অশিক্ষা, কুশিক্ষা কিংবা অল্পশিক্ষার কারণে গণতন্ত্র সম্পর্কে অদ্ভূত ধারণা রয়েছে অনেকের। এদের মধ্যে এমনকি পশ্চিমের গণতান্ত্রিক দেশে বাসকরা লোকজনও আছে, যারা মনে করে যাচ্ছেতাই বলা ও করাই বুঝি গণতন্ত্রিকতা!
যাচ্ছেতাই বলা ও করার সাথে গণতন্ত্রের কোনো সম্পর্ক নেই।যাচ্ছেতাই বলা ও করা হয়তো কোনো কোনো নৈরাষ্ট্রবাদ অনুমোদন করে, যাকে ইংরেজীতে এ্যানার্কিজম বলা হয়।
বিশ্বের কোথাও এমন গণতন্ত্রের ধারণা নেই , যেখানে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার আন্দোলনের অনুমোদিত হয়। কাউকে রাজা হতে দিয়ে যেমন রিপাবলিক হয় না, তেমনি গণতন্ত্র-বিরোধী শাসনতন্ত্রের আন্দোলনের অনুমোদন দিয়ে গণতন্ত্র হয় না।
যাচ্ছেতাই করা বা বলার নাম গণতন্ত্র নয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ভৌট দিয়ে সংখ্যালঘু মানুষের অধিকার হরণ করার নামও গণতন্ত্র নয়। গণতন্ত্র হচ্ছে সকলের জন্যে সমান মানবাধিকার স্বীকার করে তার পরিপূরক-রূপে সংখ্যাগরিষ্ঠের যুক্তিসিদ্ধ ও বস্তুনিষ্ঠ ধারণা ও মতের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা।
যে-আদর্শবাদ মানুষের তৈরী শাসনব্যবস্থায় বিশ্বাস না করে, তাদের দাবী-মতো একটি প্রাচীন রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ঐশ্বরিক ও পবিত্র মনে করে তা দেশ ও জাতির ওপর আরোপ করতে চায়, তা সংজ্ঞানুসারে গণতন্ত্র-বিরোধী। আর গণতান্ত্রিক হওয়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে এই প্রবণতার বিরুদ্ধে লড়া।
পরিশেষে, ঐশ্বরিক ও পবিত্র দাবী-করা শাসনতন্ত্র কিংবা ঈশ্বরের আশির্বাদপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও তার বংশের লোকদের পূর্ব-নির্ধারিত ও আরোপিত শাসনকে প্রত্যাখ্যান ও পরাস্ত করা ছাড়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। গণতন্ত্রকে জন্ম নিতে হয় এসব পূর্বনির্ধারিত ও আরোপিত শাসনের কবরের ওপর।
দুর্ভাগ্যবশতঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী নিলেই যেমন প্রকৃত শিক্ষিত হওয়া যায় না। একইভাবে গণতন্ত্রিক দেশে বাস করে গণতন্ত্রের সুবিধাদি ভোগ করলেই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ অর্জন করা যায় না। গণতন্ত্র হচ্ছে একটি সেক্যুলার দার্শনিক ধারণা, যেখানে ধর্মীয় শাসনতন্ত্রের কোনো স্থান নেই।
EmoticonEmoticon