সোমবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৯

কোথায় গেলো চেতনার বাণীঃ মেননের মুখে আজ একি শুনি!


বাংলাদেশের প্রাক্তন মন্ত্রী হাজী রাশেদ খান মেনন আজ রাজধানী ঢাকায় গত শতকের রুশ-বিপ্লবের নেতা ভ্লাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ ওরফে লেনিনের জন্ম-বার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে বলেছেন "এই রাষ্ট্রটি একেবারেই লুটেরা পুঁজিপতিদের"। এটি হচ্ছে অনেকটা ভূতের মুখে রাম-নাম নেওয়ার মতো একটি ঘটনা, তবে তা দুর্বোধ্য নয়।

রাশেদ খান মেননের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার গড়ে উঠেছে একজন সমাজতন্ত্রী হিসেবে। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে বিপ্লবী সমাজতন্ত্রের তত্ত্ব প্রচারের পর এর সাফল্যের কোনো সম্ভাবনা না দেখে তিনি ক্ষমতাসীন আওয়ালীগের নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দিয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে প্রথমে এমপি এবং পরবর্তীতে মন্ত্রীত্ব লাভ করেন।

মেননের জন্যে দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, গত ডিসেম্বরে নতুন নির্বাচনে তিনি আওয়ামী জোটের নৌকা প্রতীক নিয়ে এমপি নির্বাচিত হলেও, নতুন বছর গঠিত সরকারে আর মন্ত্রীত্ব পাননি। ফলে, যে-সরকার রাষ্ট্র চালায়, সে-সরকারে যদি তিনি মন্ত্রী না হন, সে-সরকার পরিচালিত রাষ্ট্রটির পক্ষে কীভাবে জনগণের রাষ্ট্র হওয়া সম্ভব?

সুতরাং, যে-সরকারে মেনন নেই, সে-সরকারের পরিচালিত "এই রাষ্ট্রটি একেবারেই লুটেরা পুঁজিপতিদের" হতে বাধ্য! এই হচ্ছে বাংলাদেশের বিখ্যাত মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী নেতা!

পাঠক, আপনার কাছে কি মেননকে স্ববিরোধী ও সুবিধাবাদী মনে হচ্ছে? তাতে কিছু যায়-আসে না। কারণ, তাঁর আছে হাজার-হাজার দলীয় 'কর্মী', যারা তাঁকে একজন সাচ্চা মার্ক্সবাদী-লেননিবাদী বিপ্লবী মনে করে লেনিনের জন্মবার্ষিকীতে তাঁর কথামৃত শুনতে গিয়েছেন। কেউ কি দাঁড়িয়ে তাঁকে চ্যালিঞ্জ করে জিজ্ঞেস করবেঃ এই রাষ্ট্রটি যদি একেবারেই লুটেরা পুঁজিপতিদের হয়, আপনি কি মন্ত্রী হিসেবে তাদের সেবক ছিলেন না?

না, এই প্রশ্ন করার মতো বিপ্লবী বাংলাদেশের তথাকথিত বিপ্লবী দলগুলোর মধ্যে নেই। আর এ-অবস্থা শুধু মেনন ও তাঁর দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টিরই নয়; বাংলাদেশের প্রায় সবগুলো সমাজাতান্ত্রিক দল ও নেতার মধ্যে আপনি মোটামুটি একই প্রকারের সুবিধাবাদী স্ববিরোধিতা পাবেন।


EmoticonEmoticon