এদেশের পাবলিক চিকিৎসা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক ফায়দা আর ধান্ধাবাজির উপর গড়ে উঠেছে এই স্বাস্থ্য খাত। এখানে সরকারী হাসপাতালগুলোতে উপযুক্ত চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায় না। কয়েকদিন আগে এক প্রেগন্যান্ট মহিলা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, সোহরার্দী হাসপাতাল, মাতৃসদন ঘুরেও বাচ্চাকে প্রসব করাতে পারেননি। শেষপর্যন্ত বৃষ্টির মধ্যে রাস্তার মধ্যে তাঁকে সন্তান প্রসব করতে হয়েছে! কী নির্মম পরিহাস করা হল। পরপর কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে তাঁর ঠাই কোথায় হল না। শেষপর্যন্ত বাচ্চাটিকে আর বাঁচানো গেল না। একটা দেশের পাবলিক চিকিৎসা ব্যবস্থাকে নষ্ট করে দিয়ে মুনাফালোভী একটা সিস্টেম দাঁড় করানো হয়েছে। চিকিৎসা এখানে বড় ধরণের ব্যবসার নাম। যত্রতত্র প্রাইভেট চেম্বার, প্রাইভেট হাসপাতাল, অনবিজ্ঞ ডায়াগনস্টিক সেন্টার। ফলে ব্যবসায়িক ধান্ধাবাজির একটি চেইন সিস্টেম এখানে শুরু হয়ে গেছে। কমিশনখোর ডাক্তাররা সাধারণ অসুখে দেখাতে গেলে কয়েক ধরণের টেস্ট দিয়ে দিবে যার বেশিরভাগ অপ্রয়োজনীয়। সাথে সাথে বিরাট এক ঐষধের প্রেসক্রিপশন ধরাইয়ে দিবে। যা এবার যা কামাই করেন সব দিয়ে দেন চিকিৎসার পেছনে। কিন্তু অতিরিক্ত ঔষধ ও এন্টিবায়োটিক গ্রহণের অনেক ক্ষতিকর শারীরিক প্রভাব আছে। তা না করেই প্রাইভেট চিকিৎসকরা ঔষধ কোম্পানি এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে কমিশন পাবার লোভে অপ্রয়োজনীয় সব কাজ করছেন যা বাস্তবে মানুষের জীবনী শক্তি হ্রাস করছে।
আবার প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে গর্ভবতী রোগী গেলেই সিজার ছাড়া চলে না। কিন্তু আমি ইতালিতে দেখলাম হাসপাতালগুলোতে সন্তান প্রসবের স্বাভাবিক চেষ্টা এখানকার ডাক্তাররা শেষপর্যন্ত করেন। যদি কোন উপায় না থাকে তবে সিজার করেন। আর এখানে প্রসুতি রোগী মানেই সিজার ছাড়া উপায় নেই।
ইতালির স্বাস্থ্যখাত মূলত পাবলিক চিকিৎসা নির্ভর। এখানে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিতে কোন পয়সা দিতে হয় না। সাধারণ রোগের চিকিৎসায় প্রত্যেকের সরকারী নির্দিষ্ট ডাক্তার আছে । এই ডাক্তারের রেফারেন্স নিয়ে যে কোন ধরণের বড় চিকিসা করা যায় বিনামূল্যে। এমনকি আগে একটি নির্দিষ্ট আয়ের মানুষকে ঔষধ ফ্রি দেওয়া হত, এখন এটা উঠিয়ে দিয়েছে। তবে ৬ বছরের নিচে শিশুদের এবং ৬৫ বছরের উপরে বৃদ্ধদের ঔষধ ফ্রি দেয়। আর আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা? একজন মানুষকে রাস্তায় বসানোর আয়োজন এখানে। আবার খাদ্যদ্রব্যে এতো ভেজাল আর রাসায়নিক এর এত মিশ্রণ যে অসুখ ছাড়া মানুষ নাই বললেই চলে। এটা যেন চক্রাকারে চলছে। কিন্তু কোন পক্ষ থেকেই আওয়াজ উঠে না। সবাই যেন মেনে নিয়েছে এটাই নিয়তি।
EmoticonEmoticon