গতকাল আমাকে অনুরোধ করা হয়েছিলো ম্যাক্স মুলার সম্পর্কে কিছু লিখার। বলেছিলাম, লিখবো। কিন্তু কবে লিখবো তা ভাবিনি এবং বলিওনি।
ম্যাক্স মুলার ছিলেন কার্ল মার্ক্সের সমসাময়িক এবং তাঁর মতোই ইংল্যাণ্ডে স্থিত এক জার্মান দার্শনিক। মার্ক্স যেমন সমাজ বিকাশের 'বিজ্ঞান' আবিষ্কার করেছিলেন, মুলারও তেমন ধর্ম বিকাশের 'বিজ্ঞান' আবিষ্কার করেছিলেন।
মার্ক্স কিংবা মুলার আদৌ 'বিজ্ঞান' আবিষ্কার করেছিলেন কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে, কিন্তু সমাজ বিকাশের নিময় ও ধর্ম বিকাশের নিয়ম অনুধ্যান বিষয়ে যথাক্রমে মার্ক্স ও মুলারের অবদান অনস্বীকার্য।
ম্যাক্স মুলার কম্পার্যাটিভ রিলিজিয়ন বা তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বর পথিকৃ্ৎ। তিনি ইউরোপে প্রাচ্যবিদ্যারও - বিশেষতঃ ভারতবিদ্যার - অগ্রদূত। মুলার নিয়ে বিস্তারিত নিশ্চয় লিখবো। তবে আজ ফেইসবুক ধর্ম বিষয়ে যে নানা প্রকার আলোচনা হচ্ছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে মুলারের একটি কথা - যা আমার কাছে অতি মূল্যবান মনে হয় - না বলে পারছি না।
মুলার বলেছিলেন, "He who knows one, knows none", যার বঙ্গানুবাদ হবে, "একটি জানে যে, কিছুই জানে না সে।" কথাটা তিনি বলেছিলেন ধর্ম বিষয়ে। মুলারের এই উদ্ধৃতির মধ্যেই রয়েছে কম্পার্যাটিভ রিলিজিয়ন বা তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বর তাৎপর্য্য ও গুরুত্ব।
একটি ধর্ম-বিশ্বাসের পরিমণ্ডলে জন্মে এবং সেই সুবাদে একে 'শ্রেষ্ঠ' জেনে সাধারণভাবে ধর্ম বিষয়ে জ্ঞানী হওয়া যায় না। এটি সকলের ধর্মের ক্ষেত্রেই সত্য।
বস্তুতঃ সাধারণভাবে ধর্ম বিষয়ে জ্ঞানী হতে হলে একজনকে একের অধিক বহু ধর্ম নিয়ে গভীরে অনুধ্যান করতে হবে। আর, তা করতে পারলেই আপন বিশ্বাস-অবিশ্বাস নির্বিশেষে মানবজাতির নানা তথা সকল ধর্ম বিষয়ে বোধ ও জ্ঞান গড়ে ওঠে। এখানেই কম্পার্যাটিভ রিলিজিয়ন বা তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বর তাৎপর্য্য ও গুরুত্ব।
দুর্ভাগ্যবশতঃ ধর্ম নিয়ে 'জ্ঞান' দানকারীদের অধিকাংশই নিজ-বিশ্বাসিত ধর্মের বাইরে অন্য কোনো ধর্ম সম্পর্কে প্রকৃত কোনো জ্ঞান, আগ্রহ বা শ্রদ্ধা ধারণ করেন না। ফলে, তারা তারস্বরে নিজের ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব দাবী করে বিশ্বকে ধর্মসমূহের হাঁকাহাঁকি-ডাকাডাকির এক ষ্ট্রীট-মার্কেটে পরিণত করেছেন।
ম্যাক্স মুলার আমাদেরকে শেখান কীভাবে জন্মসূত্রে বিকশিত বিশ্বাসের ঊর্ধ্বে উঠে অপরাপর বিশ্বাসের যুক্তি বুঝার চেষ্টা করে বিশ্ব-মানবতার বিশ্বাস সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হয়।
EmoticonEmoticon