শনিবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৬

আয়নাবাজী ঃ সুন্দর ছবি ; সুচতুর আক্রমণ

আয়নাবাজী ঃ সুন্দর ছবি ; সুচতুর আক্রমণ
প্রচলিত মারদাঙ্গা অশ্লীলতা আর বাণিজ্যিক চবির ভিড়ে হলে বসে দেখার মত একটি ছবি – আয়নাবাজী। সিনেমা যে কত শক্তিশালী প্রচারমাধ্যম তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না । সচেতন নির্মাতার চিন্তার সুগভীর প্রভাবে দর্শক নিজের অজান্তেই প্রভাবিত হয়। দৈনন্দিন জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর শৈল্পিক উপস্থাপনাই অভিনয় । সব সময় দেখতে দেখতে যা একঘেয়ে মনে হয়, অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া চোখে যখন কোন বিশেষত্ব ধরা পড়ে না, যখন চারপাশের অসঙ্গতিগুলো অনেকটা স্বাভাবিক বলে মনে হতে থাকে তখন সম্বিৎ ফিরে পায় মানুষ একটা ভাল ছবি দেখে । মানুষ তো শুধু ছবি দেখে না ছবি দেখতে দেখতে সে নিজেকেও দেখে নেয় সংগোপনে ।
বহুবার দেখা জিনিস অথবা বহুদিনের চেনা মানুষ সব কিছুকে নতুন করে চেনাতে পারে কেউ যখন সে নতুন চোখে দেখে । প্রতিদিন যে পথে হেঁটে যাই সে পথের দু পাশে কি কি আছে , কয়টি বাড়ি, দোকান, গাছ বা বিশেষ কোন কিছু, আমরা অনেক সময় মনেও করতে পারি না। নতুন কোন আগন্তক যখন দেখে এর বর্ণনা দেন তখন আমরা অবাক হয়ে ভাবি, আরে তাই তো ! এটা তো খেয়ালই করি নাই। অভিনয় – নাটক, সিনেমাতে এই কাজ টা করে থাকে। দেখানোর ক্ষমতা, অভিনয় কুশলতা, সংলাপ উপস্থাপনা এ সবের মাধ্যমে সিনেমায় এ কাজ ভালো ভাবে করা যায় বলে সিনেমা এত শক্তিশালী মাধ্যম । চেনা প্রকৃতি, চেনা মানুষের অচেনা দিক উদঘাটিত হয়, নতুন করে চেনা যায় এর ফলে ।
আয়নাবাজীর উপস্থাপনা সুন্দর , বিষয়বস্তুর নতুনত্ব আছে, অভিনয় দর্শক কে টেনে রাখতে পারে । প্রচার পেয়েছে প্রচুর , তরুণরা দেখছে দল বেঁধে ।
ধাক্কা খেলাম আকস্মিক ভাবে যখন হিটলার, মুসলিনি, লেনিনকে এক কাতারে ফেলা হল । ভাবলাম একি আকস্মিকতা, নাকি অসচেতন ভাবে সংলাপ লেখা ? কিন্তু এরপর শুনি মার্ক্সের কথাও বলছে । মার্ক্স নাকি সব কিছুর অন্য দিক টা দেখতে বলেছেন । মার্ক্স যে সব কিছুকে ডায়ালেকটিক্যালি দেখতে বলেছেন তার কি ভুল ব্যখ্যা ! অন্যদিক দেখা মানে ভালো মানুষের খারাপ দিক দেখ আর খারাপ মানুষের ভাল দিক দেখ । ভালো খারাপ যে একটা আভ্যন্তরিন এবং বাহ্যিক সংগ্রামের ফল এটা আড়াল হয়ে গেল ।
সমাজের খারাপ ঘটনার একটা বিশেষ দিক, ক্ষমতাবানরা আইন, পুলিশ, বিচার কোনটার তোয়াক্কা করে না । এর সাথে বুর্জোয়া ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি ওতপ্রোত ভাবে যুক্ত । কিন্তু কোন সে রাজনীতি তা না বলে ঢালাও ভাবে রাজনীতিকে দোষারোপ করা একটা হুজুগে পরিণত হয়েছে । রাজনীতিকে মঞ্চের অভিনয় বলার মধ্য দিয়ে নির্মাতা কি বললেন ? মুক্তিযুদ্ধের রাজনীতি, অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি, শোষণমুক্তির রাজনীতি এগুলোও কি অভিনয় ?
শোষণ দেখে ক্ষুব্ধ হও, ভণ্ডামি দেখে ঘৃণা কর , দুর্বৃত্তদের রাজনৈতিক প্রভাব দেখে অসহায় বোধ কর কিন্তু শোষণ মুক্তির কষ্টকর পথে এসো না । কারন সবাই এক । হিটলার যা লেনিনও তাই ।
সবই ভেল্কিবাজী । লাগ ভেল্কি লাগ । কি ভয়ানক বিনোদন

This Is The Oldest Page


EmoticonEmoticon