মঙ্গলবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৭

বাম ঐক্যের সমস্যা-২

বাম ঐক্যের সম্ভবনা বিপুল ,তা এ দেশের সব বামপন্থিরাই জানে এবং মানে এবং ইতিমধ্যে সিপিবি-বাসদ,ও বাম মোর্চা সে পথ ধরে এগুচ্ছেও যাকে আমি ধারন করি, তাই সম্ভবনা আলোচনার চেয়ে সমস্যা আলোচনা বেশী প্রয়োজন মনে করছি।কেননা সমস্যা কমাতে পারলে সম্ভবনা বাড়বে। বামপন্থিদের মধ্যে চিন্তার সমস্যা আগেও ছিল তা স্বাধীনতা যুদ্ধ খেয়াল করলেই বোঝা যাবে ।এখন আগের চেয়ে অনেক প্রকট ।প্রথমত:লিবারেল বিষয়ক চিন্তা,উদার নৈতিক বুর্জোয়া,বা উদারনৈতিক গনতন্ত্রি, রাজনৈতিক শব্দকোষে বহূদিন আগে থেকেই আছে একথা ঠিক,কিন্তু বস্তুগতভাবে আজ আর বুর্জোয়াদের, লিবারেল হবার বা থাকার কোন সুযোগ নেই ।এ সুযোগ অনেকদিন আগে থেকেই নেই।১৯৩৫সালে, আজ থেকে প্রায় শতর্বষ পুর্বে কমিউনিষ্ট আর্ন্তজাতিকের ৭ম কংগ্রেসে র্জজি ডিমিট্রভ ফ্যাসিবাদ এবং তা মোকাবেলার রাজনৈতিক বক্তব্য হাজির করেন। সেখান থেকে আমরা শিখলাম যোগানদার পুজি বা ফিনান্স ক্যাপিটেল এর প্রভাবে ফ্যাসিবাদের সৃষ্টি।ব্যাংক পুজি ও শিল্প পুজি মিলে গিয়ে যে একচেটিয়া কারবারের পুজির ডমিনেশন তৈরী হয়,তাহাই ক্ষুদ্র পুজির সংকোচন-প্রসারনের অধিকারের র্অথাত গনতান্ত্রিক অধিকারের পথে বাধা হয়ে দাড়ায় যাকে দিমিট্রভ ফ্যাসিবাদ বলেছেন।যখন আমি বলি ফ্যাসিবাদ আছে তখন আর বলার দরকার নেই যে গনতন্ত্র নেই। যেখানে কাঠামোগত ভাবে, প্রতিষ্ঠানিক ভাবে গনতন্ত্র থাকে না সেখানে উদারনৈতিক বুর্জোয়া থাকতে পারে না ।আমরা আদর করে, খাতির করে,যাদের লিবারেল বলতে চাই তারা হাসিনা-খালেদাদেরই দলছুট ভংগুর ব্যাক্তিবাদী ব্যাক্তিঅংশ মাত্র।ক্ষমতার বাইরে থাকলে খালেদাও যথেষ্ট লিবারেল কিন্তুু ক্ষমতায় গেলে ফ্যাসিবাদী।একই চরিত্রও বিশ্বাস নিয়েও শুধু আমাদের সাথে ব্যাক্তিগত খাতির পরিচয় আছে বলে যদি আমরা তাদের র্মাকসীয় তত্ব উল্টে দিয়ে লিবারেল প্রমান করে বড় বলয় হতে চাই তাতে বাম ঐক্যে ভাংগন ধরবেই এবং আবার আমাদের শুনতে হবে আহা বামপন্থি তো আবার ভেঙ্গে গেল।
ব্যাক্তিগতভাবে আফ্রিকার মাগুরের মত কিছু মোটা তাজা নেতা পেলেই আন্দোলনের বলয় তৈরী হওয়া ,বৃহত্তর বলয় তৈরী হওয়া সম্ভব নয়, যদি হতো বিএনপি অনেক আগেই আন্দোলন করতে পারতো । বিএন পির না পারা থেকে বোঝা শক্ত নয় যে শুধু মাগুর নেতা দিয়েই আন্দোলন হয় না ।এই তথাকথিত হেবিওয়েট নেতারা এযাবত কোন আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে এমন আমাদের জানা নেই।আন্দোলনের জন্য জনতা লাগে আর তার জন্যই জনতার আস্থায় থাকতে হয় । জনতা যদি বোঝে নেতা আমাদের রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে প্যারিস ওয়াসিংটন করে বেড়াবে তা হলে জনতা নামবে না ,জনতা আজ অত বোকা না।তারা করতে পারবে ষড়যন্ত্র এবং নির্বাচন,যার প্রথমটা আমাদের কোনদিনই দরকার নেই।দ্বীতিয়টাও এখন প্রাসংগীক নয় কেননা বাম মোর্চা ও সিপিবি-বাসদ বলেছে এই ঐক্য র্নিবাচনের নয় আন্দোলনের । ফলে ঐক্যকে টেকসই করতে হলে লিবারেলের মোহমুক্তি একটা অতি প্রয়োজনিয় বিষয়।
আমাদের বামপন্থিদের সবকিছুর মধ্যেই সময়কে ভাল করে বুঝতে হবে সবার আগে,সময়কে যদি বোঝা যায় তবে পরিস্থিতি তত্ব থেকেই বোঝা যায়  ঘটনা দিয়ে বুঝতে হয় না ।যেমন,বামদের এক অংশ বহুদিন মনে করতেন মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী সংগ্রমে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি আওয়ামী লীগকে পাওয়া যাবে , কিন্তু আমরা বুঝেছিলাম আজকের দিনে সকল জাতিয়তাবাদীরাই ভোটভিক্ষার জন্য মৌরবাদের সাথে আপোষ করবে । এখন তারা স্বচক্ষে দেখে বুঝলো আওয়ামী লীগ হেফাজতের সাথে আপোষ করছে,কি তরিকত এর সাথে আপোষ করেছে, র্ধম নিয়ে রাজনীতি করছে ।একই ভাবে লিবারেলের সাথে ঐক্যের জন্য তারা উত্তরা নাটক শেষ করতে ণা করতেই দেখা গেল নয় বছর যে স্বৈরাচার বিরোধী লড়াই আমরা করলাম সেই স্বৈরাচার এখন লিবারেল হয়ে গেল ।যেন তেন প্রকারে নিজের পার্লামেন্টের আসন নিশ্চিত করার লক্ষ্য পুরনের ঢাল যদি হয় বৃহত্তর বলয় তবে আমি বরাবরই ক্ষুদ্র বলয়ের পক্ষে থাকবো ।অল্প থেকে বিস্তর হওয়া অনেক ভাল বিস্তর থেকে অল্প হওয়া থেকে ।ঐক্য হওয়া চাই নাম প্রচারে দলকে পপুলার করার দলবাজির ঝোক থেকে নয়, কার্যকর স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের প্রয়োজন থেকে । ফ্যাসিবাদকে আজকের দিনে মোকাবেলা করতে পারে শ্রমিক শ্রেণী। তার গনফ্রন্টে ঐক্য চাই। কিন্তু যারা মিডিয়াকে এই মুহুর্তে কাল বিলম্ব না করে ঐক্যের জন্য সংলাপ শুরু করার মহৎ তাগিদ দিলেন তারা নিজেদের মধ্যেই দুই বছরেও ঠিক করতে পারলেন না শ্রমিকের মজুরী ষোল হাজার না পনের হাজার হবে ।বিষয়টা এমন ঘোরতর কিছু নয় তবুও মানুষ দেখছে একদল বলছে ষোল হাজার চাই আর বাম মোর্চাভুক্ত বারটা ফেডারেশনও বহু পুর্ব থেকেই ষোল হাজার চায় ।কিন্তু সিপিবি-বাসদের বাসদ পনের হাজার চায়।বিরাট বলয়ের পুর্বে এই ছোট্ট জিনিষটা মিমাংসা করলে ঐক্যশক্তপোক্ত হতে পারে।শ্রমিক ঐক্যের জন্য আমরা একতরফাভাবে চেষ্টা করে আমাদের বার ফেডারেশনের মিটিং এ সিপিবি-বাসদের ট্রেডইউনিয়নকে দিয়ে বক্তৃতাও করিয়েছি। কিন্তু তারা শেষমেষ শ্রমিক লীগও শ্রমিক দল ছেড়ে আসতে চায়নি ।ফ্যাসিবাদ মুখে বলছি বটে কিন্তু কাজে যদি মায়া কাটিয়ে না আসতে পারি তা হলে লড়াকু শ্রমিক আন্দোলন কেমন করে করা যাবে ? শুধুমাত্র ঐক্য করলেই ফ্যাসিবাদ মোকাবেলা করা যাবে না শাহজাহান খানদের মায়া কাটাতে পারতে হবে তো। কৃষক সংগঠনগত প্রশ্নেও অবস্থান পরিস্কার করা চাই। দেখা যায় সরকারী বামদের সাথে যুক্ত হয়ে কৃষক আন্দোলন,হাওড় আন্দোলনে যতটা স্বচ্ছন্দ বোধ করা যায় ততটা দরকারী বামদের কৃষক সংগঠনের সাথে ঐক্য হয় না ।এসব দেখে বিভ্রন্তি কাটে না যে,ঐক্য আসলে আন্দোলনের জন্য না র্নিবাচনের জন্য তবুও আশাবাদ রাখতে হয় আশাবাদ রেখেই চলতে চাই। অনেকে মনে করেন ডিমিত্রভের ফ্যাসিবাদের মত নয় আজকের ফ্যাসিবাদ, কথাটা অনেকটা ঠিকও বটে। তবে যদি কেউ ডিমিত্রভের চেয়ে আজকের ফ্যাসিবাদকে হালকা করে দেখতে চান তবে ভুল হবে আজকের ফ্যসিবাদ আরো ঘোরতর এ কথাই ঠিক । ডিমিত্রভ দেখেননি কেউ একাই সরকারি দলও বিরোধী দল দুটোই করতে পারে ।কেউ সরকারে থেকে সেই বিরোধী দলও গড়ে তোলার দায়িত্ব নেয় । ডিমিত্রভ দেখেছিলেন,১.ফিনান্স পুজির একচেটিয়া অবস্থা,২,উগ্র জাতিয়তাবাদীপ্রবনতা।৩.সমাজের প্রগতিশীল অংশকে সন্ত্রাস বাদী প্রতিহিংসায় দমন।৪.যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে উপনিবেশের বাজার দখল। আজ উপনিবেশও নেই-বাজার ইতিমধ্যে দখল হয়েছে বলে যুদ্ধেরও প্রয়োজন নেই। কিন্তু গুম খুন র্ধষন,নারী শিশু র্নিযাতন ইত্যাদি সন্ত্রাসবাদী প্রতিহিংসা ও র্ববরতা আগের যেকোন সময়ের চেয়ে বেশী আছে ।জাতিয় পতাকা এবং জাতিয় সংগীতের বিরাট ডিসপ্লে থেকে একটা জাতিয়তাবাদী রেজিমেন্টেশন  এখানেও বুর্জোয়ারা চেয়েছে । তাই উগ্র জাতিয়তাবাদী ফ্যাসিবাদী প্রবনতারুপে আর্ভিভুত হয়েছে । এটা বুঝতে না পেরে কতক বামরাও সেই পতাকা ও সংগীত ধারন করে কিছুই অর্জন করেনি। করেছে না বুঝে ফ্যাসিবাদের সহায়তা।আজকের ফ্যাসিবাদ সম্পর্খে ডিমিত্রবের পরে ভাল ব্যাখা দিয়েছেন কমরেড শিবদাস ঘোষ্ তিনি বলেছেন অধ্যাত¦বাদের সাথে বিজ্ঞানের কারিগরি দিকের সংমিশ্রনে ফ্যাসিবাদের ভাবার্দশগত ভিত্তি তৈরী হয় ।ফ্যাসিবাদ প্রশাসনিক দলিয়করনের মধ্য দিয়ে এক ভয়ংকর আমলাতান্ত্রিক রেজিমেন্টেশন তৈরী করে।আমাদের দেশে বামরাও র্ধম র্কম সমাজতন্ত্র ইত্যাদি কথা বলে র্কাযত:অধ্যাত্ববাদকেই বিকাশে সহায়তা করেছে ।বামদের কেউ ধার্মিক মনে করেনি ।বামদের আজ এই উপলব্দি পরিস্কার থাকতে হবে যে,বাম আন্দোলন কোন ওয়াজ মাহফিল নয় বা তদবিরবাজি নয়।আজ কার্যকর বাম আন্দোলন করতে চাইলে বামদের এসব সত্য উপলব্দি করতে হবে এবং বামরা তাদের সৎ জীবনযাপন প্রনালীতে মানুষকে আকৃষ্ট করে শ্রমিক কৃষকদের র্কাযকর গনফ্রন্ট গড়ে তুলে ফ্যাসিবাদ বিরোধী র্কাযকর সংগ্রম করতে পারবে এই বিশ্বাস রাখছি।এতদসত্যেও কথা চলছে কথা চলবে।


EmoticonEmoticon