সোমবার, ৩১ জুলাই, ২০১৭

মহিউদ্দিন শরীফকে বিদেশে যাবার নেপথ্যে কে বা কারা? (দ্বিতীয় পর্ব)

আজ বলব মহিউদ্দিন শরীফকে নিয়ে। বরিশাল বিএম কলেজের ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের ছাত্র্র ছিল সে। গত ১ লা মার্চ ২০১৭ তারিখে ভয়েস অব আমেরিকায় ‘বাংলাদেশ ক্রিটিসাইজড ফর স্লো প্রোগ্রেস ইন ব্লগার মার্ডারস’ নামে একটি আর্টিকেল প্রকাশিত হয়। সেখানে ‘শুদ্ধস্বর’ প্রকাশনীর অন্যতম উদ্যোক্তা আমেরিকায় নির্বাসনে থাকা মাহবুব লিলেনের সঙ্গে বরিশালের মহিউদ্দিন শরীফের কিছু বক্তব্য প্রকাশ করানো হয় উদ্দেশ্যমূলকভাবে।
মহিউদ্দিন শরীফ বরিশালে একসময় ইসলামিক ঘরানার লেখক বলে পরিচিত ছিল। বাকেরগঞ্জে তার গ্রামের বাড়িতে খবর নিয়ে জানা যায় তার পরিবার স্থানীয় জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। এলাকায় একটি জোর গুঞ্জন প্রচলিত আছে মহিউদ্দিন শরীফ বরিশাল শহরে হিজবুত তাহরীরের সঙ্গে যুক্ত। তাকে ভয়েস অব আমেরিকার উক্ত রিপোর্টে প্রগতিশীল ব্লগার হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতে দেখে অবাক হলাম। তার গ্রামের বাড়ি বরিশালের বাকেরগঞ্জে। বি.এম. কলেজের পুরনো ছাত্রদের কাছে খোঁজখবর নিয়ে জানা যায় যে সে বরিশাল বিএম কলেজ মাঠে ও সংলগ্ন বিভিন্ন মেসে একসময় শিবিরের হয়ে স্টাডি সার্কেল আয়োজন ও পরিচালনা করত।
সে সব প্রতিটি সাপ্তাহিক ও কখনো পাক্ষিক স্টাডি সার্কেলে ১৫ থেকে ২০ জন সমাবেত হত। মূলত সেখানে দর্শন ও চিন্তা চর্চার নামে ফরহাদ মজহার ঘরানার কথাবার্তা বলে মগজ ধোলাইয়ের ব্যবস্থা করত মহিউদ্দিন শরীফ ও তার সহযোগীরা। এ কারণে বি.এম. কলেজের ছাত্র্রলীগের কর্মীদের দ্বারা মহিউদ্দিন শরীফ চিহ্নিত হয়ে যায় এবং সে পালিয়ে পালিয়ে তার কর্মকাণ্ড চালিয়ে যায় বিএমকলেজ সংলগ্ন সোবাহান মিয়ার পুল, মধু মিয়ার পুল, বৈদ্য পাড়া, কলেজ রো সংলগ্ন এলাকায়। তাকে কয়েকবার সতর্ক করেও দেয় ছাত্রলীগের কর্মীরা, যারা অনেকে এখন বরিশাল ছাত্রলীগের মহানগর কমিটিতে আছে। বর্তমানেও সে বরিশালে জামাত সমর্থক পুরনো কর্মী হিসেবে সংস্কৃতি মহলে পরিচিত বলে সাংবাদিকদের কাছ থেকে জানা গেছে এবং তার কিছু লেখাপত্র তাদের পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
তার একসময়ের সহপাঠিনী জানান, ‘‘মহিউদ্দিন শরীফ তার কয়েকজন শিষ্য সহ আমাদের কাছে সেসব প্রচারপত্র নিয়ে আসত। কিন্তু আমরা না বলতে পারতাম না। কেননা সেসময় বিএনপি-জামাত ক্ষমতায় ছিল এবং তাদের কর্মী পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণ করত। তাদের টার্গেট বাঙালী মুসলমানের মনকে আরো মুসলমানিত্বের দিকে নিয়ে আসা। ২০১০ সালের পরীক্ষায় সে মাস্টার্স পাশ করে। এর মাঝে মাঝে সে ছাত্র্র পড়িয়ে যায় আর দাওয়াতী কর্মকাণ্ড চালু রাখে।‘’
তার সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে আরো ভয়ঙ্কর তথ্য জানা যায়। ঢাকার ইংরেজি গ্রামার স্কুল ‘লেকহেড গ্রামার স্কুল’টি রিজোয়ান হারুন ও হিজবুত তাহরীরের আমীর প্রফেসর ড. গোলাম মাওলা প্রতিষ্ঠিত। রিজওয়ান হারুনকে পুলিশ বহুদিন ধরে খুঁজছে। সেখানে মহিউদ্দিন শরীফের দুই চাচাত ভাই মাইনুদ্দিন শরীফ ও রেজওয়ান শরীফ। যাদের একজন রেজওয়ান শরীফ সিরিয়ায় পরিবার নিয়ে চলে যায়, সেও লেকহেড গ্রামার স্কুলের শিক্ষক ছিল। লেকহেড গ্রামার স্কুল প্রতিষ্ঠার পর মহিউদ্দিন শরীফ নিয়মিত ঢাকায় যাওয়া আসা শুরু করে নিয়মিত। ঢাকা থেকে প্রতিবার ফেরার পরে সে নিত্য-নতুন ইসলামিক প্রচারপত্র ও হ্যান্ডবুক স্টাডি সার্কেলে বিতরণ করত। এখানে একটি লিঙ্ক দিলাম তার কাজিনদে নিয়ে: http://www.dhakatribune.com/bangladesh/2017/05/14/militant-missing-dhaka-airport/
তার সহপাঠী ও বন্ধুরা জানিয়েছেন, যখন তারা ভয়েস অব আমেরিকায় উল্লেখ্য রিপোর্ট পরে জেনেছেন বর্তমানে মহিউদ্দিন শরীফ স্ত্রী রহিমা মহিউদ্দিন মুন্নী ও কন্যা সন্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার কোন দেশে আছে এবং সে একজন প্রগতিশীল ব্যক্তির অভিনয় করে অন্যদের ধোঁকা দিতে সমর্থ হচ্ছে, শুনে তারা অবাক হয়েছেন। এটা সবার জন্য সতর্কতার বিষয়। সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত একজন ব্যক্তি অনেক ব্লগারের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে।
বাংলাদেশে যখন একের পর এক হত্যা হচ্ছিল তখন কয়েকজন ব্লগার বাংলাদেশ ত্যাগ করে। জানা গেছে, বিদেশে গমনকারী কোন কোন ব্লগারের ইন্ধন পেয়ে সে দেশ ত্যাগের প্রস্তুতি নেয় এবং তারপর থেকে ইসলাম ধর্ম নিয়ে নানা রকম উস্কানীমূলক পোস্ট ফেসবুকে দিতে শুরু করে বলেই তথ্য পেয়েছি।
বাংলাদেশে ব্লগারদের হত্যাকাণ্ড জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি পেয়েছে। ওয়াশিকুর রহমান বাবু, নিলয় নীল হত্যাকাণ্ডগুলোতে অনেক প্রশ্নের জবাব পাওয়া যায় না। নিলয় নীল গ্রামের বাড়িতে বহুদিন পালিয়ে ছিল। সেখান থেকে ফিরে আসার পর পর তিনি হত্যাকাণ্ডের স্বীকার হন। ওয়াশিকুর রহমান বাবু কোথায় থাকতেন এ বিষয়ে তথ্য তেমন কেউ জানতেন না। কিন্তু ওয়াশিকুর রহমান বাবুও হত্যাকাণ্ডের স্বীকার হয়ে যান। এ দু’টো হত্যাকাণ্ড মূলত ভীতি ছড়িয়ে দেয়। কেননা এতো গোপনিয়তা রক্ষার করার পরও কিভাবে ব্লগারদের অবস্থান ফাঁস হয়ে যাচ্ছিল। ব্লগারদের তথ্য কোন না কোন ভাবে পাচার হয়ে যাচ্ছিল। তারপর থেকে ব্লগাররা বাংলাদেশ ত্যাগ শুরু করেন।       
মহিউদ্দিন শরীফ দক্ষিণ এশিয়ার কোন এক দেশে কেন পালিয়ে আছে? বরিশালে তার কোন সমস্যার কথা কোন সাংবাদিককের কাছে খবর নিয়েও জানা যায়নি। তাদের কাছে এমন কোন খবর নেই যে মহিউদ্দিন শরীফ নামের বাকেরগঞ্জে বাড়ি বরিশালের কেউ হুমকি পেয়েছেন। এমনকি মহিউদ্দিন শরীফের ফেসবুক একাউন্ট ঘেঁটে এমন কিছু তথ্য ব্লগার হত্যাকাণ্ডগুলোর আগে পাওয়া যায় না। খবর নিয়ে জানা গেছে সে বাংলাদেশ ত্যাগ করার আগে ঢাকায় একটি ফ্লাটে ছিল। সেখান থেকে সে বিদেশে যাওয়ার জন্য নানারকম যোগাযোগ করে। এবং তাকে বিদেশে থাকা একাধিক ব্যক্তি সহযোগিতা করে, কেননা তাদের উদ্দেশ্য নিজেদের দল ভারী করে এসাইলাম ব্যবসা জমজমাট করা। বর্তমানে সপরিবারে দক্ষিণ এশিয়ার একটি দেশে স্ত্রী ও এক কন্যা সহ অবস্থান করছে।
আমিও মহিউদ্দিন শরীফ নামের কাউকে কখনো কোথাও থ্রেট দেয়া হয়েছে এমন খবরও আমার কাছে নেই। কিংবা এমন কোন সংবাদ এর আগে পড়িনি। কিংবা কোন তালিকায় তার নাম প্রকাশ হয়নি। সে কারণে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন ওঠে হঠাৎ করে ভয়েস অফ আমেরিকায় প্র্রকাশিত এ রিপোর্টের মাজেজা কি? সেখানে কেন অলরেডি আমেরিকায় নির্বাসনে থাকা মাহবুব লীলেনের সঙ্গে মহিউদ্দিন শরীফকে নিয়ে এমন প্রচারপ্রচারণা চালানো হয়েছে?
মহিউদ্দিন শরীফকে প্রগতিশীল ব্লগার হিসেবে পরিচিত করিয়ে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার পেছনে একটি চক্র রয়েছে বলে ধারণা করা হয়েছে। কিন্তু মহিউদ্দিন শরীফের নেপথ্যে কে বা কারা? কারা রেফারেন্সে দিচ্ছে তাহলে?
আমরা কি খুব শিঘ্রী আরেকটি অসত্য এসাইলামের গল্প শুনতে পাব?
নিম্নে ‘ভয়েজ অব আমেরিকা’য় প্রকাশিত খবরের লিঙ্ক:  
https://www.voanews.com/a/bangladesh-criticized-for-slow-progress-blogger-murders/3744833.html



EmoticonEmoticon