বৃহস্পতিবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৭

"গল্প নয় সত্যি" — ৮

বেশ লম্বা সময় পর মেয়েটা পুরোপুরি সুস্থ হয় ৷
আমিও মনে মনে স্থির করে ফেলি আর কখনো সে বাড়ী ফিরে যাবোনা,  তাতে যদি আব্বুর মুখোমুখি দাড়াতে হয় দাড়াবো!  আম্মুকে স্পষ্ট করে এ বিষয়টা জানিয়ে দিলাম আব্বু যেন তার সম্মানের দোহাই দিয়ে আমাকে আর ও বাড়ীতে যেতে না বলে ৷
এরপর থেকে আব্বুও আর কখনো জোর করেনি সে বাড়ী যাবার জন্য ৷
খুব ছোট থেকেই সেলাইয়ের কাজের প্রতি আমার আগ্রহ অনেক বেশি ছিলো, ক্লাস এইটে থাকতেই পাশের বাড়ির কাকীর কাছ থেকে দর্জির কাজ শিখেছিলাম৷ এই কাজ শেখার অনুমতি চেয়েও পাইনি, বরং অনেক কঠিন নিষেধ জারি করা হয়েছিলো আমি যেন ভুলেও  ও সব করার চেষ্টা না করি,  তবুও মিথ্যে বলে আম্মুর থেকে টাকা নিয়ে লুকিয়ে  কাজ শিখেছিলাম ৷
হাত পা গুটিয়ে বসে থাকতে আমার কখনোই ভালো লাগত না,  সব সময় কিছু না কিছু একটা নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম ই ৷
তখনও ঘরের মধ্যে বসে থাকতে ইচ্ছে করেনি, পরিচিত একজনের মাধ্যমে আড়ং এর কাজ হাতে নিলাম পাঞ্জাবী আর কাপড়ের ব্যাগ (যার দু পাশে হতে হবে সুঁতার নিঁখুত কাজ)৷ অনেকটা সাহস করেই কাজের ভার নিলাম ৷
আড়ং এর কাজ বেশ কঠিন যদি কোন সুঁতার রং এক বিন্দু লাইট ডিপ হয় তাহলেও হবে না , সে কাজ ফেরত পাঠাতো৷
আমাদের বাড়ীর কিছু ভাড়াটিয়া সহ আরো বেশ কিছু মহিলাদের পেয়ে গেলাম খুব অল্প সময়ে ৷ আমার সমবয়সি কিছু মেয়েদেরও পেয়ে গেলাম যদিও তাদেরকে আগে কাজটা শিখাতে হয়েছে, তাদের কে দায়িত্ব দিয়েছিলাম যারা যারা কাজগুলো নিচ্ছে তারা ঠিকমত করছে কিনা সে সব দেখার জান্য ৷
খুব ভালো ভাবেই নিজের মত করে সময় কাটছিলো আমার ৷
বছর যেতে না যেতেই আবার শ্বশুর বাড়ীর ফোনাত্যাচার, বারবার আব্বুকে ফোন করা হত আমাকে বাড়ী পাঠানোর জন্য ৷ আব্বু আমাকে কিছু বলতেন না যা বলার আম্মুকে বলতেন ৷
মেয়ের বাবাও বেশ চাপ দিতে শুরু করলো বাড়ী যাবার জন্য, আর আমি তখন ঐ পরিবার থেকে মুক্তির দিন গুনছিলাম, মুক্তিটা আমার জন্য জরুরী ছিলো কারন ঐ বাড়ীর প্রতিটি মানুষকে অদ্ভূত প্রানী মনে হত যাদের সাথে আর যাই হোক এক সাথে বসবাস করা যায়না ৷
ভাবলাম আমি কেন ওর জন্য প্রেশারে থাকবো বরং ওকে আমি দৌড়ের উপরে রাখবো, যখনি ফোন দিতো বলতাম বাড়ী তো আমি যাবই না কারোর সাধ্য নেই আমাকে বাড়ী পাঠাবার ৷
বরং এখন থেকে প্রতি মাসের মেয়ে আর আমার মাসিক খরচটা প্রথম সপ্তাহের মধ্যে পাঠিয়ে দিবে, এখানে আলাদা বাসা নিব সে খরচটাও দিবে ৷
লোকটা এত ক্ষেপা ক্ষেপতো আমি বেশ মজা পেতাম সে সময় ৷
উত্তরে আমাকে যা তা বলতো,
আমি ও ভয় দেখিয়ে বলতাম ভালোয় ভালোয় না দিলে অন্য পথ ধরবো ৷ আর যদি খরচ বহন করতে অপারগ হও তাহলে ডিভোর্স দিয়ে দাও ৷
তার সাথে ফোনে তুমুল লড়াই চলত৷
সাভারে আমাদের বাড়ীর থেকে কিছুটা দুরে মেয়ের বাবাও বাড়ী কিনেছিলেন ৷ সে বাড়ীর ভাড়া প্রতি মাসে মেয়ের ফুপা তুলতেন ৷
মনের মধ্যে একটা জ্বেদ চেপেছিলো জোর করে হলেও ও বাড়ীতেই স্থায়ী ভাবে থাকবো, ননদাই এর সাথে যোগাযোগ শুরু করলাম খুব ভদ্র আচরণে বল্লাম ঐ বাড়িতে থাকার ব্যাবস্থা করে দিতে ৷
তিনি পরের মাসে ভাড়া তুলতে গিয়ে আমার সাথে দেখা করলেন৷
তার আচরণ বেশ অদ্ভুত লাগতো আমাকে বলতো,  আমি তোমাকে খুব বুদ্ধিমতি মেয়ে ভেবেছিলাম কিন্তু তুমি আসলেই বোকা!  কোন কাজ কৌশলে কি ভাবে আদায় করে নিতে হয় তুমি জানোই না!
আমিও বেশ কৌতুহুল দেখালাম কৌশলটা জানার জন্য ৷ বল্লাম আমাকে কি করতে হবে?
সে বল্লো তুমি আমার উপর ভরসা রাখতে পারো আমি ঐ বাড়ী তোমার নামে করে দেবার ব্যাবস্থা করবো তুমি শুধু আমার কথামত চলবে ৷
(মেয়েদের একটা ক্ষমতা আছে পুরুষের কথার ধরন আর চাহনী দেখলে বলে দিতে পারবে তার আসল উদ্দেশ্য কি)
আমিও তার ব্যতিক্রম নই,  সব বুঝতে পেরেও অপেক্ষা করছিলাম আর তাকে সুযোগ দিচ্ছিলাম যে সে কতটা এগুতে পারে ৷
সে ভাড়া তুলতে গেলে একদিনের বেশি সাভারে থাকেননা, অথচ আমার সাথে কথা বলার পর তিন চার দিন চলে যায় অথচ তার গ্রামে ফেরার খবর থাকেনা ৷ সে বারবার ফোন করে দেখা করতে বলতো, ঘুরতে যাবার কথা বলতো৷
অদ্ভূত আচরণ শুরু করে দিয়েছিলো লোকটা৷
আমাদের বাড়ির কয় একটা বাড়ীর পরেই  বিশাল খোলা জায়গা ছিলো মাঠের মত, বিকেল হলেই এলাকার অনেক লোক সেখানে আড্ডা জমাতো৷
একদিন সন্ধ্যার পর দুলাভাই আমাকেও সেখানে ডাকলো, আমিও গেলাম ৷
ঘাসের উপর মুখোমুখি বসলাম, কিছুক্ষন কথা বলার পর সে খপ করে আমার একটা হাত ধরে ফেল্লেন দেন খুব বিশ্রি হাসি ঠোঁটে ফুটিয়ে রেখে হাত মোলামোলি করতে করতে বলতে শুরু করলেন তুমি এত বোকা কেন বলো তো ?
আমি বল্লাম কেমন বোকা ?
বলে এই যে স্বামী দুরে থাকে তোমার একা থাকতে কষ্ট হয়না ?
বল্লাম হুম তা তো একটু হয় ৷
বলে, যদি চালাক হতে তাহলে এই কষ্ট টা করতে না, তোমার স্বামী কি সেখানে কোন মেয়ে মানুষ ছাড়া আছে?  নেই ৷ তাহলে তুমি কেন তার কথা ভেবে নিজেকে কষ্ট দিচ্ছো?
আমি বল্লাম তাহলে আমার কি করা উচিৎ?
তিনি কিছু বলতে যাবেন তখনি আম্মু ফোন দিলেন - মেয়েটা পড়ে গিয়ে ঠোঁট কেটে ফেলেছে শুনে আমি উঠে দাড়ালাম, আর দুলাভাইকে বল্লাম দুলাভাই আপনি ফোন দিয়েন ফোনে কথা হবে বলেই চলে এলাম ৷
কিছুক্ষন পর দুলাভাই ফোন করলেন, (তিনি হাত ধরার পর যখন আমি হাত ছাড়িয়ে নেইনি তাই তিনি ধরেই নিয়েছিলেন আমাকে বোধহয় পটিয়ে ফেলেছেন) তিনি খুব কু-সাহস নিয়ে অনেক কথার পর প্রস্তাবটা দিয়েই ফেল্লেন যদি আমি তার সাথে সেক্স করি তাহলে তিনি আমার জন্য সব করবেন (মেজাজ চরম পর্যায়ে চলে যাবার পরও নিজেকে শান্ত রেখে কথা চালিয়ে গেলাম) বল্লাম তাহলে আমাকে এখন কি করতে হবে ?  বলে আমি আজ তোমাদের বাসায় আসি রাতে তুমি আর আমি এক ঘরে থাকবো ( আমাদের নিজেদের চার রুম বাকি সব রুম ভাড়া দেয়া, এক রুমে আমি মেয়েকে নিয়ে থাকতাম) আমি বল্লাম আমার  আব্বু আম্মু তো আপনার সাথে এক রুমে থাকতে দেবে না,  সে বল্লো তুমি তাদের বলবা দুলাভাইর সাথে অনেক কথা আছে সারা রাত বসে দুজনে কথা বলবো ৷ তুমি চাইলেই তাদের মেনেজ করতে পারবা ৷
কিছুক্ষন চুপ থেকে বল্লাম "হুম"
সে বল্লো তাহলে কি আমি আসবো ? 
বল্লাম আসুন ৷
ফোন রেখে আম্মুকে সব বল্লাম,  আব্বু ফিরলে আব্বুকেও সব জানানো হয় ৷
দুলাভাইকে খুব ভালো ভাবেই আপ্যায়ন করা হয়,  তারপর আমার রুমে নিয়ে তাকে শুয়ে পড়তে বলি,
আমি একটু পর আসছি বলে বেরিয়ে আসি৷ তার একটু পর আব্বু  আমার রুমে গিয়ে দুলাভাইর পাশে শুয়ে পড়েন!
আমি যখন সকালে ঘুম থেকে উঠি দেখি দুলাভাই নেই, আম্মুকে জিজ্ঞেস করলে বলেন দুলাভাই কখন বেরিয়ে গেছে সেও জানেনা ৷
এমন কি আব্বুও টের পায়নি৷
দুপুর ১২ দিকে অামিই তাকে ফোন করি এবং জিজ্ঞেস করি সে কোথায় ?
বলে- সে বাড়ী চলে গেসে, আমি আবার প্রশ্ন করলাম এভাবে কাউকে কিছু না বলে চলে গেলেন কেন ?
সে বলে, ধুর মিঞা তোমরা মানুষ ভালোনা৷ কথা কাজের কোন মিল নাই, আমি তোমার ভালো চাইছিলাম তাই তোমার জন্য কিছু করতে চাইছিলাম তোমার জবানের যেহুতু ঠিক নাই তাই তোমার সাথে আর যোগাযোগ করতে চাইনা, তাই তুমি আর কখনো আমাকে ফোন করবে না ৷
তার বলা শেষ হলে আমি তাকে বলি- আমারো আর ইচ্ছে নেই আপনার সাথে আর কোন রকম যোগাযোগ করার, তবে আগামি মাসে আপনি কত তারিখে আসবেন আমাকে জানালে উপকার হত,
সে জানতে চাইলো কি জন্য?
বল্লাম আপনার সাথে আমার ফোনে যে কথা হয়েছে আমি সব রেকর্ড করে রেখেছি আগামি মাসে এলে নিজে দাড়িয়ে বাড়ীর দায়ীত্বটা আমাকে দিয়ে যাবেন নয়ত এলাকার অনেককে এক জায়গায় করে আমি আপনার ফোন রেকর্ড শোনাবো,  আর তেমনটা হলে আপনি এলাকাতেও ঢুকতে পারবেন না.....


EmoticonEmoticon