পোশাক পরিধানের বিষয়টিকে আমরা যতোই ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয় বলে দাবী করি না কেনো, বাস্তবে তা অতি সামান্যই ব্যক্তিগত। পোশাক সন্দেহাতীতভাবে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক।
যাচ্ছেতাই পোশাক পরিধান কোনো দেশে কোনো কালেই - অতীত থেকে এপর্যন্ত - অনুমোদিত নয়। এখনও পর্যন্ত পোশাক জাতি, লিঙ্গ, শ্রেণী ও পেশার পরিচয়ের প্রতীক হিসেবে কাজ করে।
প্রতিটি সমাজেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে লিখিত কিংবা অলিখিত ড্রেসকৌড (dress code} আছে। আমি ব্রিটেইনের একজন পেশাদার শিক্ষক হিসেবে আমার প্রাত্যাহিক অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বলছি, ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকার ড্রেসকৌড মেনে চলতে হয়।
ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে পোশাকের ক্ষেত্রে তাদের প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয় রক্ষা করতে হয়, এবং এটি বাধ্যতামূলক। শিক্ষক-শিক্ষিকার ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয় প্রতীকায়িত করা প্রয়োজনীয় না হলেও, পোশাকে তাদেরকে ফর্মাল (formal) বা আনুষ্ঠানিক হতে হয়। এখানে স্বাধীনতা নেই।
আপনি যাচ্ছেতাই প্রকারের পোশাক কোনো সমাজেই পরতে পারবেব না। ব্রিটেইনে একজন নারী চাইলেই বিকিনি পরে অফিসে যেতে পারবেন না। এমনকি তিনি রাস্তায়ও চলতে পারবেন না, পুলিস তাকে নিরস্ত করবে। এখানে স্বাধীনতা নেই।
এটা ঠিক যে, বিশ্বের বিভিন্ন জাতির মধ্যে সংযোগাযোগ বৃদ্ধির ফলে, পোশাকের ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে আদান-প্রদান হয়েছে, একে অপরের কাছ থেকে নিয়েছে, আবার সকলে মিলে নতুন উদ্ভাবনও করেছ।
তবে, জাতিসমূহের মধ্যে পোশাকের এই দেওয়া-নেওয়ারও একটি অলিখিত বিধি আছে। আর সেই বিধিটি হচ্ছে হিজেমনির (hegemony) বিধি। অর্থাৎ, পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে সাধারণতঃ বিজিত জাতি বিজয়ী জাতির পোশাক গ্রহণ করে থাকে। এখানেও স্বাধীনতা নেই।
এছাড়াও, বর্তমানের কর্পোরেইট যুগে পোশাক পছন্দের বিষয়টি ব্যাপকভাবে ইঞ্জিনীয়ার্ড (engineered) বা প্রকৌশলিত। বিভিন্ন ফ্যাশন ও ডিজাইনার সংস্থা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে বিশ্বজুড়ে মানুষের পোশাক-পছন্দ ডিক্টেইট ( dictate) করতে। এ-ব্যাপারে কোনো সন্দেহই নেই যে, তারা ব্যাপকভাবে বাণিজ্য-সফল। ফলে, এখানেও ব্যক্তির স্বাধীনতা নেই।
উপরের আলোচনা থেকে দেখা যাচ্ছে, পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে আমরা যতোই ব্যক্তি-স্বাধীনতার কথা বলি না কেনো, বস্তুতঃ আমরা স্বাধীন সামান্যই। এখন আমাদেরকে তাত্ত্বিক পর্যায়ে বুঝতে হবে, পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে আমাদের এই আপেক্ষিক স্বাধীনতা-হীনতার পেছেনে আছে একটা মৌলিক প্রেষণা (motivation), আর তা হচ্ছে অন্যকে প্রভাবিত করার বাসনা।
তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে আমরা দেখি, পোশাক পরিধানের আছে দু'টি ডাইমেনশন (dimension) বা মাত্রা। পোশাক একদিকে যেমন আবরণ, অন্যদিকে এটি আভরণ বা অলঙ্কারও। তার প্রথম মাত্রাটি বস্তুগত (objective) এবং দ্বিতীয় মাত্রাটি ভাবগত (subjective)।
পোশাক পরিধানের আবরণের মাত্রাটি বস্তুগত, ও ব্যক্তিগত যার উদ্দেশ্য হচ্ছে নিজের দেহরক্ষা। আবার, আভরণের মাত্রায় পোশাক হচ্ছে ভাবগত ও সামাজি, যার উদ্দেশ্য হচ্ছে অন্যকে ইম্প্রেস (impress) করে নিজের সম্পর্কে প্রদেয় ভাব তথা অন্যের মন করা।
EmoticonEmoticon