বুধবার, ১৩ মার্চ, ২০১৯

প্রগতিশীলদের - প্রতিক্রিয়াশীলতাও - দেখার মত !!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহসভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হয়েছেন কোটা আন্দোলনকারীদের নেতা হিসাবে পরিচিত নুরুল হক নূর। কোটা নিয়ে সরব থাকার কারণেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি গ্রহন যোগ্যতা অর্জন করেছেন। চলমান ছাত্র রাজনীতির বাইরে তিনি নিজের রাজনীতির জায়গা তৈরী করে নিয়েছেন তাকে অভিনন্দন।

কোটা আন্দোলনের পুরোভাগে থাকা অনেকেই ৭১'এর ঘাতক জামাত - শিবিরের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ততা আছে, এটি 'কোটা সংস্কার চাই' মর্মে  পেইজটি যারা নিয়মিত চোখ বুলিয়েছেন তাদের ভুলে যাবার কথা নয়। আমরা অনেকেই কোটা সংস্কার আন্দোলনে সমর্থন করেছি, একইসাথে এটিও মনে করিয়ে দিতে চেয়াছি এই আন্দোলনে জামাত - শিবিরের প্রত্যক্ষ সহযোগীতা আছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা রাজনৈতিক মার প্যাঁচ খুঁজতে যায়নি, নিজেদের অধিকার নিশ্চিত হচ্ছে কিনা সেইটিই দেখতে চেয়েছে।
এখন নুরুল হক নূর ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন মর্মে সার্টিফিকেট মিলছে। এই সার্টিফিকেটের রাজনীতি ভবিষ্যতে ভিন্নরুপে দেখা দেবে তা নিশ্চিত।
কমিউনিষ্টরা তাদের রাজনৈতিক মতাদর্শ গোপন রাখে না। রাজনৈতিক মতাদর্শ গোপন রেখে রাজনৈতিক অবস্থান নেয়া হচ্ছে চরম সুবিধাবাদিতার লক্ষণ

ক্ষমতাসীন মহল বরাবরই এই আন্দোলনকে ডান্ডা পেটা করে বন্ধ করতে চেয়ে এই আন্দোলনের গ্রহনযোগ্যতা বাড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নিজে চট্টগ্রামে বলেছিলেন 'কোটা আছে কোটা থাকবে'। আন্দোলনের তীব্রতায় তিনি ও তাঁর প্রশাসন কোটা সংস্কারে কমিটি করেছিলেন, একটি পর্যায়ে ক্ষুব্ধতার সাথে প্রধানমন্ত্রী পুরো কোটা ব্যবস্থাই কোটা বাতিল করে দিয়েছেন।

ডাকসু নির্বাচন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অযাচিত হস্তক্ষেপ করে নিজেদের গ্রহনযোগ্যতা কমিয়েছেন। এই রকম গুবলেট করা নির্বাচন ডাকসু ইতিহাসে আর হয়নি।

ক্ষমতাসীন মহলের নানান কর্মে দেশবাসী বিরক্ত ও ক্ষুদ্ধ, এর কিছুটা প্রকাশ পেয়েছে ডাকসু নির্বাচনে। বিশেষ করে মেয়েদের হলে একচেটিয়া বিজয় নিশ্চিত করেছে স্বতন্ত্র ও কোটা সংস্কার গ্রুপ।

রাজনীতিতে একচেটিয়া আধিপত্যের বিরুদ্ধে জনমত সক্রিয় আছে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটতে বাধ্য। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ঢাল বানিয়ে আওয়ামী লীগ যে রাজনীতি করছে সেখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে?
ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ অর্থনৈতিক লুট বন্ধ করতে তো পারেইনি, কোন কোন ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীরাই সে লুটের ভাগিদার হয়েছেন। আওয়ামী লীগ নিজের রাজনীতিতে পেশী শক্তির উত্থান ঘটিয়েছে, ছাত্রলীগের দুবৃত্তপনা ও হামবড়া ভাবের জবাবটি ডাকসু নির্বাচনে কিছুটা দিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

ডাকসু নির্বাচনে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো, নিজেদের ব্যার্থতার চুলচেরা বিশ্লেষণ করবে কিনা কে জানে? কোটা সংস্কার চাই গ্রুপ নিজেরা সব ঘটানায় প্রতিক্রিয়া দেখাতে যায়নি, নিজেরা ঘটানার জন্ম দিয়ে তার সুফল ঘরে তুলেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল তাবৎ প্রগতিশীল দাবিদার ছাত্র সংগঠন, সরকার ও ক্ষমতাসীন ছাত্র সগঠনের কাজ -কর্মের প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে দিনমান পার করেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রগতিশীলদের এই আচরণ আমলে নেয়নি বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। প্রচলিত রাজনীতির বাইরে নিজেদের রাজনীতি নির্মাণে বাম সমর্থিত দলগুলোকে ভাবতে হবে বেশ জোরেশোরে।

রাজনীতি ভাল না এই মনোভাব ক্রমশই জোরালো হচ্ছে, এই মনোভাব জোরালো করার পিছনে সর্বদাই মৌলবাদ সক্রিয় থাকে। এই সক্রিয়তার মধ্য দিয়ে ঘটনা পরাম্পরায় মৌলবাদ সামাজিক ইস্যুতে নিজেদের কর্মীদের মাঠে নামিয়ে দিয়ে বাতাস দিতে থাকে। দিনশেষে মৌলবাদ সামাজিক আন্দোলনের ফসলকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে। প্রগতিশীলদের খুঁজে বের করতে হবে নিজেদের খেয়ে কাদের রাজনৈতিক লাভালাভের জন্য তারা মাঠে আছে?

এই ডাকসু নির্বাচনের পরে নানান জনের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হচ্ছে দেশে বিপ্লব আসন্ন। তা আসন্ন বিপ্লবে আপনাদের অবস্থানটিও চিহ্নিত করে রাখুন।
দেশে আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলা রাজনীতির বাইরে ইসলামিষ্ট একটি ধারা ক্রমশই পুষ্ট হচ্ছে। প্রগতিশীল রাজনৈতিক বলে দাবিদাররাও আওয়ামী লীগের বিরোধিতায় ক্রমশ সেই ইসলামিষ্ট ধারাকে জনপ্রিয় করছেন কিছুটা বুঝে আর বাকিটা অন্ধ আওয়ামী লীগ বিরোধিতার কারণে। ধারণা করি নুরুল হক নূর এখন প্রগতিশীল দাবিদার এই গ্রুপটির কাছে বেশ আদরণীয় হয়ে উঠবেন। নানান বাদ প্রতিবাদ সংগঠিত করতে তারা নূরের স্মরণাপন্ন হবেন আসন্ন বিপ্লবের জজবা বাড়াতে ডাকসু ভিপি বলে কথা।
তা এই বিপ্লবে আপনাদের রাজনীতি থাকবে তো?

ইরানে শাহ বিরোধী আন্দোলনে ইরানের কমিউনিষ্ট পার্টি অংশ নিয়েছিল। মোল্লাতন্ত্রকে সর্বাত্মক সহায়তা করার ফল পেয়েছিল নিজেদের ফাঁসীকাষ্ঠে ঝুলতে দেখে।


EmoticonEmoticon