যে বা যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন এবং আগামীতে করবেন বলে চিন্তা করছেন তাঁদের বিরোদ্ধে কিছু লিখবো না, কোন সমালোচনা ও করবো না। তবে কিছু প্রশ্ন করতে চাই। আমাদের বামপন্তীদের মধ্যে অনেকেই এই সরকারকে ফ্যাসিবাদী সরকার মনে করেন। যা বিভিন্ন লেখালেখিতে উঠে এসেছে। আমার প্রশ্ন আপনাকে পরিষ্কার করতে হবে এই সরকার ফ্যাসিবাদী না গণতান্ত্রিক? যদি ফ্যাসিবাদী হয় এবং আপনিও মনে করেন এই সরকার ফ্যাসিবাদী তাহলে এই সরকারের অধীনে স্থানীয় বা জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদী সরকারের কার্যক্ষমকে মেনে নিচ্ছেন না? কে নির্বাচন করবে কে করবে না তা তার দলের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। এখানে আমার নাক গলানোর কিছু নেই। কিন্তু কেউ যদি সমাজ পরিবর্তন চায়, ব্যাপক জনগণের অধিকার বা মুক্তি চায় তাকে সেই লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।
একটি ফ্যাসিবাদী সরকার সব ক্ষেত্রে তার নিজস্ব কতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়, সাধারণ মানুষের নুন্যতম চাওয়া বা জনগণের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতি তার কোন শ্রদ্ধা নাই। সে তার নির্দিষ্ট আদর্শের দোহাই দিয়ে সবকিছুকে হালাল করে ফেলে। এমনকি সে তখন নিজের জনগণের উপর নির্ভর না করে বাইরের শক্তি, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনীকে সাধারণ জনগণের বিপরীতে দাঁড় করায়। ফলে সেই শক্তিকে চেলেঞ্জ করা ছাড়া, এর বিরোদ্ধে গণ বিদ্রোহ গড়ে তোলা ছাড়া বিকল্প কোন রাস্তা নাই।
কমিউনিস্টরা এমনকি স্যোসাল ড্রেমক্রেটরা নির্বাচনে যাবে না এমন কোন বিধিনিষেধ নাই। একটা সময় পর্যন্ত শ্রমিক শ্রেণীকে বুর্জোয়া গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে হয়। এটা শুধু যে নির্বাচনের জন্য তা নয়, নিজেদের সংগঠন করার অধিকার, আন্দোলন সভা সমাবেশ বিক্ষোভ করার অধিকার, ট্রেড ইউনিয়ন গুলোর মজুরি বৃদ্ধি সহ যাবতীয় অধিকারের জন্য গণতন্ত্রের লড়াই চালাতে হয়। এজন্য শুধুমাত্র নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হওয়ার জন্য নয় নিজেদের গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য শ্রমিক শ্রেণীকে লড়াই চালিয়ে যেতে হয়। এখন যদি নুন্যতম গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকে, জনগণের ভোট দানের সুযোগ হয় তবে সেই নির্বাচনে শ্রমিক শ্রেণীর প্রতিনিধি অংশ নিতে পারে।
এখন যেখানে প্রশাসনিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে, টাকা ছিটিয়ে ভোট কিনে, ভয়ভীতি দেখিয়ে ভোটদানে বাধ্য করা, বা কেন্দ্র দখল করে ব্যালটবাক্সে ভোট দেওয়া হয়ে যায় সেই নির্বাচন কখনো নিরপেক্ষ হতে পারে না। সেই চর্চা কী এখানে নগ্নভাবে হচ্ছে না? জনগণের ভোটদানের যে সীমিত সুযোগ ছিল তা প্রতিনিয়ত হরণ হচ্ছে না? এমন এক অবস্থায় দলীয় সরকারের অধীনে যে নির্বাচন তা প্রহসন ছাড়া কী বলতে পারি?
এখন পরিবর্তনের জন্য চাই জনগণের ঐক্যবদ্ধ লড়াই। জনগণের নুন্যতম গণতান্ত্রিক অধিকার এবং মত প্রকাশের অধিকারের লড়াই। যা সম্ভব হতে পারে ব্যাপক জনগণের বিক্ষোভ বিদ্রোহ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে। সেই লক্ষ্যে যদি কেউ কাজ করে তাঁদের প্রতি পূর্ণ সমর্থন থাকবে। আর বাকি যা কিছু চর্চা বা চেষ্টা যে লাউ সেই কদু। এজন্য বিকল্প চিন্তা করতে হবে সেখানে যদি একজন শুরু করে তার পাল্লাকে ভারি করতে হবে। অন্য যে কোন ধরণের চেষ্টা বা ক্ষমতাকেন্দ্রিল চর্চা ছুড়ে ফেলা ছাড়া এবং এদের মুখোশ উন্মোক্ত করা ছাড়া সমাজ বিকাশের কর্মীর অন্য কাজ হতে পারে না।
EmoticonEmoticon