মঙ্গলবার, ১ আগস্ট, ২০১৭

পাহাড়ে মুক্তি সংগ্রাম এবং আমাদের অভিজ্ঞতা ।

তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ পাকিস্তানী আধা উপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করে ৩০ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে একটি স্বাধীন মুক্ত দেশের স্বপ্ন দেখেছিল। মুক্তি সংগ্রামে যেমন মধ্যবিত্ত শিক্ষিত শ্রেণী অংশগ্রহণ করেছিল তেমনি শ্রমিক কৃষক সাধারণ মানুষ, ছাত্র যুবকরা অংশ নিয়েছিল। তবে মুক্তির প্রশ্নে সবার উদ্দেশ্য সমান ছিল না। কারণ কেউ অধিকতর রাজনৈতিক ক্ষমতা চেয়েছিল, যাতে সে সবক্ষেত্রে সুবিধা গ্রহণ করতে পারে, লুটপাট করতে পারে, ধান্ধাবাজি করতে পারে। আবার সাধারণ শ্রমিক কৃষক শ্রমজীবী মানুষের আকাক্ষা ছিল, তাঁরা দুইবেলা পেটভরে খেতে পারবে, তাঁদের সন্তানরা পড়ালেখার ভাল সুযোগ পাবে, অত্যাচার নির্যাতন থেকে মুক্তি পাবে, পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের অর্জিত সম্পদ থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে উন্নয়ন না হয়ে নিজেদের জীবনযাত্রার উন্নতি হবে। কিন্তু সদ্য স্বাধীন দেশে যারা ক্ষমতার অংশ হয়েছিল তারা দেশটিকে লুটপাট আর দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছিল। ফলে এই দেশের যাত্রা কোন দিকে যাবে তার মোটামুটি ফয়সালা সেই ৭২ পর থেকে শুরু হয়ে গিয়েছিল। একদিকে ক্ষমতার অংশ লুটপাটকারী দুর্নীতিবাজ একটি শ্রেণী তার বিপরীতে সাধারণ মানুষের ত্যাগ এবং সংগ্রাম। ফলে দিনে দিনে একদল শোষক শ্রেণী শক্তিশালী হয়েছে। এদের বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকলেও লুণ্ঠনে কেউ থেকে কেউ পিছিয়ে নেই। এভাবে একসময় সামরিক শাসন আর আরেক সময় কথিত গণতন্ত্রের নামে স্বৈরাচারী ব্যক্তি শাসন। ফলে বার বার লড়াই সংগ্রামে যুক্ত হলেও এদেশের সাধারণ মানুষের কোন মুক্তি আসেনি। তাঁরা যেমন পাকিস্তান আমলে শোষণ নির্যাতনে জর্জরিত ছিল বর্তমান স্বাধীন দেশেও বিভিন্নভাবে ক্ষমতাসীনদের দ্বারা নির্যাতিত শোষিত।

আবার এই লুটেরা গোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রাম সমতল সহ ছোট ছোট জাতিসত্ত্বার উপর নিপীড়নের স্টিমরুলার চালাচ্ছে। কারণ মূল রাজনৈতিক শক্তি জাতিগতভাবে বাঙালী। ফলে অন্য ছোট জাতিগুলোর অস্তিত্ব এবং অধিকার এরা স্বীকার করতে রাজি নয়। এরা মনে করে দেশ বাঙালীদের। এজন্য সব ধরণের দখল লুটতরাজ তাঁদের অধিকার। বাকি যারা আছে তাঁদের অধীনস্থ গোলাম হয়ে থাকবে না হয় তাঁদেরকে উচ্ছেদ করে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করবে। সেখানে রাষ্ট্রীয় বাহিনী এই কর্ম করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

আবার পার্বত্য চট্টগ্রামে বাস করে চাকমা মারমা ত্রিপুরা স্নো রাখাইন সহ অনেক জাতিগোষ্ঠী।  যাদের আবার জাতিগত  আন্তঃদ্বন্দ্ব আছে। আবার সেখানেও ক্ষমতার অংশ, অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী শ্রেণী সুবিধায় এগিয়ে আছে। ফলে স্বাধীন বা স্বায়ত্বশাসন হলেও পাহাড়ে সাধারণ কৃষক শ্রমিকদের উপর শোষণ নিপীড়ন অব্যাহত থাকবে, বড় বড় সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর হস্তক্ষেপ বাড়বে । এজন্য আমি মনে করি সমতলের নিপীড়িত শ্রেণীর সাথে পাহাড়ের নিপীড়িত শ্রেণী যদি শ্রেণীগত ঐক্য গড়ে তুলতে না পারে এবং পাহাড়ে সমতলে আশু কর্মসূচী হিসেবে সব ধরণের আগ্রাসন থেকে মুক্তি এবং গণতান্ত্রিক অধিকারের পক্ষে লড়াই গড়ে তুলতে না পারে তবে মুক্তি দূর পরাভূত।  আমাদের খেয়াল রাখতে হবে বর্তমান আশু কর্মসূচী অনেকগুলো সমাজতন্ত্র বা সমাজতান্ত্রিক অধিকারের পক্ষে যায় না কিন্তু বুর্জোয়া ব্যবস্থায় যেগুলো গণতান্ত্রিক অধিকার হিসেবে গণ্য সেই কর্মসূচী অব্যাহত রাখতে হবে। কেননা এইসব দাবি আদায় আখেরে সমাজতন্ত্রের পথকে প্রসারিত করবে আবার জনগণকে সংগঠিত হতে সহায়তা করবে।

ফলে পাহাড়ে জাতিগত বিভাজন নয় চাই শ্রেণীগত ঐক্য এবং সব ধরণের নিপীড়ন থেকে মুক্তির জন্য জাতীয় বিদ্রোহ যা আন্তর্জাতিক লড়াইয়ের পথকে প্রশস্ত করবে। বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক, মুক্তির ঐক্য দৃঢ় এবং শক্তিশালী হোক।


EmoticonEmoticon