আজ ফুলবাড়ি দিবস। আজ থেকে দশ বছর আগে দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়িতে সংগ্রামী জনতা গড়ে তুলে এক প্রতিরোধের বাঁধ। বুকের তাজা রক্ত দিয়ে সালেকিন তরিকুল আমিন রা প্রমাণ করে প্রতিরোধের শক্তি কত শক্তিশালী! বহুজাতিক কোম্পানি এশিয়া এনার্জি তৎকালীন চার দলীয় জোট সরকারের কাছ থেকে চুক্তি করে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের। কিন্তু উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের যে ক্ষতিকর প্রভাবের অভিজ্ঞতা বিশ্বব্যাপী আছে তা বিবেচনায় না নিয়ে বাংলাদেশের মত ঘনবসতিপূর্ণ দেশে এভাবে মুনাফার স্বার্থে যেভাবে দেশের দালালরা কর্পোরেট পুঁজির হাতে সবকিছু বিকিয়ে দিয়েছিল, তার প্রতিরোধের শক্তি হল ফুলবাড়ি। ঐক্যবদ্ধ জনতার শক্তি যে বিশাল তার প্রমাণ ফুলবাড়ি। পুলিশ বিডিয়ার (বর্তমান বিজিবি) দিয়েও জনতার প্রতিরোধকে দমন করা যায়নি। শেষপর্যন্ত প্রশাসন সরে আসতে বাধ্য হয় এবং ছয়দফা চুক্তি করে। এশিয়া এনার্জিকে বিতাড়িত করা হয়। কিন্তু এখনো সেই আকাঙ্ক্ষা শেষ হয় নি।
ফুলবাড়ির অভিজ্ঞতা কী শিক্ষা দেয়? ঐক্যবদ্ধ জনতার যৌথ আন্দোলনের শক্তি বিশাল। বর্তমানে কর্পোরেট পুঁজির আরেক দালাল সরকার সুন্দরবনের পাশে রামপালে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতে যাচ্ছে। সারা দেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। তেল গ্যাস রক্ষা জাতীয় কমিটি ধারাবাহিক কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। সারাদেশের সচেতন জনগণ ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের জন্য সুন্দরবনকে ধ্বংস হতে দিতে পারে না। এমনিতে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র হুমকির মুখে। নানামুখী দূষণ এবং মানবসৃষ্ট ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে পৃথিবীর বৃহত্তর এই ম্যানগ্রোভ বন হুমকির মুখে। এখন মরার উপর খড়ার ঘা! এখানে যদি বিদ্যুৎকেন্দ্র হয় তবে সুন্দরবন ধ্বংসের ষোলকলা পূর্ণ হবে। যে রয়েলবেঙ্গল টাইগারের জন্য আমরা গর্ব করি তা বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
তারপরও যখন দেশের সরকার ক্ষতিপূরণের সব দায় নিয়ে ৫০ ভাগ মালিকানার বিনিময়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ভার তুলে দেয় ভারতীয় কোম্পানি এনসিটিপি কে। তখন আর বুঝতে বাকি থাকে না সুন্দরবনের মূল্যের চেয়ে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বড়? কর্পোরেট পুঁজির স্বার্থ বড়। তখন আজকের যুগের রাজাকারদের চিনতে বাকি থাকে না। তাই আজও জেগে উঠতে হবে ফুলবাড়ির মত।
তারপরও যখন দেশের সরকার ক্ষতিপূরণের সব দায় নিয়ে ৫০ ভাগ মালিকানার বিনিময়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ভার তুলে দেয় ভারতীয় কোম্পানি এনসিটিপি কে। তখন আর বুঝতে বাকি থাকে না সুন্দরবনের মূল্যের চেয়ে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বড়? কর্পোরেট পুঁজির স্বার্থ বড়। তখন আজকের যুগের রাজাকারদের চিনতে বাকি থাকে না। তাই আজও জেগে উঠতে হবে ফুলবাড়ির মত।
আমাদের জন্য আরেক বিপদ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। রাশিয়ার ইউক্রেনে চেরনোবিল, জাপানের ফুকুসীমাসহ বিশ্বে পারমাণবিক চুল্লি বিপর্যয়ের যে অভিজ্ঞতা এবং আমাদের প্রযুক্তিগত যে সীমাবদ্ধতা ;তার সাথে বিদেশী কোম্পানির দায়সারা কাজের কারণে আমাদের দুইটি গ্যাসক্ষেত্র, মাগুরছড়া ও টেংরাটিলার দুর্ঘটিনার কারণে গ্যাসের অপচয় এবং পরিবেশের ক্ষতি বিবেচনায় নিয়ে নতুন করে কিভাবে পারমাণবিক চুল্লির মত শক্তিশালী বিদ্যুৎকেন্দ্রের রিক্স নিতে পারি? পারমাণবিক বর্জ্য সংরক্ষণের স্থানের স্বল্পতা, ঘনবসতিপূর্ণ জনবসতি, যেখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১২০০ উপরে মানুষের বাস। সেই দেশে এমন বিপদের আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও কোন বিবেচনায় এই দালাল সরকার উন্নয়নের দোহাই তুলে এসব করতে যাচ্ছে আপনাদের আজ চিন্তা করতে হবে। সামান্য সারকারখানার এমোনিয়া গ্যাস সংরক্ষণের প্রযুক্তিজ্ঞান যাদের নেই তারা করবে পারমানবিক চুল্লি? যতই আধুনিক প্রযুক্তির কথা বলা হলেও এর ক্ষতিকর প্রভাবের আশঙ্কা রয়েই গেল। তারপর কেন আমাদের রিক্স নিতে হবে? কারণ যারা উন্নয়ন উন্নয়ন গল্প করে তারা কেউই কোন বিপদ এলে এখানে থাকবে না। মরতে হবে এদেশের খেটেখাওয়া মানুষের। তাই যারা এই দেশেই সুন্দরভাবে বাঁচতে চান তাঁদের দায়িত্ব হল এসব জীবন বিধ্বংসী ক্ষতিকর বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। শাসন ক্ষমতায় যারা আছে তাঁদের টেনে হিছরে গদি থেকে সরানো। না হলে আপনার সন্তানের জন্য সুন্দর কোন ভবিষ্যতের আশা করতে পারবেন না।
EmoticonEmoticon