পন্ডিতমশাই শুধালেন,
লাট সাহেবের সঙ্গে আর কে কে এসেছিল বল তো রে।
আমি সম্পূর্ণ ফিরিস্তি দিলাম, এমনকি চাঁপরাশী নিত্যানন্দকেও বাদ রাখলাম না।
বললেন, হল না! আর কে ছিল?
বললুম, ঐ যে বললুম, একগাদা এডিসি না প্রাইভেট সেক্রেটারী না আরো কিছু সঙ্গে ছিলেন! কিন্তু তারা ক্লাসে ঢুকেননি।
পন্ডিতমশাই ভরা মেঘের গুর গুর ডাক আরো গম্ভীর করে শুধালেন,
এক কথা বায়ান্ন বার বলছিস কেন রে মূঢ়? আমি কালা না তোর মতো অলম্বুষ?
আমি কাতর হয়ে বললুম,
আর তো কেউ ছিলনা পন্ডিতমশাই!
জিজ্ঞেস করেন তো পদ্মলোচনকে! সে তো সবাইকে চেনে।
পন্ডিতমশাই হঠাত্ আমার দিকে দাঁত মুখ খিঁচিয়ে বললেন, কেন? লাট সাহেবের কুকুরটাকে দেখতে পাসনি?
আমি তাড়াতাড়ি বললুম,
হা হা দেখিছি! ও তো এক সেকেন্ডের তরে ক্লাসে ঢুকেছিল!
পন্ডিতমশাই বললেন,
মর্কট এবং সারমেয় কদাচ একগৃহে অবস্থান করেনা। সে কথা থাক, কুকুরটার কি বৈশিষ্ট ছিল বলতো দেখি?
ভাগ্যিস মনে পড়ল, বললুম, আজ্ঞে একটা ঠ্যাং কম ছিল তাই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাটছিল।
হু বলে পন্ডিতমশাই আবার চোখ বন্ধ করলেন,
তারপর অনেকক্ষণ চুপচাপ থেকে আস্তে আস্তে বললেন, আমি, ব্রাহ্মণী, বৃদ্ধা মাতা, তিন কন্যা, বিধবা পিসি, দাসী একুনে আমরা আটজন।
হঠাত কথা ঘুরিয়ে বললেন, মদন মোহন কিরকম আঁক শেখায় রে?
মদন মোহন বাবু আমাদের অঙ্কের মাস্টার, পন্ডিতমশাইয়ের ছাত্র। বললুম ভালোই পড়ান।
পন্ডিতমশাই বললেন, বেশ! বেশ! তবে শোন, নিম্বর উল্লার শালা বলল,
লাট সাহেবের কুত্তার পেছনে মাসে পঁচাত্তর টাকা খরচ হয়। এইবার দেখি, তুই কি রকম আঁক শিখেছিস, বল তো দেখি, একটা কুত্তার পেছনে মাসে পঁচাত্তর টাকা খরচ হয় আর তার যদি তিনটে ঠ্যাং থাকে তাহলে ফি ঠ্যাংয়ের জন্য খরচ কত?
ভয় করেছিলুম, পন্ডিতমশাই একটা মারাত্মক আঁক কষতে দেবেন! আরাম বোধ করে বললুম, আজ্ঞে পঁচিশ টাকা!
পন্ডিতমশাই বললেন, সাঁধু! সাঁধু! তারপর বললেন,
আমি, ব্রাহ্মণী, বৃদ্ধা মাতা, তিন কন্যা, বিধবা পিসী, দাসী একুনে আমরা আটজন। আমাদের সকলের জীবন ধারনের জন্য মাসে পাই পঁচিশ টাকা!
এখন বলতো দেখি,
এই ব্রাহ্মণ পরিবার লাট সাহেবের কুকুরের ক'টা ঠ্যাংয়ের সমান?
- পাদটীকা, সৈয়দ মুজতবা আলী, (সংক্ষেপিত)।
EmoticonEmoticon