বুধবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৭

নামাজের সময় কেন দোকান বন্ধ রাখতে হবে !

প্রতি ওয়াক্ত নামাজের সময় লক্ষ্মীপুর শহরের সকল ধরনের দোকানপাট বন্ধ ঘোষণা করেছেন পৌর মেয়র আলহাজ্ব আবু তাহের। মানুষকে ধর্মীয় ভাবধারায় উজ্জীবিত করতে তিনি তিনি এই নির্দেশ দিয়েছেন। নোয়াখালীর স্থানীয় পত্রিকার সংবাদে এই বিষয়ে ছাপা হয়েছ।
ধর্মের পথে চলার জন্য, ধর্মের নির্দেশনা ও বিধান মেনে চলার জন্য কোন ব্যক্তি কাউকে আমন্ত্রণ জানাতে পারেন। কিন্তু কোন ব্যক্তি জোর করে কাউকে ধর্মের বিধান মেনে চলতে বাধ্য করতে পারেন না। জনাব আবু তাহের একজন পৌর মেয়র, তিনি রাষ্ট্রের নির্ধারিত আইন কানুনের বাইরে তিনি ব্যক্তিগত চিন্তাধারা থেকে প্রসূত কোন বিষয় সাধারণ মানুষকে মেনে চলতে বাধ্য করতে পারেন না। সাধারণ মানুষের ধর্ম পালন করার স্বাধীনতা যেমন আছে তেমনি ধর্ম পালন না করারও স্বাধীনতা আছে। বাংলাদেশ গণপ্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র, ইসলামিক রাষ্ট্র নয়। ইসলাম ধর্মানুসারী সংখ্যাগুরু হওয়ার ফলে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করা হয়েছে। তার মানে এই নয় যে, বাংলাদেশ ইসলামী প্রজাতন্ত্র। এমনকি একজন ইসলাম ধর্মাবলম্বী কাউকে জোর করে ধর্ম পালনে বাধ্য করতে পারে না। কেননা কোরআন শরীফের লেখা আছে, - 'ধর্ম মানতে কোনো ধরনের জোর জবরদস্তি নেই' — আল-বাক্বারাহ ২৫৬
জনাব আবু তাহের নিশ্চয়ই কোন পয়গম্বর নন। ইসলাম রক্ষা বা ইসলাম ধর্ম জোর করে পালন করানোর দায়িত্ব কেউ তাকে দেয়নি।
পৌর মেয়রের এমন নির্দেশে মানবিক অধিকার হরণ করা হয়েছে। মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতায় আঘাত করা হয়েছে। একটি শহরে বিভিন্ন ধর্ম ও মতের মানুষ বাস করে। একজন পৌর মেয়র সে যে ধর্ম বা মতেরই হোক কেন সে সকল ধর্ম ও মতে বিশ্বাসী মানুষের পৌর মেয়র। তাই তিনি এমন কোন নির্দেশ দিতে পারেন না যা একদলের জন্য সুবিধা আরেকদলের জন্য অসুবিধা। তার এই নির্দেশের ফলে রাষ্ট্রও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তিনি প্রত্যেক ওয়াক্ত নামাজের সময় দোকান বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের চার ওয়াক্ত নামাজের সময় মানুষ জেগে থাকে ফলে দোকানপাটও খোলা থাকে। দোকান বন্ধ করে অজু করে নামাজ পড়া ও পুনরায় দোকান খুলতে মিনিমাম আধাঘন্টা সময় যদি লাগে তাহলে চার ওয়াক্তের জন্য দুইঘন্টা সময় ব্যয় হবে। প্রতিদিন এই দুইঘন্টা দেশের অর্থনীতির চাকা অচল থাকলে রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি কেমন প্রভাব পড়বে তা পাঠক ভেবে দেখুন। তাছাড়া যে নামাজ পড়তে চায় সে পড়ুক তার জন্য দোকান বন্ধ রাখতে হবে কেন? এমনি তিনি মুসলিম বাদের অন্যান্য সম্প্রদায়কে নামাজের সময় দোকান বন্ধ রাখতে বলেছেন। কার্যত তিনি মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতায় আঘাত করেছেন। আর রাষ্ট্রের আইনে যেহুতু এমন কোন বিধান বা আইন নেই সেহুতু তিনি এমন নির্দেশ প্রদান করতে পারেন না। যদিও পরবর্তীতে অন্য সম্প্রদায়ের ব্যবসায়ীরা এ বিষয়ে কথা বললে তিনি জানিয়েছেন যে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা নামাজের সময় দোকান খোলা রাখলেও বেচাকেনা করতে পারবেন না। এটা কোন যুক্তিতে? দেশের অর্থনীতির চাকা অচল করে দিয়ে তিনি মানুষ বান্ধব বা জনপ্রতিনিধি হয় কেমন করে! তিনি ইসলাম ধর্মাবলম্বী হয়েও কোরআনের সুরা বাকারার ২৫৬নং 'ধর্ম মানতে কোনো ধরনের জোর জবরদস্তি নেই' এই আয়াতটির অবমাননা করেছেন।
আবু তাহেরের মত লোকেরা এ সমাজের বিষফোঁড়া। কেননা এরা অন্যের মত বা বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে না। সমাজের সকল মানুষের ভালমন্দের জন্য চিন্তা না করে নিজ স্বার্থে নিজের নিজের মতকে অন্যের উপরে চাপায়, এটা অন্যায়। প্রতিটি মানুষ ভালবেসে তার বিশ্বাস অনুযায়ী ধর্ম বা মত পালন করুক ।


EmoticonEmoticon