মঙ্গলবার, ১ আগস্ট, ২০১৭

হেফাজতি গুরু ।

ফরহাদ মজহার বুদ্ধিমান জ্ঞানী মানুষ সন্দেহ নাই। তাঁর পড়াশুনা বিশাল। লেখনি শক্তিশালী, সেই বিষয়ে সন্দেহ নাই। তিনি গুম হয়ে আবার ফেরত এসেছেন। হর্থাৎ যারা গুম করতে চেয়েছিল তারা হয়তো শেষ পর্যন্ত সাহস করতে পারে নাই। ফরহাদ মজহার একসময় মার্ক্সবাদী ধারার লেখালেখি করতেন। এ নিয়ে তাঁর অনেকগুলো বই আছে। তিনি বড় মাপের কবি ও। কিন্তু ইদানিং ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠী হেফাজতে ইসলামের তাত্ত্বিক গুরু হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। বিএনপি জামাতের সাথেও তার ভাল সখ্যতা আছে। ফরহাদ মজহার নতুন একটি তত্ত্ব হাজির করার চেষ্টা করছেন। তা হল ধর্মীয় ভাববাদের সাথে সমন্বয় করে মার্ক্সবাদের নতুন ভার্সন বাহির করা। সেখানে তার কিছু সহযোগী ও আছে। তার মধ্যে পিনাকী ভট্টাচার্য অন্যতম। ফরহাদ মজহারের এই ভাববাদের সাথে মার্ক্সবাদের সমন্বয়ের চেষ্টার হাতেকড়ি হয় আহমদ ছফার হাত ধরে। ছফা শেষজীবনে ধর্মীয় মৌলবাদের সাথে বিপ্লবী রাজনীতির একটি সমজোতার চেষ্টা করেছিলেন। ফরহাদ মজহার ছফার কাজকেই এগিয়ে নিয়েছেন। আফগানিস্তানে যখন ইঙ্গমার্কিন মাস্রাজ্যবাদ আগ্রাসন চালায় তখন সেখানে তালেবানরা মার্কিন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। স্বভাবতই যখন মার্কিন বাহিনী তাঁদের আক্রমণ করেছে তালেবানরা তাঁদের মত করে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেছে। সেই যুদ্ধের প্রেক্ষিতে ফরহাদ মজহাররা মিলে ঢাকায় একটি সেমিনার আয়োজন করেছিলেন ২০০২ সালের দিকে। তালেবানদের এই প্রতিরোধকে ফরহাদ মজহার শ্রেণী সংগ্রাম বলছেন। কারণ সেখানে তালেবানরা নাকি সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এখন আমরা কি মার্ক্সবাদের আলোকে এটাকে শ্রেণী সংগ্রাম বলতে পারি? মার্ক্সবাদ বলছে মানুষের সমাজ বিকাশের ইতিহাস হল শ্রেণী সংগ্রামের ইতিহাস। কিন্তু আজকের আধুনিক পুঁজিবাদী যুগে শ্রেণী সংগ্রাম দুইটি বিপরীতমুখী শ্রেণীর বিরোধের ফল। ফলে শ্রমিক শ্রেণী হল আজকের দিনে শ্রেণী সংগ্রামের নিয়ামক শক্তি। শ্রমিক শ্রেণীকে বাদ দিয়ে এবং সমাজতন্ত্রের জন্য প্রলেতারিয়েত একনায়কতন্ত্রের জন্য লড়াই ছাড়া আজকের দিনে কোন শ্রেণী সংগ্রাম হতে পারে না।
এখন মার্কিন মাম্রাজ্যবাদ তার নিজস্ব স্বার্থে বিভিন্ন দেশে আগ্রাসন চালাচ্ছে। সেখানকার জনগণ তাদের মত করে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। সেখানে উগ্র ধর্মীয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর জন্ম নিয়েছে। যেমন আলকায়দা, তালেবান, আইসিস এগুলো ব্যক্তি স্বার্থবাদী গোষ্ঠী। এরা সাধারণ জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াই গড়ে তুলতে পারবে না কারণ তাদের কাছে শ্রেণী সংগ্রামের দর্শন নাই, দৃষ্টিভঙ্গি নাই। ফরহাদ মজহার বলছেন মার্ক্সের তত্ত্ব ছাড়া শ্রেণী সংগ্রাম হবে না? সোজা কথা হবে না। কারণ মার্ক্সীয় তত্ত্ব প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে শ্রেণী সংগ্রামের নির্দ্দিষ্ট রাজনৈতিক লাইন তৈরি করছে। এর বাইরে গিয়ে শ্রেণী সংগ্রাম হবে না। তা হতে পারে গণতান্ত্রিক লেভেলের সংগ্রাম।
ফরহাদ মজহার একই ভ্রান্তি করেছেন হেফাজতে ইসলামের ক্ষেত্রে। সেখানে তিনি দেওবন্দ ধারার গোষ্ঠীকে মাস্রাজ্যবাদ বিরোধী হিসেবে দেখতে চান। কারণ দেওবন্দ থেকে ব্রিট্রিশ বিরোধী একটি রাজনৈতিক লাইন বিকশিত হয়েছিল। তিতুমীর, হাজি শরীয়তউল্লা সহ কয়েকজন ফরাজয়ী আন্দোলন নামে ধর্মীয় লেবাসে একটি লড়াই গড়ে তুলেছিলেন। কিন্তু তা মোটেই শ্রেণী সংগ্রামের মত কিছু নয়। এদের উত্তরসূরী মাওলানা শফি ব্যক্তিগত স্বার্থ সুবিধা ছাড়া কোন আন্দোলন গড়ে তোলার লড়াই করেছেন কি? কিছু ধর্মীয় দাবিদাওয়া ছাড়া হেফাজতের আজ পর্যন্ত শ্রেণী সংগ্রামের মত কোন আন্দোলন দেখেছেন কি? মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান কি? এদের ১৩ দফার আন্দোলন সম্পূর্ণ ধর্মীয় পশ্চাদপদ ধারার দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা লালিত। ফলে ফরহাদ মজহারদের চিন্তাধারা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত, সুবিধাবাদী।
কিন্তু তাই বলে আমি ফরহাদ মজহারের গুমের পক্ষে নয়। শুধু ফরহাদ মজহার নয় যেকোন নাগরিকের গুমের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে যদি সে শত্রু ও হয়। ফরহাদ মজহারদের মোকাবেলা করতে হবে লেখনির মাধ্যমে। তাঁদের চিন্তার ভ্রান্তি ধরিয়ে দিতে হবে।


EmoticonEmoticon