শনিবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৭

বন্যা বাস্তবতা ও করণীয়

বন্যা একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। কিন্তু এটি থেকে রক্ষার জন্য ব্যবস্থাপনার দায় মানুষের উপর। সুদূর প্রাচীনকাল থেকে এই অঞ্চলে বন্যার সমস্যা। বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পূর্ববঙ্গ তথা বর্তমান বাংলাদেশ। বাংলাদেশ একটি সমতলীয় দেশ। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চল ও পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়া সারাদেশ মূলত সমতল ভূমির উপর দাঁড়িয়ে। অনেকগুলো ছোট বড় নদী বয়ে গেছে এই ভূখন্ডের ভিতর দিয়ে। বড় বড় নদীগুলোর উৎপত্তি স্থল হল হিমালয় যা নেপাল ভারত বাংলাদেশ দিয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে। যে নদীগুলো একাধিক দেশ দিয়ে বয়ে চলেছে সেগুলো আন্তর্জাতিক নদী। আন্তর্জাতিক নদী প্রশাসনের জন্য জাতিসংঘের নীতিমালা আছে। কিন্তু ভারত একতরফাভাবে সেই নদীগুলোর উপর বাঁধ দিয়ে নদীর স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত করেছে। ফলে যখন নদীর পানিপ্রবাহ থাকে না তখন গভীর  নদীগুলো ভরাট হয়ে যায়। এর ফলে যা হয় সাধারণ বৃষ্টিতে নদীগুলো স্রোতস্বিনী হয়ে উঠে। অনেকসময় এর বিভিন্নভাগে দুইধারের বাঁধ ভেঙ্গে পানিতে জনজীবন তলিয়ে যায়। আবার দীর্ঘদিন যখন নদীর উপর ড্রেজিং না হয় তখনো পলি জমে নদী ভরাট হতে থাকে। এজন্য গুরুত্বপূর্ণ হল নিয়মিত নদীগুলো ড্রেজিং করা প্রয়োজন। আবার নদীর গতিপ্রবাহ ঠিক রেখে আপনাকে উন্নয়ন পরিকল্পনা করতে হবে। যেনতেন ব্রিজ কালভাট নির্মাণ নদীর পানি প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টি করে। ফলে উন্নয়নের নামে নদীকে ক্ষতিগ্রস্ত করার খেসারত কিন্তু আজ দিতে হচ্ছে। আবার নদীর দুইধারে উচ্চক্ষমতার বাঁধ নির্মাণ এবং তা নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ এর ব্যবস্থা থাকতে হবে। পানিসম্পদ মন্ত্রীর মত যাথে বলতে না হয় ইদুরের গর্ত দিয়ে বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। একটি দেশের নদী ব্যবস্থাপনা কত ভঙ্গুর তা বুঝা যায় কীভাবে সব জায়গায় বাঁধ ভেঙ্গে পানি ঢুকছে। ফলে এই দায় শুধু যে বর্তমান ক্ষমতাসীনদের শুধু, তা নয়। এর আগেও যারা ক্ষমতায় ছিল কেউ'ই বাস্তবে ভাল কোন প্রদক্ষেপ নেয় নাই। এই কারণে তা জমতে জমতে বিশাল হয়ে গেছে। বর্তমান শাসকদের দায় হল গত আট বছরে তাঁদের এই নিয়ে তেমন মাথাব্যথা নেই। ভারতীয় শাসকগোষ্ঠীর সাথে তাঁদের মিত্রতা থাকলেও দেশের মানুষের প্রয়োজনে বিভিন্ন বিষয়ে দরকষাকষি করে না। ভারত নদীর একতরফা পানিপ্রবাহ বন্ধ করে নদীর উপর যে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে তার মূল্য আমাদের যেমন শুষ্ক মৌসমে দিতে হয় তেমনি বর্ষায় ও দিতে হয়।

প্রথমে বন্যা হয়েছে নেপালে। সেখানে শতাধিক মানুষ মারা গেছে। ভারতের আসাম, উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গসহ বিভিন্ন রাজ্যে বিশাল বন্যা হয়েছে। সেখানেও মৃতের সংখ্যা অনেক। ফলে এখন যে প্রশ্ন গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে তা হল নদীর উপর যথ বাঁধ, ড্রেম নির্মাণ করা হয়েছে তা বন্ধ করা ছাড়া নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহ সম্ভব নয়। এই নিয়ে ভারতীয় জনগণের মধ্যে ক্ষোভ আছে। বাংলাদেশের জনগণের ভারতীয় শাসকদের উপর ক্ষোভ আছে। কারণ ভারত আন্তর্জাতিক আইনের তোয়াক্ষা না করে অনেকটা গায়ের জোরে আমাদের উপর তার নীতি চাপিয়ে দেয়। আবার আমাদের শাসক যারা ক্ষমতায় আছে এরা না পারে দেশের ভিতরে নদী ব্যবস্থাপনার ভাল কৌশল আবার না পারে ভারতীয় শাসকদের সাথে দেন-দরবার। এর চরম মূল্য দিতে হয় দেশের সাধারণ মানুষকে।

বাংলাদেশের ছোট বড় নদীগুলোকে ভরাট না করে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক করা যায়। যেমন সবগুলো নদীর নাব্যতা বাড়িয়ে নদীপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করা যায়। রাজধানী ঢাকার সাথে সারাদেশের নদীপথে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা যায়। মালামাল পরিবহণ এবং যাত্রী বহনে নদীকে কাজে লাগানো যায়। এর দুইদিকে কাজে আসবে। প্রথমত নদীপথে খরছ কম আসবে এবং নদীর প্রবাহ ঠিক থাকলে বড় বন্যা থেকে বাঁচার উপায় হবে। আবার নদীতে মাছের চাষ বৃদ্ধি করে প্রয়োজনীয় আমিষের চাহিদা মেটানো যাবে। ফলে প্রয়োজন একটি সঠিক ম্যানেজমেন্ট ব্যবস্থাপনা। যা বর্তমানে যে লুটেরা শাসকশ্রেণী ক্ষমতায় আছে তাঁদের দ্বারা সম্ভব নয়। এজন্য দরকার পরিকল্পিত জনগণের সরকার এবং তাদের প্রতিনিধি যারা সত্যিকার মানুষের জন্য কাজ করবে। ফলে বাঁচার জন্য ক্ষমতা পরিবর্তনের সংগ্রাম জরুরী।


EmoticonEmoticon