গতকাল সকালে ঢাকা মহানগর ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি দীপক শীলের এসএমএস পেয়ে ৯.৩০ মিনিটের পর টিএসসির উদ্দেশ্য রওনা দেই। আজিমপুর মোড়ে গিয়ে দেখা হয় ছাত্র ফ্রন্টের শুভ, আসিব ও মিমের সঙ্গে। এক পর্যায়ে আমি শুভ এবং আসিব একটা রিক্সা নেই। আমাদের রিক্সা পলাশী পৌঁছানো মাত্র দেখি এক ট্রাক স্কুল ড্যাস পড়া ছেলেদের ছাত্রলীগের ছেলেরা ফিরিয়ে দিচ্ছে। ফলে ট্রাকটি আর পলাশীর রাস্তা হয়ে শাহবাগ যেতে পারেনি। আমাদের রিক্সা পলাশী মোড় অতিক্রম করা মাত্র কয়েক জন ছেলে সামনে দাঁড়িয়ে যায়। আমাদের কাছে আইডি কার্ড চায়। আমরা আমাদের স্ব স্ব পরিচয় দেই। আমরা আমাদের রাজনৈতিক পরিচয় কেও গোপন করিনি। এরপর তারা আমাদের পুলিশ বক্সের ভিতরে নিয়ে যায়। ঢুকানো মাত্র জামাই আদর শুরু হয়। কত মজা করে তারা আমাদের আদর করতেছিল। জন্মের পর এমন আদর আমার বাবা একবার করেছিল তবে সেইবার ওষুধ না খাওয়ার জন্য। আমার বন্ধুরা জানে, আমি ডানকানে শুনি না। বাবার আদরটা এখনো মনে আছে।
এবার আদর করল ছাত্রলীগ। যদিও এইটা আমার প্রথম না। হরতালের মিছিলে পুলিশের বুটের লাথি এখনো মনে পড়ে। বরাবরই আমার নিয়তিটা মন্দ লোকজনকে রক্ত দেখাতে পারি না। আজকাল আবার রক্ত বের না হলে প্রমাণ হয় না শরীরে আঘাত লেগেছে। একবার ভাবুন তো ১৫ টা ছেলে কিছুক্ষণ পড়ে পড়ে এসে একটা করে কান কষিয়ে চর দিয়ে গেলে কেমন লাগে? তারা কি একবার মারছে? দুইঘন্টা দফায় দফায় মারছে...হ্যা অস্বীকার করব না তারা আমাদের বরফ দিয়ে সেবাও করেছে।
আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল শুভর জন্য, আমার সামনে ওরে প্রচুর মারতেছিল। যেই ভিতরে ঢুকে একটা চর যেন দিতেই হবে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ভালো ছিল...তারা বলে এমনভাবে মার যেন রক্ত বের না হয়।
আমার ফোনে কল আসতেছিল...আমার বন্ধু সুষ্মিতা যার সঙ্গে আমার ২০১৭ সালের ২২ জানুয়ারি ঝগড়া হয় তারপর আর দেখা হয় না। এর মধ্যে ঘটে যায় অনেক ঘটনা। সেইগুলো সংগঠনের সকলের কমবেশি জানে। গতকাল ছিল আবার সুষ্মিতার সঙ্গে মিছিল করা, স্লোগান ধরার দিন। কিন্তু ফোন করে সুষ্মিতা বুঝে গেছে আমাদের মিছিলটা হচ্ছে না। তখন যারাই আমাকে ফোন করতেছিল...আমার কণ্ঠ ছিল সত্যই কিন্তু বাক্য গুলো তাদের। তাই মিমকে বলি আমি থানায় আছি। যেসকল সহযোদ্ধা আমাকে এসএমএস করতেছিল...তার কোনটাই আমার দেখার সুযোগ হয়নি। মোবাইলের সকল তথ্যাদি তারা নিয়ে আমাদের জিম্মি করে রাখে।
এরপর আমরা একপাশে বসে থাকি...নতুন ছেলেদের ধরে এনে চরথাপ্পর দিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে কিন্তু আমাদের না ছাড়ার অন্যতম কারণ আমাদের সহযোদ্ধারা কখন কি করতেছে? কোন দিকে যাচ্ছে সবই আমার ফোন থেকে জানতে পারে। এরা আমার জবানবন্দি নেয়...বলতে বাধ্য করে ছাত্র ইউনিয়ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করবে, ছাত্রলীগের উপর হামলা করবে, অস্ত্র সহ সবাই যেন প্রস্তুত থাকে। আমি বলিনি...ঠিক ততবাই এরা আমাকে আঘাত করেছে।
এসবের পরও একটু সাহস পাই...হয়তো ১৫ বছরের একটা ছেলেকে ধরে আনে,
-এরা জিজ্ঞেস করে তুই কেন আসছিস?
-ছেলেটা বলে, ছাত্রলীগকে পিঠাইতে।
-এরা বলে, ছাত্রলীগ কি করছে?
-ছেলেটা বলে, অইদিন ঝিগাতালায় কিভাবে ছেলেমেয়েদের মারছে দেখেন নাই? এরা হল হারামি। এদের মারতে আসছি।
-এরা বলে, ছাত্রলীগ মারতে আসছিস, এরপর চর মারতে থাকে।
-ছেলেটা বলে, আপনারা কারা মারেন কেন? আমি তো আন্দোলনই আসছি।
এরপর কি হল আপনারাই ভালো বুঝতেছেন...আমি আর বলতে চাই না।
আমার একটা ফোন আসে তো শুরু হয় নিযার্তন। একটা এসএমএস একটা লাথি। যারা ফোন করতেছে, গ্রুপে চ্যাট করতেছে তাদের দোষ দিতে পারি না। কারণ তারা তো আমার অবস্থা জানে না। গতকাল আমার স্ট্যাটাসের প্রশ্নবিদ্ধ করে কেউ কেউ মন্তব্য করছেন...তাদের বলতেছি, হ্যা, আমাকে মারেনি...হাসপাতালে শুধু শুধু শুয়েছিলাম। ডাক্তারটা একটা আবাল...শুধু শুধু তিনটা ব্যথার ইনজেকশ দিয়েছে, অক্সিজেন দিয়েছে। শুনেন জনাব, এরা আমাদের বরফের ললিপপ দিয়ে পুলিশ বক্সে দুই ঘন্টা বসায় রাখছিল। আমরা বসে বসে চুষি। আর কাতরাতে থাকি তাদের চুমুতে আমার ওষ্ঠ কেটে যাওয়ার জন্য। ধুত আমাদের কিছুই হয় নাই...আগের থেকে স্বাস্থ্য ভালো হয়েছে। নিজেকে বেশ মোটামোটা লাগছে।
ঢাবির প্রক্টোরের টির্মের কাছে আমাদের তুলে দেওয়া হয়। যখন পুলিশ বক্স থেকে আমাকে ও শুভকে বের করতেছে...আমাকে মূলত আঘাতটা তখন করে। লোহার ব্যাসলেট দিয়ে আমার পায়ে আঘাত করে...পিঠে আঘাত করে। গাড়ীতে তুলে আঘাত করে। এবং আমাদের ছবি তুলে রাখে।
এরপর প্রক্টোরের টির্ম আমাদের হাসপাতালের ঘেটে ফেলে যায় এবং মোবাইল দিয়ে দেয়। তখনই আমার সহযোদ্ধা জাওয়াদুল ফোন করতে ছিল...আমি শুধু তাকে বলি আমি ঢাকা মেডিকেলে..
EmoticonEmoticon