা ছিল না। অর্থাৎ এরা অধিকাংশই ছিল ছদ্মবেশী নাস্তিক কিংবা যুক্তিবাদী।¹
পরবর্তীতে হযরত মুহাম্মদ বিভিন্ন দেবতাদের মধ্য হতে একমাত্র আল্লাহকেই উপাস্য হিসেবে বেছে নেন। আল্লাহ দেবতাকে বেছে নেয়ার মূল কারণ সম্ভবত পারিবারিক ধর্মাচার। হযরতের পিতা আব্দুল্লাহ ছিলেন আল্লাহ দেবতার একনিষ্ঠ পূজারী। যাই হোক হযরত বিভিন্ন গুণের অধিকারী বিভিন্ন দেবদেবীর বৈশিষ্ট্য একমাত্র আল্লাহতেই সমর্পন করে সকল দেবদেবীর( কমপক্ষে ৩৬০টি) মূর্তি ভেঙ্গে দেন। এবং বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মূর্তিভঞ্জক রূপে খ্যাত হন। হযরতের কঠোর ও উগ্র বিগ্রহ বিদ্বেষ মুসলিম সমাজকে ভাস্কর্য শিল্প এমনকি চিত্রকলা কলা থেকেও দূরে ঠেলে রেখেছে।
আল কালবীর মতানুযায়ী আল উজ্জা কুরাইশদের অত্যন্ত সম্মানিত দেবি ছিল। হযরত মুহম্মদও একদা তার বেদিতে উৎসর্গ করেন। প্রাথমিকভাবে হযরত উজ্জা, লাত, মানাত আল্লাহ দেবতার এই তিন কন্যাকে স্বীকার করে নেন। এবং তাদের উপাসকদের সঙ্গে সমঝোতা করেন। কিন্তু পরবর্তীতে কাবা মন্দিরের অন্যান্য মূর্তির ন্যায় ওগুলোর ভাগ্যেও একই দুর্দশা ঘটে।

নিচের আয়াত এবং হাদিস খেয়াল করুন। আল্লাহ এবং মুহাম্মাদের মধ্যে পার্থক্য করতে পারেন কিনা একটু চেষ্টা করুন!
যে কেউ রাসূলের আনুগত্য করল সে আল্লাহর আনুগত্য করল। - সূরা নিসা : ৮০।
যে আমাকে অমান্য করল সে আল্লাহকে অমান্য করল। - সহীহ বুখারী।
যে আমার আনুগত্য করল সে আল্লাহর আনুগত্য করল। - সহীহ বুখারী।

কোরআন হাদিস থেকে  স্পষ্ট যে তিনি শুধুমাত্র আল্লাহর কাল্পনিক ক্ষমতাকে নিজ কিংবা সমাজের প্রয়োজনে কাজে লাগিয়েছেন। বর্বর আরবদেরকে কাল্পনিক ভয় ভীতি এবং লোভ প্রদর্শন করে নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিলেন। এবং চেয়েছিলেন নিজের সমস্ত কর্মকাণ্ডকে এক ধরনের বৈধতা দিতে। তিনি আল্লাহকে কাজে লাগিয়েছেন। এবং তিনি নিজেকে শেষ নবী দাবি করে এই ধারাবাহিক ভন্ডামি বন্ধ করতেও চেয়েছিলেন।পৃথিবীতে সবচেয়ে সাফল্যজনকভাবে তিনিই আল্লাহ এবং শয়তান আইডিয়াকে ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছেন ; নিঃসন্দেহে।

পৃথিবীর ভয়াবহতম ধর্মদ্রোহী ও ধর্মব্যবসায়ী নাস্তিক আসলে স্বয়ং হযরত মুহাম্মদ নিজে।
এই পৌত্তলিক পুত্র জীবনের বেশিরভাগ সময় ছিলেন মূর্তিপূজারী। এবং পরবর্তীতে হয়েছিলেন কিছুটা স্বধর্মত্যাগী। মুহাম্মদের একেশ্বরবাদ মূলত ছদ্মবেশী নাস্তিক্যবাদ। যতটুকু ধর্ম তিনি পালন করেছেন, তা ছিল উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত।এবং আল্লাহও যে একজন দেবতারই নাম, আমরা তা সকলেই জানি।
ইতিহাস সাক্ষী, উনার মতো আর কেউ ধর্ম, ঈশ্বর এবং শয়তান আইডিয়াকে এত সফলভাবে ব্যবহার করতে সক্ষম হননি। ব্যক্তিগত কামনা বাসনা ও আধিপত্য বিস্তারের জন্য তিনি সত্যের সঙ্গে মিথ্যে মেশানোর জাদুকরি সূত্র প্রয়োগ করেছেন। আর স্বীয় স্বার্থকে লোকের কাছে বিশ্বাসে পরিণত করার জন্য এবং আধিপত্যকে কার্যকরী করার জন্য তিনি বহু যুদ্ধ বাঁধিয়েছেন। তিনি জানতেন, আধিপত্যবাদের জন্য প্রয়োজন উছিলা, সত্য মিশ্রিত মিথ্যাচার আর অস্ত্র।আল্লাহর নামে  নবুয়ত আর ওহী নাযিলের জঘন্য প্রতারণা একজন নাস্তিকের পক্ষেই করা সম্ভব। খুনোখুনি, মিথ্যাচার,লটপাট,  কাম - ধর্ষণ, লোভলালসা আর আধিপত্যের পুরো স্বীকৃতি হচ্ছে আল - কোরআন। যখনই প্রয়োজন পরেছে তখনই তিনি একটি ওহী নাযিল করিয়ে নিয়েছেন। আর আল্লাহও চৌদ্দশ বছর আগে মুহাম্মদের মৃত্যুর পর পরই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন, এরপর  আর একবারও ঘুম ভাঙ্গেনি। ভাঙ্গবে কীভাবে, যিনি ঘুম ভাঙ্গাবেন তিনিই মাটি!
প্রকৃত আস্তিকেরা সাধারণত ধর্ম ব্যবসায়ী হয় না। তারা চেষ্টা করে ধর্মকে পালন ও সম্মান করতে,  কারণ তাদের ঈশ্বরভীতি প্রচন্ড এবং তারা সাধারণত নির্বোধ প্রকৃতির হয়। ধর্ম ব্যবসা যারা করে তারা আসলে বদমাশ প্রকৃতির নাস্তিক।
সে যুগের বিখ্যাত মানবতাবাদী কবি আল মা আরী লিখেছিলেন :
চারিদিকে খ্রিস্টান ও ইহুদিদের সঙ্গে মুসলমানদের যুদ্ধ চলছে।
তবে মুহাম্মদের ধর্ম অবশ্যই সত্য
কারণ তার রয়েছে তলোয়ার।
নির্ভেজাল একেশ্বরবাদীদের চরিত্র ও কর্ম অধ্যয়ন করে এটাই মনে হয়, Deism was often a surreptitious from of atheism - a convenient device of the materialists for discarding religion. অর্থাৎ নির্ভেজাল একেশ্বরবাদ প্রায়শই এক ধরনের গোপনীয় নাস্তিকতা। এ হলো ধর্মকে প্রত্যাখান করার জন্য জড়বাদীদের এক ফন্দি বা চাতুরী।²
কার্ল মার্কস ও ফ্রেডরিক এঙ্গেলস একই মত পোষণ করেন, " বস্তুবাদীদের পক্ষে একেশ্বরবাদ হলো ধর্মের রোষকষায়িত লোচন ও রোষকষায়িত হাত থেকে রেহাই পাওয়ার একটা নির্ঝঞ্ঝাট উপায়। "³
সপ্তদশ শতাব্দীতে ইংরেজ দার্শনিক হার্বাট নির্ভেজাল একেশ্বরবাদ প্রতিষ্ঠা করে এ মতবাদের জনক বলে খ্যাত হন। তার ফন্দিকে অনেকেই উপযুক্ত ফন্দি হিসেবে গ্রহণ করেন।
শতসহস্র মনীষী আছেন যারা নাস্তিকতার এই পথকে বেছে নিয়েছেন। ওমর খৈয়াম, ইবনে সীনা, ইবনে রুশদ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, স্বামী বিবেকানন্দ প্রমুখ বিশিষ্টজনদেরও আমি ছদ্মবেশী নাস্তিকই মনে করি। যদিও প্রত্যেকের পরিপ্রেক্ষিত ও উদ্দেশ্যের বিশাল ফারাক রয়েছে।
কিন্তু এই ফন্দি যারা অনুধাবন করতে ব্যর্থ হন তারা ধর্মের ঈশ্বরকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য এটাকে ব্যবহার করেন।
At present , Deism is used to justify religion.⁴
আজকাল যেমন বহু দেবদেবীর পূজারী হিন্দুরা নিজেদের একেশ্বরবাদী বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

প্রায় এক যুগ আগে আমার লেখা কয়েকটি লাইন দিয়ে এই ছোট্ট লেখাটির ইতি টানছি।
ভয়সমূহ - ট্রিলিয়ন
ভুতসমূহ - বিলিয়ন
দেবদেবীর পাল - কোটি
ঈশ্বরের পরিবার - লক্ষ সহস্র
ঈশ্বর - শতক দশক একক
তারপর?তারপর শুধুই শূন্যতা!

তবে হ্যাঁ, এই শূন্যতার যুগে সেই মৃত ঈশ্বরকে আবার জীবিত করতে আরো একজন প্রতিভাবান নাস্তিক এবং শ্রেষ্ঠতম প্রতারকের প্রয়োজন।

1.তাবাকাতে ইবনে সাদ, প্রথম খন্ড,  পৃষ্ঠা : ৮২। এবং
    The failure of Great Islam, Dorothy and Vyyyen , 1974, p.29.
2. Dictionary of Philosophy , edited by I.Frolov, Progress Publishers , Moscow , see under 'Deism'.
3. Die heilige Famille,Marx and Engels, Frankfurt,1845, vide pp. 201- 04.
4. Dictionary of Philosophy , edited by I. Frolov, Progress Publishers , Moscow, see under ' Deism' .


EmoticonEmoticon