শুক্রবার, ১১ জানুয়ারী, ২০১৯

সুমনরা মরার জন্যই কি এ স্বাধীনতা?

মা ফিরুজা বেগম বারবার তাঁর ছেলে সুমনকে ফিরিয়ে আনতে সবাইকে অনুরোধ আর বিলাপ করছিলেন।

দুই বছর হলো ঢাকার সাভারের আনলীমা টেক্সটাইলে সিজারম্যান হিসেবে সুমন কাজ করতেন। গত বছর সুমন বরিশালের সামিয়া বেগমকে বিয়ে করেন। গত মঙ্গলবার মধ্যাহ্নভোজের বিরতি শেষে সুমনসহ কয়েকজন সহকর্মী কারখানায় ফিরছিলেন। তখন স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলছিল। এ সময় কয়েকজন পুলিশ সদস্য সুমনের পথ আটকায়। সুমন আনলীমার কর্মী পরিচয়পত্র দেখিয়ে বলেছিলেন তিনি স্ট্যান্ডার্ডের শ্রমিক নন। নিজের কারখানায় যাচ্ছেন। পুলিশ তা না শুনে তাঁকে এলোপাতাড়ি মারধর করে ফেলে রাখে। পরে পুলিশ লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে শ্রমিকদের সরিয়ে আহত সুমনকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্মরত চিকিৎসক সুমনকে মৃত ঘোষণা করেন।

অথচ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান সেলিম রেজা প্রথম আলোকে বলেন, সুমন মিয়ার বুকে ধারালো ও সুচালো অস্ত্র অথবা বুলেটের আঘাত রয়েছে। আঘাতজনিত কারণে সুমন মারা গেছেন।

নিহত সুমনের জন্য কোনো মামলা  হয়নি।’ ব্যাপারে এখনো কিছু জানি না বলে ওসি দায়িত্ব সেরেছেন।

হুমায়ূন আজাদ বলেছিলেন, 'যে বালিকাটি ভোর হওয়ার সাথে সাথে ছুটছে কারখানা অভিমুখে, চোখ আর আঙুল জীর্ণ করে শেলাই করছে সভ্যতার মুখোশ, তার সাথে সভ্যতা যেন সভ্য আচরণ করে, তাকে দেয় খাদ্য, বাসস্থান, নিরাপত্তা, তাকে ক্রীতদাসী না করে তাকে যেন দেয় মানুষের মর্যাদা, যা তার প্রাপ্য সহজাতভাবে।'

বাঁচতেই দিচ্ছে না,দালালতন্ত্র বলছে রাস্তা জ্যাম করে নাগরিক পরিবেশ নষ্ট করছে! রক্তখেকো সব দাস।

মাত্র কয়েক শ টাকা মজুরি বাড়ানোর জন্য রাস্তায় নামতে হলো শ্রমিকদের।নতুন বছরের শুরুতে শিল্পমালিকেরা পেলেন কর-সুবিধায় আরও ছাড় আর নাছোড় শ্রমিকেরা পেলেন এক সুমনের গুলিবিদ্ধ লাশ।

বাংলাদেশের জিডিপি (৭.৮৬ %) নিয়ে ভারতও (৭.৩ %) হিংসা করবে। মাত্র পাঁচ বছরে বিশ্বের সুপার-ধনীদের মধ্যে ‘ফার্স্ট’ হওয়ার রেকর্ডে সুপারম্যানের দেশ আমেরিকাও লজ্জায় লাল। কিন্তু সবচেয়ে বিব্রতকর হলো পোশাকশ্রমিকদের আদেখলেপনা। কী নিদারুণ বৈপরীত্য। মাত্র কয়েক শ টাকা মজুরি বাড়ানোর জন্য জীবন দিয়ে তাঁরা আমাদের এত সব রেকর্ডের সুনামহানি করে দিচ্ছেন!

আন্দোলন হলেই মালিকেরা বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে শ্রমিকদের উসকানো হচ্ছে। কিন্তু আসল উসকানি তো বঞ্চনা থেকে আসে। মজুরির আন্দোলন চলছিলই, মাঝখানে পড়ল নির্বাচন-বিরতি। আট হাজার টাকা নিম্নতম মজুরি ঘোষণা করে ২৫ নভেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। চলতি মাস থেকে নতুন হারে মজুরি পাওয়ার কথা। সেটা ঠিকমতো না দেওয়াই তো আসল ষড়যন্ত্র।

২০১৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী ফি বছর ৫ শতাংশ হারে মূল মজুরি বাড়ার কথা। কিন্তু তাতেও শুভংকরের ফাঁকি। ৫% হারে বাড়লে যাঁর এখন পাওয়ার কথা ৫,২০০ টাকা, তিনি পাচ্ছেন ৫,১৬০ টাকা। অর্থাৎ কমেছে ৪০ টাকা! যাঁর পাওয়া উচিত ৮,৯৩২ টাকা, তিনি পাচ্ছেন ৮,৫২০ টাকা। পুরো ৪১২ টাকা কম! তা ছাড়া, ৩, ৪ ও ৫ নম্বর গ্রেডের অনেক শ্রমিকের বর্তমান বেতন আর বর্ধিত বেতন প্রায় একই। তার মানে আসলে বাড়েইনি। কত ভাগ কারখানা নিয়ম মেনে বেতন দেয়? এত আন্দোলন, এত কষ্ট, এত আলোচনা বিফলের ষড়যন্ত্রটা আসলে কার?

শ্রমিক ছাঁটাই, টার্গেটের চাপ বাড়ানো এবং নির্যাতন করে শ্রমিক উসকানো কি ষড়যন্ত্রের মধ্যে পড়ে?

বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির উদ্যোগে ‘কী করে বাঁচে শ্রমিক’ নামক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে: ‘৬১ শতাংশ শ্রমিক মনে করেন, তাঁর আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি।...অতিরিক্ত ব্যয়ের বোঝা সামাল দেওয়ার জন্য শ্রমিকেরা নিয়মিত ঋণ নেন এবং খাদ্য ও বাসাভাড়া বাবদ ব্যয় কমিয়ে দেন। গড়ে একজন পোশাকশ্রমিক দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের পাশাপাশি মাসে গড়ে ৬০ ঘণ্টা পর্যন্ত ওভারটাইম করেন। ফলে শ্রমিকেরা প্রয়োজনীয় ঘুম ও বিশ্রাম থেকে বঞ্চিত হন...আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড এবং দেশি মালিকের মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা কমিয়ে আনতে পারলে বিদ্যমান কাঠামোর মধ্যেই পোশাকশিল্পে ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা করা সম্ভব।’

মালিকদের যে ছাড় সরকার দিচ্ছে, তা জনগণের ভাগ থেকেই দিচ্ছে। এর ছিটেফোঁটা দিয়ে লাখো শ্রমিকের এবং তাঁদের সন্তানদের কল্যাণ সম্ভব।

হাসলে আপনাদের দাতেঁ মনুষ্যমাংস লেগে আছে দেখা যায়   ,
আপনাদের সুন্দরী স্ত্রীদের চুড়িগুলো পুড়ে যাওয়া আমার সেলাই দিদিমনিদের হাড়  দিয়ে বানানো;

আপনাদের শার্টের বোতাম পাহাড়ে চাপা পড়া  করুন আমার মাটির সহোদরের কাতর চোখ ।
এত ক্ষিধা লইয়া বুঝি আপনাদের  এই পাহাড় খাওয়ার ক্ষিধা?হে উচু মানুষেরা...,

একদিন ঠিকই জেনে যাবে আমাদের মাটিরওয়ারিশরা
রক্ত আর মৃত্য সয়ে পাল্টানো যাবে না জীবন,

ভুখা দুনিয়ায় জুলুম চালায় যারা কেড়ে নিবে তাগো সব সুখের খোয়াব।


EmoticonEmoticon