এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে আরো কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর জানা থাকা আবশ্যক। কেননা এছাড়া বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ থাকে।
হাসপাতালে একজন ডাক্তারের কাছে হিন্দু রোগী, মুসলিম রোগী, বৌদ্ধ বা খ্রিস্টান রোগী এইভাবে কি রোগ নির্বাচনের বিবেচ্য বিষয় হবে? হিন্দু হলে এক রকমের চিকিৎসা আর মুসলিম হলে আরেক রকমের চিকিৎসা বিষয়টা কী এই রকম হবে?
ছাত্র ইউনিয়ন কি? অধিকার বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদী সোচ্চার মঞ্চ। যেখানে ছাত্রদের অধিকারের পাশাপাশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। লক্ষ্য করুন, যদি ছাত্ররা অধিকার বঞ্চিত, শোষিত, নির্যাতিত না-হতো তাহলে কী ছাত্র ইউনিয়ন তৈরি হতো? অবশ্যই না। সমস্যা আছে বলেই ছাত্র ইউনিয়ন আছে। যেদিন সমস্যা থাকবে না সেদিন ছাত্র ইউনিয়নও থাকবে না। এবার দেখুন, ছাত্রদের সমস্যা সনাক্ত করতে গিয়ে কে হিন্দু ছাত্র আর কে মুসলিম ছাত্র এইগুলি আমাদের বিবেচ্য বিষয় হতে পারে? আমরা জানি ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি নিয়ে একটা সমাজ তৈরি হতে পারে না। একই সমাজে হিন্দু ও মুসলিম একত্রে না থাকলেও একই রাষ্ট্রে বিভিন্ন ধর্মের সমাজের মানুষ বসবাস করতে পারে। সেইক্ষেত্রে রাষ্ট্র একক ধর্মের বা সমাজের মানুষের আদৌলে শিক্ষানীতি প্রস্তুত করতে পারে না। একজন নাগরিক কে আমরা বলি না হিন্দু নাগরিক বা মুসলিম নাগরিক। যখন রাষ্ট্র সাধারণ শিক্ষানীতি প্রস্তুত করবে তখন হিন্দুদের জন্য এক রকমের আর মুসলিমদের জন্য আরেক রকমের করবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেতন বৃদ্ধি হলে শুধু হিন্দু ছাত্রদের বাড়বে মুসলিম ছাত্রদের বাড়বে না বিষয়টা এমনও হতে দেখি না। একই দাবিতে দুই ধরণের স্লোগান...হিন্দুদের জন্য এক রকম আবার মুসলিমদের জন্য আরেক রকম...এইটা দাবি আদায়ে ভাষা হতে পারে না। সমস্যা যেমন সার্বজনীন স্লোগানও হতে হবে...সার্বজনীন। সেইক্ষেত্রে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন একটি সমাজ বা ধর্মভিত্তিক সংগঠন নয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন সমাজ থেকে উঠে আসা ছাত্রদের ঐক্যবদ্ধ করে ছাত্রদের সার্বজনীন ভাষায় কথা বলার একটি প্রতিবাদী মঞ্চ হচ্ছে ছাত্র ইউনিয়ন।
ডাক্তারের কাছে যেমন রোগীর রোগ সনাক্ত করতে গিয়ে ধর্ম পরিচয়টা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেনি, তেমনই শিক্ষার সমস্যা দূর করতে ধর্ম পরিচয়টা মূখ্য নয়। একজন ছাত্র তার ব্যক্তিগত জীবনে পরিবারে বা সমাজে ধর্মের লালন পালন করলেও রাষ্ট্রের ন্যায় ছাত্র ইউনিয়ন নামক সংগঠনে ধর্মের চর্চা করার সুযোগ নেই। কারণ ছাত্র ইউনিয়ন হিন্দু বা মুসলিমদের সংগঠন নয়। এইটা বাংলাদেশ অঞ্চলে বিভিন্ন সমাজ থেকে উঠে আসা ছাত্রদের সংগঠন। একটি গণ ছাত্রসংগঠন।
এরপরেও প্রশ্ন থেকে যায় মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা কী করবে? তারা কী ছাত্র ইউনিয়ন করতে পারবে? এই বিষয়ে ছাত্র ইউনিয়নের বক্তব্য পরিষ্কার, যেকোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১২ বছর বয়সের ছাত্র সদস্য হতে পারবে। সেইক্ষেত্রে কেউ যদি মাদ্রাসায় পড়া সত্ত্ব্যেও ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্রে আস্থা রাখে তাহলে অবশ্য করতে পারবে কিন্তু ছাত্র ইউনিয়ন মাদ্রাসা শিক্ষানীতিকে সমর্থন করে না। একই দেশে দুধরনের শিক্ষানীতিকে সমর্থন করে না। সেইজন্য সদস্যগণ ব্যক্তিগত ভাবে ধর্মচর্চা করলে, সংগঠন ততক্ষণ পর্যন্ত বাঁধা দিবে না যতক্ষণ অন্যের ক্ষতি না হচ্ছে। সংগঠন থেকেও ধর্মীয় প্রচারণা করা হবে না। সকল ছাত্রদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাই ছাত্র ইউনিয়নের প্রধান কর্তব্য। সেক্ষেত্রে ধর্মীয় পরিচয় মূখ্য হয়ে উঠে না।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন তাহলে আপনারা কী নাস্তিক? প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধু আপনি কী জানেন, ভারতীয় উপমহাদেশে যারা বেদে বিশ্বাস করে না তারা নাস্তিক আর যারা বেদে বিশ্বাস করে তারা আস্তিক। এইভাবে চিন্তা করলে এই অঞ্চলে সকল মুসলিম, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানরাও নাস্তিক। আর পশ্চিমা দর্শনে বিচার করলে যিনি ঈশ্বরে অবিশ্বাস করেন তিনি নাস্তিক। আচ্ছা, লক্ষ্য করুন, প্রত্যেকটা মানুষই ভিন্ন। তাদের পছন্দ, রূচিবোধ, মূল্যবোধে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। সেইক্ষেত্রে বিশ্বাস ব্যক্তিগত। আর একটি সংগঠন হয় বহুব্যক্তিগত। যেখানে বহুব্যক্তি সেখানে বিশ্বাসও বহু হয়। বহুবিশ্বাস দিয়ে একক ঈশ্বরকে কিভাবে বিশ্বাস করব? তাই ছাত্র ইউনিয়ন মনে করে ঈশ্বর বিশ্বাস এইটা সাংগঠনিক বিষয় নয়। সদস্যরা ব্যক্তিগত ভাবে যার যার বিশ্বাস অনুসারে ঈশ্বরের প্রার্থনা করতে পারে। সংগঠন কোন হস্তক্ষেপ করবে না। ইতিমধ্যে আমরা দেখেছি যিনি ঈশ্বরে অবিশ্বাস করেন তিনি নাস্তিক। সংগঠন কী বলছে ব্যক্তিজীবনে আপনাকে অবিশ্বাসী হতে হবে? তাহলে আপনাদের অভিযোগ মিথ্যা। যেদোষে ধর্মের চর্চা ছাত্র ইউনিয়ন করে না ঠিক একই দোষে নাস্তিক্যবাদ চর্চাও ছাত্র ইউনিয়ন করে না। আমাদের কাছে সংগঠনগত ভাবে একজন মানুষের পরিচয় তিনি ছাত্র কিনা সেইটা মূখ্য। তিনি নারী, পুরুষ, আস্তিক বা নাস্তিক কিনা এই পরিচয়টা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে না।
EmoticonEmoticon