যে-রোহিঙ্গারা জীবন বাঁচাতে বার্মা থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় চাচ্ছে এবং যাদেরকে বাংলাদেশ সরকার সীমান্তের ওপারে গুলির মুখে ঠেলে দিয়ে মরতে দিচ্ছে - অর্থাৎ মারছে, তারা জাতিসত্তায় বাঙালী। এরা ১৯৪৭ সালে পূর্ব-বাংলার বাঙালী মুসলমানের মতোই মুসলিম লীগ গঠন করে পাকিস্তানে যোগ দিতে চেয়েছিলো, কিন্তু মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ কর্তৃক প্রত্যাক্ষিত হয়ে ১৯৫২ সাল থেকে রোহিঙ্গা পরিচয়ে বাঁচতে চেয়ে ব্যর্থ হয়েছে।
বার্মা সরকার ১৯৮২ সালে প্রণীত নাগরিকত্ব আইনে রোহিঙ্গা নামের বাঙালীদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করেছে। এখন এরা বলছে, রোহিঙ্গাদের স্বীকার করতে হবে যে ওরা আসলে বাঙালী। কীভাবে স্বীকার করবে ওরা বাঙালী, যখন বাংলার পূর্ব বা পশ্চিম খণ্ডের কিংবা পৃথিবীর কোনো বাঙালীই ওদেরকে বাঙালী বলে স্বীকার করে না?
১৯৪৭ সালে বাংলার পূর্বখণ্ড বাঙালী আত্মপরিচয় ভুলে মুসলিম আত্মপরিচয়ে পাকিস্তানে যোগ দিয়েছিলো। সেই সাধের পাকিস্তান যখন ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে বাঙালী বলে গণহত্যা শুরু করে, তখন হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে ১ কোটি বাঙালী ভারতের অধীনস্থ পশ্চিম-বাংলায় ও অন্যান্য রাজ্যের বাংলাভূমিতে আশ্রয় নেয়নি?
ভাবো হে বাঙালী, সেদিন যদি তোমাদেরকে ওপার বাংলার বাঙালীরা আশ্রয় না দিতো, যদি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী তোমাদেরকে গুলির মুখে ফেরত পাঠিয়ে দিতো, কী অবস্থা হতো তোমাদের?
বাদ দাও বাঙালীত্বের কথা। রোহিঙ্গারা তো মানুষ? একটি কুকুরও যদি বন্যায় ভেসে মানুষের কাছে আশ্রয় নিতে চায়, মানুষ তাকে আশ্রয় দেয়, বন্যার জলে ঠেলে ফেলে দেয় না। আর, তোমরা মানুষ হয়ে গণহত্যার শিকার রোহিঙ্গা নামের মানুষদেরকে আশ্রয় না দিয়ে গুলির মুখে ফেরত পাঠাছো সেই ঘাতকদের কাছে, যারা ওদেরকে হত্যা করছে ওদের বাঙালীত্বের কারণে।
তুমি কি বাঙালী? তুমি কি মানুষ?
২৮/০৮/২০১৭
লণ্ডন, ইংল্যাণ্ড
EmoticonEmoticon