শনিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮

বামপন্থীদের বর্তমান ও ভবিষ্যত

হাজী রাশেদ খান মেনন একজন বামপন্থী। হাজী হাসানুল হক ইনু একজন বামপন্থী। দীলিপ বড়ুয়া একজন বামপন্থী। মইনুদ্দিন খান বাদল একজন বামপন্থী। এরকম অনেক বামপন্থী শেখ হাসিনার মহাজোটে আছেন, যাদেরকে তিনি 'পাকা বাম' বলে নির্দেশ করেছেন।

এছাড়াও কিছু বামপন্থী আছেন, যারা শেখ হাসিনার মহাজোটে নেই, আবার খালেদা জিয়ার আশির্বাদে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রণ্টেও নেই। তাদেরকে হয়তো কেউ 'কাঁচা বাম' বলতে পারেন।

যাহোক, এই বামদের মধ্যে আবার 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা' বলে একটা বিষয় আছে। এদের এই 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা' অনেকটা বেদনা হিসেবে কাজ করে। তারা বলেন, প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তারাই ধারণ করেন। তবে, প্রকৃত ও অপ্রকৃত যাই হোক না কেনো, 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা' ধারণাটি বামেদের সাথে শেখ হাসিনার মহাজোটের রাজনৈতিক দূরত্ব হ্রাস করে।

বাংলাদেশে 'বামপন্থী' হচ্ছে এমন একটি রাজনৈতিক পরিচয়, যা আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত ইত্যাদির মতো রাজনৈতিকভাবে স্পষ্ট নয়। বামপন্থীদের এই রাজনৈতিক অস্পষ্টতার কারণে, তাদেরকে বাংলাদেশের মানুষ কখনও দেশ শাসনের প্রশ্নে বিবেচনার মধ্যে আনে না।

বস্তুতঃ বাংলাদেশের বামপন্থীরা জাতির সামনে কোনো সুস্পষ্ট লক্ষ্য এবং তা অর্জনের জন্যে সহজবোধ্য ও সহজসাধ্য কোনো কর্মসূচি হাজির করতে পারেনি। সম্ভবতঃ তা করার মতো বোধ ও বুদ্ধির অভাব আছে তাদের।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে  বামপন্থীরা ক্রিয়া করার পরিবর্তে প্রতিক্রিয়া করে থাকে - অর্থাৎ তারা 'প্রোএ্যাক্টিভ' নয়, বরং 'রিএ্যাক্টিভ'। ফলে, সাধারণভাবে নিরুপদ্রব 'ভালোমানুষ' হিসেবে বামপন্থীদের প্রতি মানুষের সহানুভূতি থাকলেও কোনো প্রত্যাশা নেই। সম্ভবতঃ কোনো ভরসাও নেই তাদের ওপর জনগণের।

বাংলাদেশের একাদশ নির্বাচনকে ঘিরে যে গত কয়েক মাস ধরে রাজনীতির ঘটনাসমূহ ঘটছে, আলাপ-আলোচনা হচ্ছে, তার মধ্যে বামপন্থীদের নিয়ে মানুষের কোনো আলোচনা নেই। অর্থাৎ, এই মুহূর্তে তারা রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, বামপন্থীরা প্রায়ই নির্বাচনকে 'আন্দোলনের অংশ' হিসেবে নির্দেশ করে তত্ত্বদান করেন। আর, এই তত্ত্বের অনুসরণ ও দোহাই দিয়েই এবার তারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছে।

বামপন্থীরা কি কখনও তাদের এই "আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচন"-এর অর্জন ও ব্যর্থতার কোনো হিসেব রাখে? এই হিসেবের ভিত্তিতে কি তাদের রাজনীতির রণকৌশলের কোনো পরিবর্তন-পরিবর্ধন বা রূপান্তর ঘটে?

যে-বামপন্থীরা সমাজতান্ত্রিক অর্থ-ব্যবস্থা ও গণতান্ত্রিক রিপাবলিক গড়তে চান, তাদের প্রতি  আমার সহানুভূতি আছে। এটি সম্ভবতঃ আমার অতীত ও বর্তমান রাজনৈতিক চিন্তার কারণেই হয়ে থাকবে, যদিও আমি নিজেকে বামপন্থী বলি না। 

যাহোক, আমার বিশ্বাস, বামপন্থীরা যদি 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা'র বায়বীয় ধারণা অতিক্রম করে স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষিত তিন প্রতিশ্রুতি 'সাম্য, মনুষ্য মর্য্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার'কে একটি বাস্তব কর্মসূচিতে অনূদিত করে রাষ্ট্রক্ষমতা অর্জনের লক্ষে নতুন রাজনৈতিক পথচলা শুরু করতে সক্ষম হয়, ভবিষ্যত তাদের।


EmoticonEmoticon