বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৯

যে সূর্য কখনো অস্ত যায় না

১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল; চট্টগ্রামকে নতুন করে চিনেছিল বিশ্ব,অবাক হয়ে দেখেছিল এর বীরত্ব! ভারতবর্ষের কেউ যা আগে করে দেখাতে পারেনি, তা করে দেখিয়েছিলেন আমাদের দেশেরই এক যুবক মাস্টারদা সূর্যসেন ও তাঁর নেতৃত্বে একদল তরুণ বিপ্লবী।

১৯৩০ সালের এইদিনে রাত ১০ টায় সূর্যসেনসহ ৬৫ জনের বিপ্লবী দল ৫টি দলে ভাগ হয়ে চট্টগ্রামের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে আক্রমণ করেন। নির্মল সেন ও লোকনাথ বলের নেতৃত্বে দামপাড়া পুলিশ রিজার্ভ ব্যারাক, গণেশ ঘোষ ও অনন্ত সিং এর নেতৃত্বে পাহাড়তলীতে চট্টগ্রাম রেলওয়ে পুলিশ অস্ত্রাগার, আম্বিকা চক্রবর্তীর নেতৃত্বে চট্টগ্রামের নন্দনকাননে টেলিফোন ও টেলিগ্রাফ ভবন দখল, নরেশ রায় এর নেতৃত্বে ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ এবং উপেন্দ্রকুমার ভট্টাচার্য ও লালমোহন সেন এর নেতৃত্বে রেললাইন উপড়ে ফেলার মাধ্যমে চট্টগ্রামের সাথে অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার দায়িত্ব নেন।
সবকিছু পরিকল্পনামতো হলেও পুলিশ রিজার্ভ ব্যারাকে গোলাবারুদ পাওয়া না যাওয়াতে এবং গুডফ্রাইডে উপলক্ষে ইউরোপিয়ান ক্লাবে কোনো পদস্থ ইংরেজ কর্মকর্তা না থাকায় এ দুটি ক্ষেত্রে আশানুরুপ ফল আসেনি। তবে পাহাড়তলি অস্ত্রাগার লুন্ঠনের পর অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করা হয়।
সর্বশেষ পরিকল্পনা অনুযায়ী দামপাড়া পুলিশ রিজার্ভ ব্যারাক দখল নেয়ার পরে বিপ্লবীরা সেখানে সমবেত হয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। মিলিটারি কায়দায় কুচকাওয়াজ করে সূর্য সেনকে "লাল সালাম" জানান তাঁরা। সেখানেই সূর্যসেন অস্থায়ী বিপ্লবী সরকার গঠনের ঘোষণা দেন।
এই স্বাধীনতার ৪ দিনের সময়, ২২ এপ্রিল বিপ্লবীরা যখন জালালাবাদ পাহাড়ে অবস্থান করছিলেন তখন  সশস্ত্র ইংরেজ সৈন্যরা তাঁদের ওপর আক্রমণ করে।এই যুদ্ধে ব্রিটিশদের ৭০ হতে ১০০ জন  সৈন্য মারা যায় এবং ১২ জন বিপ্লবী শহীদ হন।

পরবর্তীতে ১৯৩৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার হন সূর্যসেন। ১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারি সূর্যসেন ও তারকেশ্বর দস্তিদারের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার আগে তাঁদের নির্মমভাবে পিটিয়ে অত্যাচার করা হয়, হাতুড়ি দিয়ে তাঁদের দাঁত ভেঙে দেয়া হয়। হাত, পা ও বিভিন্ন অংশের হাঁড় ভেঙে দেয়া হয়।এরপর অর্ধমৃত এই দুই বিপ্লবীকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে দেয়া হয়। তাদের মৃতদেহ  সৎকার করতে দেয়া হয়নি।“The Renown” নামক জাহাজে তুলে নিয়ে লোহার টুকরোতে বেঁধে নিয়ে বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরের সংলগ্ন জায়গায় ফেলে দেয়া হয়।

১৮ এপ্রিলের এই স্বাধীনতার ব্যাপ্তি হয়তো বেশিদিন নয়, কিন্তু এই অল্প সময়ের  মধ্যেই উপ্ত ছিল ভবিষ্যত স্বাধীনতার প্রেরণা।তাঁর এই বীরত্ব আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে যুগিয়েছে অনুপ্রেরণা এবং ভবিষ্যতে কোনো মহীরুহের বিরুদ্ধে বিপ্লবে হতোদ্যম হয়ে পড়া বিপ্লবীকে দেখাবে আশার আলো।
চট্টগ্রাম যুববিদ্রোহ দিবসের ৮৯তম বার্ষিকীতে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সেই অগ্নিসন্তানদের যাঁরা আমাদের মাঝে থাকবেন চিরভাস্মর!


EmoticonEmoticon