সোমবার, ২৭ মে, ২০১৯

অন্তহীন অমার্জনীয় অমানবিক ভুল

শুনলাম, পত্রিকা বলছে, জান্নাতুনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ, তার সদ্যোজাত সন্তানকে ছাদ থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়ার অভিযোগে।  কিন্তু বড় ভুল করেছেন আপনারা, হে মহামান্য সমাজ ও রাষ্ট্রপতি মহাশয়েরা। ভুল করেই যাচ্ছেন আপনারা -  অন্তহীন অমার্জনীয় অমানবিক ভুল।
প্রাণির চোখ থাকে  দুটো আর মানুষের চোখ তিনটে। প্রাণির চোখে সবকিছু দেখলে আপনি মানুষ নন। এমন অনেক জিনিস আছে যা প্রাণিচোখে দেখা যায় না। এজন্য মানুষেরা প্রাণীদের চেয়ে এগিয়ে। হ্যাঁ, সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার নিয়ন্ত্রনকারী মহামান্য অধিপতিরা আপনাদের বলছি, আপনাদের জ্ঞানচক্ষুর উন্মীলন ঘটে নি। তাই সবকিছু প্রাণিচোখে দেখছেন। সাধারণ প্রাণীচোখে দেখলে দেখা যাবে হত্যাকান্ডটি ঐ মেয়েটিই ঘটিয়েছে। কিন্তু বুদ্ধিচোখে দেখলে দেখতে পাবেন সন্তানটির হত্যাকারী হচ্ছে সমাজপতিরা বা সমাজব্যবস্থা বা সমাজদাসেরা বা  শিক্ষাব্যবস্থা বা পুরুষতন্ত্র। অজ্ঞতাশাসিত সমাজব্যবস্থার অনুগত সদস্যরা সবাই মিলে মেয়েটির মাধ্যমে সন্তানটিকে ছাঁদ থেকে ছুঁড়ে ফেলে হত্যা করেছে। মেয়েটি এখানে মাধ্যম মাত্র। এবং মাধ্যমকে বাধ্য করা হয়েছে  সন্তানটিকে হত্যা করতে। নারীর হৃদয় সাধারণত অতো নিষ্ঠুর হয় না। তার নিষ্ঠুরতা মূলত পুরুষের নিষ্ঠুরতা। অর্থাৎ আপাতদৃষ্টিতে এই অন্যায় নারীর মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে তা ঐ নারীর অন্যায় নয়। এ অন্যায় পুরুষের অন্যায়। এ অন্যায় মূর্খের অন্যায়। এ অন্যায় সমাজের অন্যায়। এ অন্যায় সমাজাধিপতিদের অন্যায়। আপনি মূর্খ বলে,  আপনি মানুষ হিসেবে অন্ধ বলে, আপনার জ্ঞানচোখের উন্মীলন ঘটেনি বলে আপনি দেখতে পাচ্ছেন না অন্যায়টি আসলে কার। চোখ খুলুন,  জ্ঞানের বিকাশ ঘটান,  বুদ্ধি বাড়ান, মানুষ হোন। সত্যকে জানুন। যৌনতা বিয়ে-নিরপেক্ষ ব্যাপার। সন্তানও তাই বিয়েনিরপেক্ষ। এমনকি সন্তান উৎপাদনে নারী শুক্রানু কার কাছ থেকে ধার নিয়েছে  এটাও বিবেচ্য বা প্রাসঙ্গিক নয়। যৌনতাকে আটকে রাখা যায় না। ঠিক যেমন পায়খানা প্রস্রাব আটকে রাখা যায় না।  পায়খানা প্রস্রাব আটকে রাখলে আপনি অসুস্থ হয়ে যাবেন অথবা বাধ্য হয়ে আশেপাশেই মলমূত্র বিসর্জন করে দিবেন। তেমনি যৌনতাও একটি স্বাভাবিক জৈবপ্রবাহ। তাকে আটকে রাখলে লোকে অসুস্থ হবে অথবা তার প্রবাহ অস্বাভাবিক পথে প্রবাহিত হবে, যেমন নদীর স্বাভাবিক গতিপথকে বাধাগ্রস্ত করলে সে ভিন্নপথে  প্রবাহিত হবে। তাই স্বাভাবিক গতিপথকে বাধাগ্রস্ত করবেন না, হে অন্ধজনগোষ্ঠী। বিয়ে হোক বা না হোক যৌনতা সুস্থ মানুষের জন্য বা মানুষের সুস্থ্যতার জন্য আবশ্যিক, অপরিহার্য। এ আবশ্যকতা বিয়ের দিকে তাকায় না। যৌবনপ্রাপ্ত নরনারী যৌনতায় লিপ্ত হবেই। তাকে আটকাতে পারবেন না। শুধু বাধাগ্রস্ত করে ক্ষতি করতে পারবেন ব্যক্তির ও সমাজের। অন্যের ক্ষতি করে কি লাভ, বলুন? তারচেয়ে বরং নিজের জ্ঞানচক্ষুর বিকাশ ঘটান। প্রাণী থেকে মানুষ হউন। তাতে ব্যক্তির ও সমাজের সমৃদ্ধি ঘটবে। যৌনতায় লিপ্ত হলে সর্বোচ্চ সচেতনতায়ও ঝুঁকি থেকে যায়। গর্ভসঞ্চার হতেই পারে। ফলে সন্তান আসতেই পারে। এই স্বাভাবিকতা মেনে নেয়ার সভ্য মানসিকতা তৈরি করুন। নিজের অজ্ঞতার দ্বায়ভার অন্যের (নারী) ওপর চাপাবেন না। অবৈধ বা জারজ সন্তান নামে কোনো সন্তানকে অভিহিত করবেন না। অবৈধ বা জারজ সন্তান বলে কিছু হয় না। তা শুধুই আপনার অজ্ঞতা বা মূর্খতা। একটি সন্তান বিয়েনিরপেক্ষভাবে জন্ম দিলে একটি নারীকে আপনারা, সমাজপতিরা, সমাজসদস্যরা, পরিবারবর্গের সদস্যরা, প্রতিবেশিরা,  নারীরা ও পুরুষেরা কি পরিমান ভয়াবহ যন্ত্রনা দিবেন ভাবতে পারেন? সবাই মিলে ঐ নারীকে আপনার কি মাত্রায় নির্যাতন করবেন ভাবতে পারেন? হ্যাঁ আপনাদের এই নির্যাতন আর বর্বরতাই ঐ সন্তানকে হত্যা করিয়েছে। আর দোষ দিচ্ছেন নারীকে। দয়া করে, নিজজ্ঞানচক্ষুর বিকাশ ঘটান। নিজেকে মানুষ রূপে প্রতিষ্ঠা করুন।


EmoticonEmoticon