রাশেদ খান মেনন নৌকা প্রতীক নিয়ে ঢাকা-৮ আসন থেকে নির্বাচন করবেন। এর আগেও তিনি এই আসন থেকে নির্বাচন করেছেন নৌকা প্রতীকে। এদেশে বাম নেতাদের বেশিরভাগ দেখা যায় শেষ বয়সে এসে ক্ষমতার ভাগ পাওয়ার লোভ জেগে ওঠে। সারাজীবন বিপ্লব সমাজতন্ত্র মার্ক্সবাদ বুলি আউড়িয়ে শেষ বয়সে ধর্মের দিকে ঝোঁক বাড়ে আর ক্ষমতার লোভ পেয়ে বসে। ফলে নীতি আদর্শ সব বিসর্জন দিয়ে উনারা নৌকা আর ধানের শীষের জয়গান গেয়ে যান।
১৯৬৬ সালে আন্তর্জাতিক বিতর্ককে কেন্দ্র করে ছাত্র ইউনিয়ন দুইভাগ হয়ে যায়। চীনপন্থী ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বে ছিলেন রাশেদ খান মেনন আর মস্কোপন্থী ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ছিলেন মতিয়া চৌধুরী। তখন চীনপন্থীদের মধ্যে নানা উপদল গড়ে উঠে। এর একটি গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন রাশেদ খান মেনন, মান্নান ভূইয়া, হায়দার আকবর খান রনো, কাজী জাফর। এই গ্রুপটি প্রত্যক্ষ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করে এবং নরসিংদির শিবপুরে প্রতিরোধ গড়ে তুলে। মান্নান ভূইয়ার নেতৃত্বে সেখানে সব সময় মুক্তাঞ্চল এলাকা ছিল শিবপুর।
মুক্তিযুদ্ধের পরে এই কমিউনিস্ট গ্রুপ ন্যাপ ভাসানীর ভিতর দিয়ে কাজ করতে থাকে। যদিও তাদের গোপন একটি কমিউনিস্ট পার্টি ছিল। ন্যাপের মধ্যে কাজ করতে গিয়ে উনারা ন্যাপের নানা পদে নিযুক্ত ছিল। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন দলের লোকজন নিয়ে দল গঠনের চেষ্টা করেন। সেখানে যেমন ঝানু বামেরা ছিল তেমনি বিভিন্ন কট্টরপন্থী ইসলামিস্টরা ছিল। ফলে জিয়ার এই দলে ভাসানী ন্যাপের পুরোটা এর মধ্যে মান্নান ভূইয়া কাজী জাফরের মত বড় বড় বিপ্লবীরা যোগ দেয়। যদিও ঐ সময় রাশেদ খান মেনন, হায়দার আকবর খান রনো জিয়ার দলে যোগ না দিয়ে আলাদা দল গঠনের চেষ্টা করেন। ঐ সময় ওয়ার্কাস পার্টির আত্মপ্রকাশ করে। যদিও সামরিক স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ওয়ার্কাস পার্টির ভূমিকা ছিল। কিন্তু শেষ জমানায় এসে এই বাম নেতারা পল্টি দেন। হাজার হাজার তরুণদের বিপ্লবের স্বপ্ন দেখিয়ে শেষ জমানায় ক্ষমতার কাছে মাথা নত করেন। ফলে জীবনের একটা দীর্ঘ সময় নানা সংগ্রামের ত্যাগ থাকলেও দেখা যায় সেটা আর বহাল থাকে না।
এই রাশেদ খান মেননদের ভোটের মাঠে আগে হয়তো তেমন গুরুত্ব ছিল না। কিন্তু তারপরও মানুষ সম্মান করতো। কিন্তু এখন? সব নীতি আদর্শ ত্যাগ করে স্বৈরাচারের সাথে জোট করে, নিজ দলের প্রতীক বিসর্জন দিয়ে এখন নৌকা প্রতীকে ভোট করছেন। এতে হয়তো সংসদ সদস্য মন্ত্রীত্ব হওয়া যায়, কিন্তু ত্যাগের মধ্যে, সংগ্রামের মধ্যে থেকে যে মানসিক তৃপ্তি, জনগণের আন্দোলনের অংশ থাকার মধ্যে যে আনন্দ তা কী আর অনুভব করা যাবে?
EmoticonEmoticon