বৃহস্পতিবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৯

ধর্ষণমুক্ত সমাজ চাইলে মানুষের রাষ্ট্র গঠন করতে হবে...

বাংলাদেশের ৯৯ ভাগ মেয়েই জীবনে কোনো না কোনো সময় যৌন নিপীড়ন বা ধর্ষণের শিকার হয়। কিন্তু ধর্ষক পরিচালিত রাষ্ট্র সমাজ ব্যবস্থার ভয়ে লজ্জায় অধিকাংশ মেয়েই যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণের ঘটনা চেপে যায়।

দুর্নীতিগ্রস্থ ভোগবাদী কূপমুন্ডক ধর্মীয় কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজে রাষ্ট্রের ধর্ম যা তাই শিখছে এখানকার অধিবাসিরা তাই সে করছে নারীদের সঙ্গে।

আমাদের রাষ্ট্রের নেতাদের চরিত্র কি? আমাদের ধর্মীয় হুজুরদের চরিত্র কি? আমাদের শিক্ষকদের চরিত্র কি? আমাদের রাষ্ট্রের চরিত্র কি? রাষ্ট্র আমাদের কি শেখাচ্ছে? আদালতে গেলে ন্যায় বিচার পাই না, থানায় গেলে পুলিশের হয়রানি, রাস্তায় গেলে কার আগে কে যাবে অসুস্থ প্রতিযোগিতা, ব্যবসায়ি মানে লুটেরা ভেজালে ভরপুর- সরকারী অফিসে গেলে ঘুষ দুর্নীতি.... এই তো আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থা?

নুসরাতই ধর্ষিত যৌন নিপীড়িত শেষ মেয়ে নয়। এরপর কারো মেয়ে, কারো বোন, কারো মা, কারো শিশু সন্তান ধর্ষিত হবে। হুজুর দ্বারা ধর্ষিত হবে, ইমাম দ্বারা ধর্ষিত হবে, শিক্ষক দ্বারা ধর্ষিত হবে, নেতা দ্বারা ধর্ষিত হবে, পুলিশ দ্বারা ধর্ষিত হবে, ছাত্র দ্বারা ধর্ষিত হবে- সকল জাতের কাপুরুষ দ্বারা নারী ধর্ষিত হবে। ঘরে ধর্ষিত হবে, বাহিরে ধর্ষিত হবে- যানবাহনে ধর্ষিত হবে, মসজিদে ধর্ষিত হবে, মন্দিরে ধর্ষিত হবে, মাদ্রাসায় ধর্ষিত হবে- স্কুলে ধর্ষিত হবে- নারী মানেই এই রাষ্ট্রের পুরুষের কাছে যেনো গনিমতের মাল- এই রাষ্ট্র আমাদের চিন্তাকে এভাবে তৈরী করেছে।

আপনি ঘুম থেকে কয়টায় উঠবেন- এটা ঠিক করে দেয় এই রাষ্ট্র
আপনি কোন রাস্তা দিয়ে হাঁটতে পারবেন- এটা ঠিক করে দেয় এই রাষ্ট্র
আপনার গ্যাস বিল বিদ্যুৎবিল কতো হবে- এটাও ঠিক করে দেয় এই রাষ্ট্র
আপনার সন্তানের PSC/JSC পরীক্ষা হবে কি হবে না- এটাও ঠিক করে দেয় এই রাষ্ট্র
সারের দাম কতো হবে, ধানের দাম কতো হবে- এটাও ঠিক করে দেয় এই রাষ্ট্র
আপনার মেয়েকে কয় বৎসর বয়সে বিয়ে দিতে পারবেন এটাও ঠিক করে দেয় এই রাষ্ট্র
তার মানে রাষ্ট্রই আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করে- আমরা রাষ্ট্রের দাস। একসময় আমাদের পূর্বপুরুষরা ছিলো পায়ে শেকলপরা দাস। আর এখন আমরা হলাম শেকলহীন দাস। আমরা চেতনার দাস, চিন্তার দাস। কে আমাদের শত্রু, কে আমাদের মিত্র, কোনটা আমাদের ভাল, আর কোনটা আমাদের মন্দ এটা আমাদেরকেই ভাবতে হবে... রাষ্ট্রের হাতে ভাবনা ছেড়ে বসে থাকলে আমরা ধর্ষিত হতেই থাকবো... এই রাষ্ট্র আমাদের ধর্ষণ করতেই থাকবে...

এখন আমরা যে রাষ্ট্রে বসবাস করি এটা এটা লুটেরাদের রাষ্ট্র, ব্যাংক লুটেরা, শেয়ার বাজার লুটেরা, ভোট লুটেরা, ইজ্জত লুটেরা, লুটেরাদের রাষ্ট্র। দেখুন না নুসরাতের যৌন নিপীড়ক একজন জামাতি মাদ্রাসা হুজুর আর তার সহযোগি হলো সরকারী দলের পাণ্ডারা। আর যথাযথ দায়িত্ব পালন করেনি থানার ওসির। তেমনি ভাবে সেনা নিবাসে ধর্ষিত ও খুন হলো তনু- কি হলো? ধর্ষক কারা? আর পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে মেয়েদের যৌন নিপীড়ন করলো কারা? নামে ভিন্ন হলেও ধর্ষকরা সব একজোট। লুটেরাদের চরিত্র এক।

সুতরাং রাষ্ট্রই আপনার জীবনের পরিচালক- আপনি হলেন রাষ্ট্রের দাস। আপনি যতোদিন এই রাষ্ট্রের চরিত্র বুঝবেন না ততো দিন আপনার পকেটের টাকা, লুটেরাদের পকেটে চলে যাবে, আপনার মেয়ে ধর্ষিত হবে- সড়ক দুর্ঘনায় আপনার প্রিয়জন খুন হবে-

ধর্ষণমুক্ত যৌন নিপীড়নমুক্ত রাষ্ট্র গড়তে চাইলে তবে শোষণমুক্ত বৈষম্যমুক্ত অসাম্যমুক্ত অন্যায়মুক্ত- মানুষের রাষ্ট্র গড়া লাগবে- লড়াই করা লাগবে প্রতিবাদ করা লাগবে। নুসরাত মৃত্যুর আগে ‘শেষ পযন্ত লড়াই করে’ সেই শিক্ষাই আমাদের দিয়ে গেছে... সে মহান লড়াকু বীরের মতো পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে...


EmoticonEmoticon