মঙ্গলবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৭

যেখানে বৈধ কাজের অধিকার নেই সেখানে অবৈধ কাজ ছাড়া উপায় কি ?

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে কম প্রত্যাশিত এবং বিশ্বের অন্যতম নিগৃহীত সংখ্যালঘু।১৯৮২ সালের আইনের ফলে তারা নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত হয়।তার অর্থ দাড়ালো এই, এর আগে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের জনগণই ছিলো।সপ্তম শতাব্দীতে বঙ্গব সাগরে ডুবে যাওয়া একটি জাহাজ থেকে বেচে যাওয়া লোকজন আশ্রয় নেয় উপকুলে।তারা উপকুলে উঠে শোকর করেন "আল্লাহর রহমে বেচে গেছি"এই বলে।এই রহম থেকে রোহিঙ্গা শব্দের উৎপত্তি।তবে মধ্য যুগের ওখান কার রাজ সভার কবিরা ঐ রাজ্যকে রোসাং বা রোসাঙ্গ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।ইতিহাস এটা জানায় যে, ১৪৩০-১৭৮৪ সাল পর্যন্ত ২২ হাজার বর্গমাইল আয়তনেরর রোহিঙ্গা স্বাধীন রাজ্য ছিলো।মিয়ানমারের রাজা "বোদাওয়াফা"১৭৮৫ সালে এই রাজ্য দখল করার পরথেকে চরম বোদ্ধ্য আধিপত্ত শুরু হয়।ব্রিটিশরা যখন মায়ানমারের ১৩৯ টি জাতিগোষ্ঠীরর তালিকা করে তার মধ্যে রোহিঙ্গাদের নাম ছিলোনা।১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি মায়ানমার স্বাধীনতা অর্জন করে,বহু দলিয় গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করে এবং সে সময়ও পার্লামেন্টে রোহিঙ্গা প্রতিনিধি ছিলো।১৯৬২ সালে জেনারেল নে উইন সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে রাষ্ট ক্ষমতায় আসে এবং একজন অবৈধ সামরিক জান্তা বৈধ রোহিঙ্গাদের বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত করে।রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে।ভোটাধিকার কেড়ে নেয়।ধর্মীয় ভাবে অত্যাচার করা হয়।সম্পত্তি কেড়ে নেওয়া হয়। বাধ্যতামুলক শ্রমে নিয়োজিত করা হয়।বিয়ে করার অনুমতি নেই।সন্তান হলে নিবন্ধ নেই।তাদের নেই শিক্ষা -চিকিৎসার অধিকার। হত্যা ধর্ষন নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাড়ায়, যা এখোন আরো প্রকট রুপ ধারণ করেছে।১৯৪৭ সালে রোহিঙ্গারা মুজাহিদ পার্টি গঠন করে।পার্টি গঠনের পেছনেও উপযুক্ত কারন ছিলো।১৯৪২ সালের ২৮ মার্চ মায়ানমারের মিনবিয়া এবং স্মকইউ শহরে রাখাইন জাতীয়তাবাদী এবং করেইন পন্থীরা প্রায় ৫০০০ মুসলমানকে হত্যা করে। ইতোমধ্যে রাখাইন রাজ্যের ২০,০০০ হত্যা করা হয়।এই দাঙ্গায় উপ কমিশনার ইউ যু কিয়াও খায়াও নিহত হয়।তিনি দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছিলেন।মায়ানমারের গণতন্ত্রের মানসকন্যা অং সান সুচি শান্তিতে নবেল জিতেছেন।তার নবেল বিজয় সার্থক হতো যদি মায়ানমার সরকার দেশের সকল জাতিগোষ্ঠীর স্বার্থ দেখতেন।রোহিঙ্গারা মায়ানমারের নাগরিক, আর নাগরিকের নিরাপত্তা দেওয়া রাষ্ট্রের কাজ।বলা হচ্ছে রোহিঙ্গারা মাদক, অস্ত্র ইত্যাদির অবৈধ ব্যবসার সাথে জড়িত। যেখানে বৈধ কাজের অধিকার নেই সেখানে অবৈধ কাজ ছাড়া উপায় কি?
যারা রাষ্ট্র বিজ্ঞানে অনার্স করেছেন বা করছেন তারা জানেন #জাতিসংঘের অর্থনীতিক প্রতিষ্ঠান বিশ্ব ব্যাঙ্ক আমেরিকা, ব্রিটেন, জাপান, জার্মানি ও ফ্রান্সের অর্থ সংরক্ষণ করে,ব্যাখ্যা কর।আর আমাদের ছাত্ররা তোতা পাখির মত পরিক্ষার খাতায় ব্যাখ্যা করে।উদাহরণটা দিলাম এই কারণে যে, অনেকে মনে করে জাতিসংঘ চাইলেই রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান হতে পারে। জাতিসংঘ যতই আস্ফালন করুক বাস্তবে তার করার কিছুই নেই।তার হাত পা সবই ঐ বিশ্ব পুঁজিপতিদের কাছে বাধা।
জাতিসংঘ বিশ্ব পরিস্থিতিতে অতিতে যেমনে নির্লিপ্ত ছিলো আজো আমরা তাকে নির্লিপ্তই দেখলাম।আমরা দেখলাম জাতিসংঘ নির্লজ্জভাবে বললো বাংলাদেশের সিমান্ত খুলে দিতে।বাংলাদেশের মত একটা ঘনবসতিপর্ন দেশে যদি ঝাকে ঝাকে রোহিঙ্গারা ঢোকে তাহলে রোহিঙ্গারা বেঁচে যাবে কিন্তু বাংলাদেশের অবস্থা হবে ভয়াবহ।
তাই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পাঠানো কোন স্থায়ী সমাধান না।
আমার বাবা অপরাধ করলে আমাকে বা আমার মাকে অথবা আমার ভাই বোনকে শাস্তি পেতে হবে কেনো?
অথবা আমার বাবাকে বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা করা হবে কেনো?
অনেকেই অনেকভাবে প্রমান করার চেষ্টা করেন রোহিঙ্গারা বিভিন্ন অপরাধ এবং অবৈধ পেশার সাথে জড়িতো।আমার আগের লেখাটিতে আমি প্রমান করেছি রোহিঙ্গাদের সামান্যতম বৈধ কাজের সুযোগ মায়ানমার সরকার রাখেনি।
সব দেশেই কিছুকিছু অপরাধ হয়।কোন দেশে বেশি কোন দেশে কম এই যা।আবার অপরাধের ধরণ অনুসারে সব দেশেই শাস্তির বিধান রয়েছে।তাহলে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে তার ব্যতিক্রম হচ্ছে কেন?
বাংলাদেশ সরকার নির্লজ্জভাবে মিয়ানমারের সি ডি এ কে ডেকে যৌথ অভিযানের প্রস্তাব করেছে।বর্তমান সরকার ৭১ ভুলে গেল কেমন করে?? যখন বাঙ্গালীর অস্তিত্ব বিলীন হবার উপক্রম তখন ভারত তার সীমান্ত উন্মুক্ত করেছিলো।ভারত সেদিন পাকিস্তানিদের সাথে হাত মিলিয়ে যদি যৌথ অভিযান চালাতো???

যদি রোহিঙ্গারা এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে চায়, তাহলে তাদেরকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে।তাদেরকে তাদের অধিকার চাইতে হবে।লড়তে হবে।তাদের এখোনো বোঝা উচিৎ পালিয়ে কেউ বাঁচতে পারেনা।পালিয়ে বাঁচা যায়না। জাতিসংঘ বা অং সান সুচি তাদের অধিকার দিতে পারবেনা।তাদের হাত পুঁজিপতিদের কাছে বাধা।
আমি চাই রোহিঙ্গারা রোহিঙ্গা নয় মানুষ হয়ে বেঁচে থাকুক।
আমি চাই ধর্ম কারো পরিচয় না হোক।


EmoticonEmoticon