প্রথম ক্লাশে স্যার জ্যামিতি করাচ্ছিলেন, হঠাৎ করে তিনি বললেন আজ তোমাদের ক্লাশ হবে না।
কেন স্যার?
আজ র্যালি হবে?
কিজন্য স্যার?
আমি জানিনা।
তারপর তাদেরকে হাঁটিয়ে বগুড়া করোনেশন স্কুল থেকে বগুড়া জিলা স্কুলে নিয়ে আসা হয় তারপর জিলা স্কুল থেকে সাতমাথা হয়ে থানামোড়, থানা মোড় হয়ে কাঁঠালতলা দিয়ে নবাববাড়ি হয়ে খোকনপার্কের সামনে দিয়ে আবার জিলা স্কুলে এসে র্যালি শেষ করা হয়। জিলা স্কুলে গিয়ে ব্যানার দেখে ঐ শিক্ষার্থী বুঝতে পারে যে, র্যালি হলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে। তার আপত্তি থাকা সত্ত্বেও সে ঐ র্যালি করতে বাধ্য হয়েছে। স্কুলের শিক্ষকের উপর কথা বলার ধৃষ্টতা সে দেখাতে পারে নাই। তারপর তাদেরকে আবারো হাঁটিয়ে তাদের স্কুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
সে তার মাকে বলছে
এই রোদে হেঁটে আমার মাথা ঘুরা শুরু হয়েছে।
তার মা ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন...
আমার বাচ্চাকে আমি স্কুলে দিয়েছি, কিন্তু অভিভাবকদের কোন নোটিশ না দিয়ে বাচ্চাদের দিয়ে এসব করার অধিকার শিক্ষকদের আছে কি?
কথা হল শাহ সুলতান কলেজের এক ছাত্রের সাথে খোকন পার্কের সামনে।
সে বলল ক্লাস হচ্ছিল, তখন স্যার বললেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাতে সাতমাথায় যেতে হবে। তারপর কলেজ গাড়িতে উঠতে বললেন, আমরা এসে র্যালি করলাম।
আজকের প্রথম আলোতে ৫ম পৃষ্ঠায় বগুড়ায় শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে র্যালির ছবি এসেছে। সেখানে করোনেশন স্কুলের ইউনিফর্ম পড়া শিক্ষার্থীসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীদের দেখা যাচ্ছে। গতকাল র্যালিতে শহরের প্রায় সমস্ত স্কুলের বাচ্চাদের দেখা যায় পুলিশের নিয়ন্ত্রণে এবং সাথে ইউনিফর্ম ছাড়া ২০-২৫ বছরের ছেলেদেরকেও নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যায়। ফেসবুকের ছবিতে র্যালির শুরুতে ব্যানারের সামনে বগুড়া জেলা আওয়ামীলীগের নেতাকে দেখা যাচ্ছে এবং যুবলীগ নেতার সাথে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতাদের দেখা যাচ্ছে।
যে স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের দিয়ে র্যালি করানো হয়েছে তাদেরকে কি আগে নোটিশ দেয়া হয়েছিল এই স্কুল, কলেজগুলোতে। বাচ্চাদের অভিভাবকদের কি নোটিশ দেয়া হয়েছিল? বগুড়ার কতজন অভিভাবক জানেন গতকাল তাদের বাচ্চারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে স্কুল থেকে বেরিয়ে র্যালি করেছে?
র্যালির আগেরদিন ৬ আগস্ট রাতে শুনলাম হঠাৎ করে শিক্ষকদের প্রমোশনের অর্ডার হয়েছে এক সপ্তাহের মধ্যে তা কার্যকর করা হবে। ঐদিন রাতেই টেলিভিশনে দেখা গেল ডিএমপি কমিশনার ও র্যাবের মহাপরিচালক সহ ৩ জনকে সচিবের মর্যাদা দেয়া হলো। এসব কি স্কুল শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা? নাকি স্কুল শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রণোদনা? এসব প্রশ্ন জনমনে আসতেই পারে।
শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দাবি মেনে নিলেন, প্রশ্ন হলো তবে কেন বল প্রয়োগ করলেন? কেন ফটোগ্রাফার শহিদুল আলম কে ধরে নিয়ে গিয়ে পিটানো হলো? কেন সাংবাদিকদের উপর চড়াও হলেন? কেন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হলো? কেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফ্রন্ট নেতা শুভ, রনি, ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা কলেজ নেতা মুর্শেদকে ছাত্রলীগ ও পুলিশ মিলে নির্যাতন করলো? কেন জয়পুরহাটের ছাত্র ফ্রন্ট নেতা জাকিরকে থানায় নিয়ে গিয়ে আটকে রাখা হলো? কেন নাটোরের ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি আদিত্য শুভকে গ্রেফতার করা হলো ?
কেন এখনো বিশ্ববিদ্যাল্যগুলো উত্তপ্ত? কেন গত ৬ আগস্ট বগুড়ায় গণতান্ত্রিক বামজোটের মিছিলে জনৈক এসআই থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলেন? কেন জানানো হলো এসপির নির্দেশ আছে বগুড়ায় কোন মিছিল মিটিং করতে দেয়া যাবে না?
আপনারা বলছেন বিএনপি জনভিত্তি হারিয়েছে, বামদলগুলোর সংখ্যা এত কম হুদাই হুদাই চিল্লাচিল্লি করে। তাহলে আবার কেন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে ষড়যন্ত্রের গন্ধ খুঁজছেন? প্রথম আলোতে খবর এসেছে ৫ টি জেলায় এই অভিনন্দন জানিয়ে র্যালি করা হয়েছে, আপনারাও কি এই কোমলমতি বাচ্চাদের দিয়ে অভিনন্দনের নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পুলিশ প্রশাসন ব্যবহার করে আপনাদের কথিত মতে রাজনীতিকে কলুষিত করলেন না?
বাস্তবে কি নিজেদের দিকে একটু মনযোগ দিয়েছেন আপনারা? এই ছোট ছোট বাচ্চারা আপনারা দাবি মেনে নিয়েছেন ঘোষণা দেয়ার পরও কেন আপনাদের উপর আস্থা রাখতে পারল না? একটু দেখেন নিজেদের দিকে। মুশকিল হলো দেখবেন কি দিয়ে? গণতন্ত্রের অন্যতম স্তম্ভ সংবাদ মাধ্যম হলো রাষ্ট্রের দর্পণ সেটাকেই তো চুরমার করেছেন! পঁচনের উৎস অন্য কিছুতে খোজার আগে আপনি যেখানে আছেন সেখানে পঁচন আছে কিনা একটু খুঁজেন। পঁচন সারানো সম্ভব হলেও হতে পারে।
EmoticonEmoticon