ছাত্রলীগ নিজেদের কত ফ্যাসিস্ট রূপে আত্মপ্রকাশ করছে, তা দিনের পর দিন প্রকাশিত হচ্ছে। ক্ষমতার ছত্রছায়ায় ছাত্র নামধারী এসব গুণ্ডাদের কারণে বন্যার ত্রাণ সহায়তা কার্যকম করা যাচ্ছে না। 'দেশে কোন বন্যা নাই, বন্যা মিডিয়ার সৃষ্টি' এই বলে গণজাগরণ কর্মীদের উপর হামলা করেছে ছাত্রলীগ। আমরা জানি গণজাগরণ মঞ্চ আওয়ামীলীগ ঘেষা একটি প্লাটফর্ম। যার নেতা ইমরান এইচ সরকার আওয়ামী রাজনীতির সমর্থক। আওয়ামীলীগ ঘরানার হলেও সরকারের বিভিন্ন কার্যকমের তাঁর নিজস্ব অবস্থান আছে। এইরকম আওয়ামীলীগ ঘরানার কিছু লোকজন আমার বন্ধু তালিকায় আছেন যারা সামগ্রিকভাবে আওয়ামীলীগ সমর্থক কিন্তু বর্তমান সরকারের কোন কোন কাজের সমালোচক। বর্তমান অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে সরকারী দলের তোষামোদ না করলে তুমি আওয়ামীলীগ না। তুমি রাজাকার, জামাতের সমর্থক, এই সেই নানা উপাধি পাবেন। সত্য উচ্চারণ করলে জামাত ট্যাগ গায়ে লাগবে। আপনি যদি সেক্যুলার বামপন্থী হন তারপর জামাত ট্যাগ লেগে হবে বামাতি। যাইহোক এসব ট্যাগ লেগেও সমালোচনা বন্ধ করা যাবে না।
যে শেখ মুজিবের আদর্শের কথা ছাত্রলীগ বলে, সেই শেখমুজিব ও একদিনে জনপ্রিয় হন নাই। তরুণ বয়স থেকে আন্দোলন সংগ্রাম করে, জনগণের লড়াই সংগ্রামের অংশ হয়েছিলেন। ফলে তাঁর পক্ষে একজন শেখ মুজিব হওয়া সম্ভব হয়েছিল। আজকে ফ্যাসিস্ট চরিত্র ধারণ করে, মানুষের উপর অত্যাচার নির্যাতন করে ছাত্রলীগ শুধুই ঘৃণাই জন্ম দিবে। আজকের দিনে তরুণ যুবকদের কাজ ছিল সারাদেশে যখন প্রবল বন্যায় মানুষ দিশেহারা তখন যাপিয়ে পড়া-তাঁদের উদ্ধারের জন্য। তখন ছাত্রলীগ নামধারী সংগঠন বিশাল তরুণদের প্রতিনিধি হয়েও জনগণের জন্য কাজ করা দূরে থাক যারা ত্রাণ সংগ্রহ করছেন তাঁদের বাঁধা দিচ্ছে, হামলা করছে। এইভাবে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে এরা দূরে সরে যাচ্ছে। অন্যদিকে তরুণদের ক্ষুদ্র অংশ বাম ছাত্র সংগঠনের বন্ধুরা নিজেদের ক্ষুদ্র সামর্থ্য নিয়ে লড়ে যাচ্ছেন। সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট (বাসদ), সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট (বাসদ মার্ক্সবাদী), বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী সহ বিভিন্ন বাম ছাত্র সংগঠন নিজেদের ক্ষুদ্র অবস্থা থেকে জনগণের কাছ থেকে ত্রাণ সংগ্রহ করে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে বিতরণ করছেন। রংপুরে ছাত্রফ্রন্ট কর্মীরা চালের বস্তা নিজ কাধে করে ত্রাণের জন্য বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এমন একটি ছবি ফেসবুকে নজরে এসেছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য এসব কর্মীদের কাজকে সাধুবাদ জানাই।
এখন দেশের মানুষের বিচার করার সময় এসেছে সমর্থন কাদের করবেন? ছাত্রলীগ নামধারী ফ্যাসিস্ট গুণ্ডাদের না যে সব তরুণেরা সাধারণ মানুষের বিপদে যাপিয়ে পড়েছে তাঁদেরকে সমর্থন করবেন? আমরা যানি এইভাবে ত্রাণ দিয়ে হয়তো তাঁদের জীবন বদল করা যাবে না, কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় সরকারী ত্রাণের আশায় বসে থেকে আরও একটি প্রাণ কে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া যায় না। একদিকে ত্রাণ তুলে দিতে হবে অন্যদিকে সরকারের এই ব্যর্থতাকে জনগণের সামনে খোঁলাসা করতে হবে। সামগ্রিকভাবে জনগণের যৌথ প্রচেষ্টা আবারও বিপদ থেকে বেঁচে থাকার আশা জেগে ওঠবে। লড়াই চলুক জীবনের তরে।
EmoticonEmoticon