পশ্চিম বাংলায় যারা বাংলা ও বাঙালীর স্বার্থে বুদ্ধিবৃত্তিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন করছেন, তাদেরকে অতি-অবশ্যই ধর্মনিরপেক্ষ বাঙালী আত্মপরিচয়কে তুলে ধরে সর্বক্ষেত্রে ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে সেই আন্দোলনগুলো করতে হবে।
যারা হিন্দুস্থানী দেব-দেবীর বদলে বাঙালী দেব-দেবী প্রোমৌট করে মনে করেন যে তারা হিন্দুস্থানী হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে বাঙালী-বোধ শক্তিশালী করছেন, তারা ভুল করছেন। কারণ, তারা বস্তুতঃ সর্বভারতীয় হিন্দুত্ববাদের বাইরে কিছু করছেন না।
যেখানে যতোই প্রাদেশিক হিন্দুত্ব চর্চিত হোক না কেনো, হিন্দুস্থানী হিন্দুত্ববাদ তাকে সর্বভারতীয় হিন্দুত্বের মধ্যে টেনে নিয়ে নেতৃত্ব করবে। তাই, হিন্দুত্বের মধ্যে বাঙালীত্বের বিকাশ ঘটবে না, বরং ১৯০৫ সালে শুরু হওয়া বাঙালী জাতীয়তাবাদের প্রথম তরঙ্গের মতোই বাঙালী মুসলমানদেরকে দূরত্বে ঠেলে দেওয়া হবে।
একই কথা প্রযোজ্য বাঙালী মুসলমানদের ক্ষেত্রে। বাঙালী মুসলমান যদি ইসলাম ধর্মকে আশ্রয় করে বাঙালীত্বের বিকাশ ঘটাতে চান, তা তারা পারবেন না; ইসলামিক উম্মাহ্ তাদেরকে গ্রাস করে নেবে এবং বাঙালী হিন্দুত্বেরকে দূরে ঠেলে দেবে।
অর্থাৎ, বাঙালীত্বের মধ্যে যে ঐতিহাসিক ধর্মীয় বিভাজন রয়েছে, জাতিত্বের বিকাশের ক্ষেত্রে যে-কোনো প্রকারের ধর্ম সংস্লিষ্টতা বাঙালীকে কেবল বিভক্ত ও দূর্বল করেই রাখবে। এটি একটি ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত সত্য।
আজকের যুগে বাঙালীত্বের একমাত্র বিকাশ ঘটতে পারে বাঙালী সমাজের, বাঙালী সংস্কৃতির, বাংলাভাষা ও বাংলা সাহিত্যের সেক্যুলারাইজেশন ও র্যাশনালাইজেশনের মধ্য দিয়ে বৃহত্তর বিশ্ব-বাঙালীর আত্মপরিচয়কে ঊর্ধ্বে তুলে ধরে।
২৭/০৮/২০১৭
লণ্ডন, ইংল্যাণ্ড
EmoticonEmoticon