মঙ্গলবার, ১ আগস্ট, ২০১৭

পৃথিবীর বড় গণতান্ত্রিক দেশ নাকি ভারত ?

হিন্দু ধর্মে গরুর মাংস ভক্ষণ নিষিদ্ধ হয় সম্পূর্ণ ইহ জাগতিক কারণে। আমরা জানি আজকের হিন্দু ধর্ম বলতে যা বুঝায় তার শুরু হয়েছিল আর্যদের হাতে। যদিও অনেক সংস্কার ধারা এর মধ্যে বিকশিত হয়ে বর্তমান রূপে আছে। আর্যরা ছিল পশুপালন জাতির অন্যতম। গোচারণ ভূমির সন্ধানে তারা ভারতবর্ষে এসেছিল। কারণ তখনকার ভারতীয় ভৌগলিক বাস্তবতা পশু পালনের জন্য সহায়ক ছিল। ফলে গোচারণ ভূমির সন্ধানে এখানে তাদের বাস। তখনো গোমাংস ভক্ষণ নিষিদ্ধ ছিল না। সকলে নানা অনুষ্ঠানে পূজা উৎসবে গোমাংস ছিল নিয়মিত বিষয়। তখন গরুকে লেন দেনের আদর্শ হিসেবে ব্যবহার করা হত। হর্থাৎ প্রথম দিকের ভারতীয় মূদ্রার কাজ করেছিল গরু। গরু সমাজের প্রয়োজনীয় উপাদান ছিল। গরু ভক্ষণের ফলে প্রয়োজনীয় গরুর কমতে শুরু করে। হালচাষের সমস্যা তখন দেখা দেয়। কারণ লোহার আবিষ্কারের সাথে সাথে লাঙলের ফলা হিসেবে লোহার ব্যবহার শুরু হয়। ভারতে লোহার ব্যবহার খৃষ্ট্রপূর্ব ৮০০-১০০০ শতাব্দীর মধ্যে শুরু হয়। ফলে তখন থেকেই কৃষিতে লাঙলের ব্যবহার শুরু হয়। গরু তখন খুবই দরকারী পশু। গরু ছাড়া হালচাষ হয় না। আবার যখন কোন কিছু মানুষের উপকারে আসে সেই বস্তুকে মানুষ পূজনীয় দেবতার আসনে বসাতো। তখন ধর্মগুরু পুরোহিত দল আসলে হালচাষের জন্য প্রয়োজনীয় এই গরুকে ধর্মীয় উপাদান দিয়ে গোমাতার আসনে বসিয়ে দেয়।
ফলে তারা যা করতে চেয়েছিল আজ তা হিতে বিপরীত হয়ে গেছে। উপকারী গরুকে রক্ষা করতে যে ধর্মের প্রলেপ দিয়েছিল। সেই ধর্ম গোরক্ষার নামে আজ এমন ভয়ংকর রূপে হাজির হবে তখন বোধয় ধর্মের পণ্ডিত পুরোহিত শ্রেণী চিন্তা করতে পারেন নাই!
এই ভারত বিশাল এক দেশ। জ্ঞান বিজ্ঞানে লড়াই সংগ্রামে তার যেমন অবদান আছে, তেমনি সামাজিক কুসংস্কার, জাতপাতের কারণে তার অনেক নমণীয় চরিত্র দেখা যায়। নানা ধরণের বৈচিত্রময় মানুষ আর নানা চিন্তার সমাবেশ সেখানে। কিন্তু আজ ভারতের যে চরিত্র তা হল ধর্মীয় মৌলবাদের বিকাশ সেখানে প্রতিনিয়ত বারছে। গোরক্ষার নামে সেখানে অন্যান্য ধর্মের মানুষকে নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। ধর্ম নিরপেক্ষ সেক্যুলার ভারত আজ এক শ্রেণীর হিংস্রদের রক্ষা করার কাজ করছে। ১৯৪৭ সালে যখন দেশভাগ হয় তখন আসলে ভারত পাকিস্তান ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ হয়নি। যদিও ধর্ম সেখানে বড় নিয়ামক ছিল কিন্তু তখনকার নেতারা মনে করেছিলেন হয়তো হিন্দু অধ্যুষিত অঞ্চল আর মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল আলাদা হয়ে গেলে ভাল হবে। কারণ তাদের মনে ৪৬ সনের দাঙ্গার চাপ ছিল। কিন্তু এভাবে ধর্ম আর এলাকাভিত্তিক দেশ ভাগ হয় না। কিন্তু হিংসার অগুন জ্বালিয়ে রাখা যায়। যদিও দুই রাজনৈতিক দল কংগ্রেস আর মুসলিমলীগ মনে করেছিল এতে উপকার হবে। কিন্তু তাঁদের কমিটমেন্ট ছিল দুইদেশের নেতারা নিজ নিজ দেশের ধর্মীয় সংখ্যালগুদের রক্ষা করবেন। কেউই সেই কমিটমেন্ট রাখতে পারেন নি।
আজকের ভারতে জুনায়েদরা, আখলাকরা গোরক্ষার নামে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। সেক্যুলার ভারত তা রক্ষা করতে পারছে না। পৃথিবীর বড় গণতান্ত্রিক দেশ নাকি ভারত? এই কী তার গণতন্ত্রের নমূনা?


EmoticonEmoticon