বাংলাদেশ ক্রিকেট বিশ্বে এখন অন্যতম সেরা দল। ক্রিকেট দুনিয়ায় বাংলাদেশী ক্রিকেটাররা বেশ পরিচিত মুখ। এর সাথে বাংলাদেশী ক্রিকেট প্রেমী দর্শকের সংখ্যা বিশাল। এই কারনে বাংলাদেশ দল যখন কোন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগীতায় ভাল করে তখন যেমন উৎফুল্লের সীমা থাকে না আবার যখন খারাপ করে তখন কড়া সমালোচনার তীর খেলোয়ারদের বিদ্ধ করতে এই ক্রিকেট ফান'রা কার্পূণ্য করে না। এদের চোখে কোন সময় তামিম, সাকিব, রিয়াদ রা বিশ্বের বড় বড় ক্রিকেটার শচীন, লারা, শের্ন ওয়ার্ন থেকে বড় মনে হয়। যাই হোক নিজেদের উচ্চতায় ভাবতে সবাই ভালবাসে। আর এখানে জাতীয়তাবাদ যখন কাজ করে তখন অন্যের থেকে নিজেকে সবাই শ্রেষ্ঠ ভাবতে চায়। এই ক্রিকেট জ্বর থেকে কথিত অনেক কমিউনিস্ট মুক্ত নয়। অনেকে বলেন খেলাতো খেলাই, এর থেকে আনন্দ বঞ্চিত হব কেন? খেলা যখন শারিরীক খসরত হয় তখন খেলা ঠিক আছে। আর যখন খেলা পণ্যে পরিণত হয় এবং এর মধ্য দিয়ে জুয়ারিদের দাপট প্রকোট হয়ে উঠে তখন আপনি যখন পুঁজির শোষণের বিরুধী সেই জায়গায় আপনি খেলার আড়ালে কাদের সমর্থন করছেন এটি বড় বিষয়।
খেলার বাজার মূল্য তত বেশি যত এর দর্শক প্রিয়তা বেশি। ইউরোপে ইংল্যান্ড বাদে অন্য দেশে ক্রিকেট জনপ্রিয় নয়। ফলে ক্রিকেট এখানে পণ্য হয়ে উঠেনি। কিন্তু ফুটবল এখানে জুয়ারিদের বড় গেম। আবার এশিয়ায় ক্রিকেট জনপ্রিয়। ফলে ক্রিকেট সেখানে জুয়ারিদের বড় আসর। এই যে IPL, BPL এই আসর গুলো বড় জুয়ার আসর। আর আমরা দর্শকরা এই জুয়ার বড় পুঁজি। তাহলে ক্রিকেট প্রেমী দর্শকরা কাদের বাজার বাড়িয়ে দিচ্ছেন খেয়াল করছেন? আমার কমিউনিস্ট, বামপন্থী বন্ধুরা সারাদিন পুঁজিবাদ সাম্রাজ্যবাদ বিরুধী স্লোগান দিয়ে, দিনশেষে কোন পুঁজিবাদের কাছে নিজেকে সমর্থন করলেন?
আবার দেখা যায় ক্রিকেট নিয়ে উগ্র জাতীয়তাবাদের জন্ম দিতে। যেমন আমাদের এখানে অনেকেই ইন্ডিয়ার ক্রিকেট বিরুধীতা করতে গিয়ে অনেক সময় রেন্ডিয়া, ফাকিস্তান বলেন। আবার ভারতের অনেকেই দেখছি বাংলাস্তান সহ নানা বিদ্বেষী টাইটেলে ভূষিত করতে। এই ধরণের অন্ধ আনুগত্য জাতীয়তাবাদ চরম মাত্রায় ক্ষতিকর। আমরা যখন ভারতের সমালোচনা করি তখন ভারতীয় আগ্রাসনবাদী রাষ্ট্রের সমালোচনা করি। সাধারণ জনগণের সাথে এর সম্পর্ক নেই।
আবার পাকিস্তান বলতে পাকিস্তানী শাসক এবং সাধারণ জনগণকে এক পাল্লায় মাপার কারণ নেই। কারণ সেখানে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ আছে। ফলে শাসক পাকিস্তানের চরিত্র দিয়ে গোটা জনগণের চরিত্র নির্ণয় করা যায় না।
আবার দেখা যায় ক্রিকেট নিয়ে প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণের বদলে নিজেদের ভালের জন্য অন্য দলের ম্যাচ বৃষ্টির কবলে, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ার দর্শক কামনা। যা অনৈতিক লাভের পথকে প্রকাশিত করে। ক্রিকেট নিয়ে দুর্নীতি, ম্যাচ ফিক্সিং নানা ধরণের অবৈধ কর্ম রাজনীতি তো আছেই।
ক্রিকেট একটি আফিম। যা খাওয়ালে নিজেদের অন্য সংকট ভুলে থাকা যায়। ক্ষুধা দারিদ্র সামাজিক সংকট মূখ্য হয়ে উঠে না। ফলে সংগঠিত জনগণকে আফিমে ডুবিয়ে রেখে শোষণের ষ্ট্রিমরুলার চালাতে সহজ হয়।
খেলাধুলা শারিরীক খসরত এবং ব্যায়ামের জন্য দরকার আছে। কিন্তু যেখানে মুনাফা সেখানে শোষণ আছে, দুর্নীতি আছে। জুয়া অবৈধ কর্ম আছে। সেই জায়গা থেকে খেলাকে মুক্ত করতে না পারলে খেলার আনন্দ সাধারণ মানুষকে যুক্ত করা যাবে না। খেলা হোক নিছক আন্দন আর ভাল লাগার বিষয়, জুয়ারিদের মুনাফার পণ্য নয়।
EmoticonEmoticon