সোমবার, ৪ মার্চ, ২০১৯

প্রতিপক্ষের রোগে-মৃত্যুতে উল্লাসঃ বাঙালীর রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রসঙ্গে

ওবায়দুল কাদেরের অসুস্থতায় উল্লাস এবং গোলাম আযমের লাশের ওপর জুতো নিক্ষেপের যে রুচি ও মূল্যবোধ, তা একই সংস্কৃতিজাত। আর, এটি হচ্ছে বাঙালীর রাজনৈতিক সংস্কৃতি।

নিঃসন্দেহে এটি একটি পশ্চাৎপদ রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি। কিন্তু কেনো এমনটি হয়? এই প্রশ্নের উত্তরে আমার সূত্রায়ন হচ্ছে নিম্নরূপঃ

একটি রিপাবলিকের অপারেটিং সিষ্টেম যেখানে হওয়া উচিত ডেমোক্র্যাসি বা গণতন্ত্র, সেখানে তার বদলে যদি ফিউডালিজম বা সামন্ততন্ত্র দিয়ে তা চালানো চেষ্টা চলে, তাতে যে অমীমাংসেয় দ্বন্দ্ব ও সঙ্কট তৈরি হয়, তারই দূষণ-পরিণতি রূপে এই রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির সৃষ্টি।

বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে একটি সশস্ত্র ও রক্তাক্ত বিপ্লবের মধ্য দিয়ে একটি রিপাবলিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে, কিন্তু এর অপারেটিং সিষ্টেম হিসেবে গণতন্ত্রের বদলে পর্যায়ক্রমে দলীয় স্বৈরতন্ত্র, আনুষ্ঠানিক সামরিক স্বৈরতন্ত্র, অনানুষ্ঠানিক সামরিক স্বৈরতন্ত্র এবং বর্তমানে বংশসূত্রে রাষ্ট্রের মালিকানা দাবীকরা এক অদ্ভূত সামন্ত স্বৈরতন্ত্র চলার ফলে, এর অনিবার্য উৎপাদন হিসেবে এই রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি গড়ে উঠেছে।

বাঙালী জাতিকে যদি এই রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি থেকে মুক্তি পেতে হয়, তাদেরকে অতি-অবশ্যই রাষ্ট্রের অপারেটিং সিষ্টেম পরিবর্তন করতে হবে। তবে, এই পরিবর্তনের আগে তাদেরকে বুঝতে হবে 'রিপাবলিক' বলতে কী বুঝায়। যতোদিন না পর্যন্ত এই জাতি 'রিপাবলিক' বুঝতে পারছে, ততোদিন পর্যন্ত তার জন্যে উপযুক্ত অপারেটিং সিষ্টেম যে গণতন্ত্র, সে-সত্যটি উপলব্ধি করতে পারবে না।

ঐতিহাসিকভাবে, রিপাবলিকের প্রয়োজনীয়তাবোধ বিকশিত হয় ব্যক্তির ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত স্বাধীনতাবোধ, অধিকারবোধ, আত্মপরিচয়বোধ ও মর্য্যাদাবোধ থেকে। তাই, বাঙালীকে এই বোধের ভিত্তিতে যথার্থে একটি রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করে সফল হতে হবে।

আর, এটি পারলে এই জাতি বিশ্বের বুকে একটি সভ্য, সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী জাতি হিসেবে বিকশিত ও প্রতিষ্ঠিত হয়ে তার যোগ্য বিশ্বভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে।


EmoticonEmoticon