এখনো যারা আধুনিক পুঁজিবাদের ছোঁয়া পায়নি এমন সহজ সরল আদিম জীবন প্রণালী মিশ্রিত মানুষ। যারা বন জঙ্গল পাহাড়ের গায়ে নিজের শ্রম দিয়ে চাষ উপযোগী করেছে। সেখানে ফসল ফলিয়ে তাঁদের জীবন চলে যেত। সামন্তীয় রাজা থাকলেও ভূমির মালিকানা ছিল সাধারণ সম্পত্তি যা অনেকটা আদিম সাম্যবাদী সমাজের উপাদান পাবেন। পাহাড়ে নিজ শ্রমে ভূমি কর্ষণ করে চাষ করার উপযোগী এরাই করেছে যা থেকে যে ফসল আসতো তাতে পাহাড়িদের জীবন চলে যেত। কিন্তু ইদানিং সেখানে খাদ্য সংকটের খবর পাওয়া যায়। এখন পশ্ন হল যারা দীর্ঘদিন ধরে সেখানে বাস করছে এবং ভূমি কর্ষণ করে চাষ উপযোগী করেছে স্বাভাবিকভাবেই তাঁরা ভূমির মালিকানার দাবিদার। এই ভূমির মালিকানার সমাধানের জন্য ভূমি কমিশন হয়েছিল। কিন্তু এখনো এর সমাধান হয়নি।
পাকিস্তান আমলে স্বায়ত্বশাসিত ভূমি হিসেবে পাহাড়িরা নিজেদের অবস্থান বজায় রেখেছিল। দেশ যখন স্বাধীন হল তখন পার্বত্য চট্টগ্রামের কোন মীমাংসা গ্রহণ করা হয়নি। কারণ ভূমির মালিকানার প্রশ্নে সেখানে সংকটের সমাধান হয়নি। শেখ মুজিব তাদের বাঙালী হওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু ভূমির প্রশ্নে কোন সঠিক প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। বরং আশির দশক থেকে দেশের অন্যান্য এলাকা থেকে বাঙালীদের সেখানে পূণর্বাসন করা হয়েছে। ভূমির মালিকানার সমাধান না করে ঝাঁকে ঝাঁকে বাঙালী ধরে নিয়ে সেখানে বসতি গড়ার উদ্দেশ্য ছিল অসৎ। কারণ পাহাড়িদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে সংঘর্ষ ঝিইয়ে রেখে পাহাড়িদের বিতারণের উদ্দেশ্য ছিল। এর ভিতরে ভারত এবং মিয়ানমারের নজর ছিল। স্বাধীনতার জন্য স্বশস্ত্র বিদ্রোহী গ্রুপ গড়ে উঠেছিল। আবার সেখানে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে সাধারণ পাহাড়িদের নির্যাতন চলতো। ধারাবাহিক সংঘর্ষের মধ্যে ১৯৯৭ সালে শান্তিচুক্তির মাধ্যমে আশা করা হয়েছিল পাহাড়ে শান্তির বাতাস বইবে! কিন্তু না শাসকদের আন্তরিকতা না থাকায় এখনো পাহাড়ে অশান্তির বাতাস বইছে। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সাথে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে সেটেলার বাঙালীদের। ফলে মাঝে মাঝে সেখানে সংঘর্ষ এমনকি একতরফা অত্যাচারের খবর পাই। মাঝে মাঝে পাহাড়ি আদিবাসীরা রুখে দাঁড়িয়েছে, লড়াই করেছে। এগুলো ও রংচঙ দিয়ে নেতিবাচকভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। সেটেলার বাঙালীরা চায় পাহাড় থেকে এই নাক বোচা আদিম জংলীদের (তাদের ভাষায়) বিতারণ করে ভূমির উপর দখল নিতে। সেখানে সেনাবাহিনী সেটেলারদের সুরে সুর মেলাচ্ছে। ফলে প্রায়সময় সেখানে নির্যাতনের চিত্র দেখতে পাওয়া যায়। ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়ে, খুন ধর্ষণ করে অত্যাচারের খড়গ চলছে সমান তালে।
অভিলম্বে পাহাড়িদের ন্যার্য্য ভূমির মালিকানা প্রদান, সেটেলারদের নির্যাতন থেকে নিরাপত্তা এবং সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়া হোক।
EmoticonEmoticon