সিলেটে রিয়াদ নামে এক ছাত্রলীগ কর্মী প্রতিপক্ষের ছুরির আঘাতে খুন হয়েছে। নিজেদের মধ্যে গ্রুপিং মারামারি করে অসংখ্য কর্মীর প্রাণ এভাবে জড়ে গেছে। ছাত্রলীগ নামধারী বিষাক্ত সাপের ফনায় শত শত প্রাণ আকালে হারিয়ে যায়। রিয়াদের বাড়ি ছিল সুনামগঞ্জ জেলায়। সিলেট এসেছিল পড়ালেখা করতে। পড়তো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় লিডিং ইউনিভারসিটিতে। শুধু পড়াশুনার জন্য রিয়াদের বাবা ছেলেমেয়েদের বাসাভাড়া করে পড়াচ্ছেন। কিন্তু ছাত্রলীগের গ্রুপিং কোন্দলে রিয়াদকে প্রাণ হারাতে হয়। সারাদেশে নিজেদের মধ্যে মারামারি করে ছাত্রলীগের কয়েকশত কর্মী খুন হয়েছেন। কিছুদিন আগে চট্টগ্রামে নিজেদের মধ্যে প্রতিহিংসার জের ধরে খুন হন আরেক কর্মী। সিলেটে এর আগে কয়েকজন খুন হয়েছে এভাবে। গত বছর প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না দিলে খাদিজা নামের এক মেয়েকে চাপাতি দিয়ে মারাত্মক আহত করে ছাত্রলীগ ক্যাডার বদরুল। যা সারাদেশে তুমুল ঝড় তুলেছিল।
কেউ মায়ের পেট হতে সন্ত্রাস চাঁদাবাজ বা মাস্তান হয়ে জন্ম নেয় না। যে পরিবেশ বাস্তবতা এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতি একটি ছেলে বা মেয়েকে এই পথে নিয়ে যায়। আর তরুণ বয়স মারাত্মক। এই সময় বিকাশের সময়। এই বয়সে মনের মধ্যে হিরোইজম কাজ করে। ফলে নিজেকে উপস্থাপন করার জন্য নানা ধরণের মানসিক চঞ্চলতা চলে আসে। এখন যদি সেই চঞ্চলতা খারাপ পরিবেশে বিকশিত হয় তখন একজন মানুষ নানা ধরণের অপরাধ কর্মে জড়িত হয়ে পড়ে। আর ছাত্রলীগ নামক সংগঠন এখন চরম অসহিষ্ণু, কোন বাঁধভাঙা নিয়ম মানে না। তার সাথে যুক্ত হয়েছে ক্ষমতার দ্বন্ধ। কে কার থেকে বেশি শক্তি প্রদর্শন করবে। আর এই শক্তি প্রদর্শন আজ ছাত্রলীগে বা ছাত্রদলে নেতা হওয়ার উপায়। এই কারণে তরুণ বয়স থেকে অপরাধ কর্মে এই ছেলেগুলো জড়িত হয়ে পড়ে। যার ফল হয়ে দাঁড়ায় মারাত্মক! এভাবে কত মায়ের বুক খালি হয়ে হারিয়ে যায় কত প্রাণ। এর দায় কাদের? যারা এই সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ তৈরির রাজনীতি সংস্কৃতি চালু রেখেছে তারা। ক্ষমতার রাজনীতি চর্চা করতে করতে এরা ব্যবহার করে উঠতি তরুণদের। আর এক সময় এরা হয়ে উঠে ভয়ংকর সন্ত্রাসী।
ফলে লাখ লাখ তরুণ আজ একটি বিকশিত সমাজ পায় না, যেখানে উন্নত মানুষ হওয়ার সুযোগ আছে। কারা এই এসব ঝিইয়ে রেখে একটা দেশের তরুণ প্রজন্ম কে ধ্বংস করে দিচ্ছে? এটা এখানকার বেশিরভাগ মানুষের ভাবনা জগতে কাজ করে না। ফলে কলুষিত রাজনীতি শক্তি এখানে শক্তিশালী হয়। এখন অভিভাবকদের ভাবনার সময় হয়েছে আপনাদের সন্তানদের নিয়ে। কত অর্থ শ্রম ব্যয় করে যে সন্তান বড় করার স্বপ্ন দেখছেন সে কী করছে? কাদের সাথে মিশছে, কোন রাজনীতি করছে খেয়াল রাখা আপনার দায়িত্ব। এখন যদি মনে করেন ছেলে সন্ত্রাসী ক্যাডার হয়ে দুপয়সা কামাই করে দিবে তবে ভবিষ্যতে যখন দুই গ্রুপের কোন্দলে খুন হয়ে আকালে হারিয়ে যাবে তখন আর সময়কে ফিরে পাবেন না। এজন্য সময় এসেছে সন্ত্রাসভিত্তিক রাজনীতিকে না বলুন, ছাত্র আধিকার আদায়ে লড়াকু সংগঠন কে হা বলুন।
EmoticonEmoticon